মাগুরা সদরের জগদল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে বিরোধে দুই পক্ষের চারজন খুনের ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি)।
এসপি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, গত ১৫ অক্টোবরে ওই ঘটনার পরিকল্পনা হয় দুই দিন আগে।
নিজ কার্যালয়ে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসপি এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, এই ঘটনায় করা দুটি মামলার প্রধান আসামি ৩ নম্বর জগদল ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামসহ পাঁচজনকে রোববার ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনালের পাশে মোহাম্মদীয়া হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
এসপি বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর আসামিদের মাগুরায় আনা হয়। তাদেরকে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করে ও তাদের জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হতে পেরেছি এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, আসামিদের দেয়া তথ্যমতে হত্যায় ব্যবহার হওয়া রামদা, চাপাতি, দা ও বল্লম উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আদালতে তোলার পর তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে পেতে আবেদন করা হয়েছে।
সহিংসতার ওই ঘটনায় নিহত হন জগদল ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সবুর মোল্লা, তার ভাই কবির মোল্লা ও চাচাতো ভাই রহমান এবং মো. ইমরান নামে এক যুবক।
এসপি জানান, ইমরান ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নজরুলের সমর্থক।
তিনি বলেন, ‘ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়া গ্রামের মাতবর সবুর মোল্লা এবং ইউপি সদস্য নজরুলের মধ্যে দুই দশক ধরে আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা ছিল। বিভিন্ন সময় দুই পক্ষের মারামারি হয়েছে। ২০০৩ সালে দুই পক্ষের সংঘর্ষে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটে।
‘১৫ অক্টোবর বেলা ৩টা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে এই চারটি হত্যাকাণ্ড ঘটে। দুই দিন আগেই নজরুলের বাড়িতে একটি গোপন বৈঠক হয়। হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত ছিল এবং কারা হামলায় থাকবে তা সেখানে নির্ধারণ করা হয়। কার কেমন ভূমিকা থাকবে তাও ঠিক করা হয়। শুক্রবার নামাজের পর খাওয়ার দাওয়া শেষে সবুর মোল্লার গ্রুপের কিছু লোক মেম্বার প্রার্থী হাসান আলির বাড়িতে যাচ্ছিলেন। তখন তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়।’
এসপি জহিরুল জানান, এই ঘটনার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত যারাই জড়িত তাদেরকে শনাক্ত করা হবে।
এই পরিস্থিতিতে আসন্ন নির্বাচনের পরিবেশ নিরাপদ থাকবে কি না জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মাগুরা সদরের ১৩টি ইউনিয়নে আগামী ১১ নভেম্বর ইউপি নির্বাচন, এর মধ্যে জগদলও একটি। ভোটের দিন পরিবেশ যেন শান্ত থাকে, ভোট যেন নির্বিঘ্ন ও নিরপেক্ষভাবে হয় সেটি নিশ্চিতে সব রকম প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
জগদল ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়া গ্রামে গত ১৫ অক্টোবর বেলা ৩টার দিকে দুই পক্ষের সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় দুটি মামলায় ১২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।