শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগেই সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডহক ভিত্তিতে ১৭২ জনকে নিয়োগের ঘটনা তদন্ত করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি রোববার সিলেটে আসেন। সোমবার তারা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কার্যালয়ে গিয়ে উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন।
তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শুরুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক হিমাংশু লাল রায় নিউজবাংলাকে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি করেছে মন্ত্রণালয়। কমিটির সদস্যরা সোমবার সিলেটে এসে কার্যক্রম শুরু করেছেন।
দেশের চতুর্থ এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা ২০১৮ সালে। এখনও শুরু হয়নি নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ। শুরু হয়নি নিজস্ব শিক্ষা কার্যক্রমও। এ অবস্থায় উপচার্যের বিশেষ ক্ষমতা বলে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১৭২ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এই বিপুলসংখ্যক জনবলের বসার জায়গাও নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কার্যালয়ে। নেই তেমন কোনো কার্যক্রমও। অর্থের বিনিময়ে ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এ নিয়ে গত ২৫ অক্টোবর নিউজবাংলায় ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-শিক্ষার্থী কিছুই নেই, জনবল প্রায় ২০০’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই তোলপাড় শুরু হয়। এরপর তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
নগরের চৌহাট্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কার্যালয়ে গিয়ে সোমবার সকালে তদন্ত শুরু করেন কমিটির সদস্যরা। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীর কক্ষে তদন্ত কমিটির বৈঠক চলছিল।
এ বিষয়ে জানতে সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটির প্রধান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহাদাত হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
দেশের চতুর্থ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সংসদে সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডহক ভিত্তিতে বিপুলসংখ্যক লোকবল নিয়োগ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কর্মকর্তারা।
নিউজবাংলায় প্রকাশিত ২৫ অক্টোবরের প্রতিবেদনে ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান বলেন, ‘অ্যাডহক ভিত্তিতে সব ধরনের নিয়োগ বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এ ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে তিন দফা চিঠিও দেয়া হয়েছে। ফলে অ্যাডহক নিয়োগের এখতিয়ার কারও নেই। কেউ যদি দিয়ে থাকেন সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ।’
ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান বলেন, ‘এত বিপুলসংখ্যক লোক অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ হয় কী করে!’
তিনি বলেন, ‘অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে সবখানেই প্রশ্ন আছে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এত লোকবল অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে পারে না। আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগের কথা স্বীকার করে সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজন মেটাতে অ্যাডহক ভিত্তিতে শখানেক লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বেশির ভাগই কর্মচারী পদে নিয়োগ পেয়েছেন। যথাযথ নিয়ম মেনেই তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’