বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বিএনপি নেতা’ পেলেন নৌকা, আ.লীগে ক্ষোভ-হতাশা

  •    
  • ১ নভেম্বর, ২০২১ ২১:৩৫

মির্জাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী আতাহার উদ্দিন বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন তার ৬৫ বছর বয়সে কোনো দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না। চার মাস হলো তিনি এক অদৃশ্য শক্তির বলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদ লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, পুনর্বিবেচনা করে নৌকা যেন আওয়ামী লীগের লোকদের দেয়া হয়। অনুপ্রবেশকারীর হাতে নৌকা বেমানান।’

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলী-সুবিদখালী ইউনিয়নে নৌকার মাঝি হলেন বিএনপি নেতা মো. আনোয়ার হোসেন খান।

কীভাবে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন সে প্রশ্নের উত্তর জানা নেই ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো নেতার। তারা বলছেন ‘এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় বিএনপি নেতা পেলেন নৌকা’।২৮ নভেম্বর দেউলী-সুবিদখালী ইউনিয়নে ভোট। ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড বিএনপির এই নেতাকে মনোনয়ন দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আনোয়ার একসময় মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন বলে জানান ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আজিজ হাওলাদার।

আজিজ জানান, শুধু বিএনপি নেতাই নন, আনোয়ার হোসেনের পরিবার স্বাধীনতাবিরোধী পক্ষের।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আনোয়ার হোসেন জানান, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগে যুক্ত আছেন।

এ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন অনেকে। দলিলাদিও উপস্থাপন করছেন কেউ কেউ। নৌকাবঞ্চিত তৃণমূল নেতারা এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করছেন, অন্য পক্ষ আনোয়ারের নৌকা প্রতীক টিকিয়ে রাখতে নানামুখী চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা জানান, তৃণমূল থেকে যাচাই-বাছাই শেষে কেন্দ্রে পাঠানো তিন প্রার্থীর মধ্যে আনোয়ার হোসেন খানের নাম ছিল তিন নম্বরে। প্রথমে ছিল বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আজিজ হাওলাদারের নাম। দ্বিতীয় ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মনিরুজ্জমান খান।

আজিজ হাওলাদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ৫৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগে জড়িত। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে ও জোট সরকারের আমলে হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। এখন নৌকা প্রতীক পাওয়া আনোয়ার ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০২ সালে জোট সরকারের আমলে তিনি বিএনপির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘এই আনোয়ার হোসেনের আপন চাচা প্রয়াত অন্নাত খান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন এবং আনোয়ারের পিতা প্রয়াত জেন্নাত আলী খান ছিলেন শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য।‘ কেন, কীভাবে তিনি নৌকা পেলেন আমার জানা নাই। তবে এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় এ কাজ হয়েছে। পটুয়াখালীর সবাই জানেন কে, কেন, কীভাবে এবং কিসের আশায় এসব কাজ করছেন। আমি বলতে পারব না।’আজিজ বলেন, ‘আমি যদি কোনো অপরাধ করে থাকি, তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা না দিয়ে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত তাদেরকে দিন। তারপরও নৌকার সম্মানটা টিকে থাকুক। কিন্তু যারা বিএনপির রাজনীতি করে দলে ঢুকেছেন তাদের হাতে নৌকা বেমানান। এতে নৌকার সম্মানহানি ঘটে। মানতে পারি না এবং মানাও যায় না।’ নৌকার আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী মনিরুজ্জামান খান বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন খান আগে কখনও আওয়ামী লীগ করেননি। কিছুদিন আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদ পেয়েছেন। কে তাকে ওই পদে নিয়েছেন তা জানি না। তিনি কীভাবে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আমার জানা নাই।’

মির্জাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী আতাহার উদ্দিন বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন তার ৬৫ বছর বয়সে কোনো দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না। চার মাস হলো তিনি এক অদৃশ্য শক্তির বলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদ লাভ করেন।’

তিনি বলেন, ‘তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আমাকে প্রশ্ন করে বারবার জানতে চেয়েছেন, বিএনপির আনোয়ার কীভাবে নৌকা পেলেন। আমি জবাব দিতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, পুনর্বিবেচনা করে নৌকা যেন আওয়ামী লীগের লোকদের দেয়া হয়। অনুপ্রবেশকারীর হাতে নৌকা বেমানান।’

দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মনির হোসেন বলেন, ‘২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি মির্জাগঞ্জে যে নির্যাতন চালিয়েছে, আনোয়ার হোসেন ছিলেন মূল ভূমিকায়। বিএনপির আমলে অনেক আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারের মামলা-হামলার শিকার হন।’

অভিযোগের বিষয়ে আনোয়ার হোসেন খান জানান, তার রাজনৈতিক ও সামাজিক অনেক ইতিহাস আছে। তাকে যে ১৯৯৭ সালে বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেখানো হয়েছে তা মিথ্যা। কারণ ওই আনোয়ার হোসেন খান হলেন দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়নের চরখালী গ্রামের সুবিদখালী জসিম মেকারের বোনজামাই। তিনি মারা গেছেন।

তার এ কথার প্রতিবাদ করেছেন আজিজ হাওলাদার। তিনি জানান, চরখালীর যে আনোয়ারের কথা বলা হচ্ছে, তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন।

আনোয়ার হোসেন জানান, ১৯৭৩ সালে ছাত্রলীগ থেকে তার রাজনীতি শুরু হয়। এরপর তিনি দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যসচিব পদে কয়েক বছর ছিলেন। ২০১০ সালে মির্জাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির ৯ নম্বর সদস্য ছিলেন। ২০২০ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সেই কমিটির সহসভাপতি হন।

তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা।

এ বিভাগের আরো খবর