দীর্ঘদিন পর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ খুললেও ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তারের জেরে সংঘর্ষের কারণে আবারও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিল এই মেডিক্যাল কলেজ। গত ১৩ সেপ্টেম্বর চালুর দেড় মাসের মাথায় শনিবার আবারও বন্ধ হওয়ায় পড়ালেখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী উপমা ধর নিউজবাংলাকে জানান, তার মেডিক্যাল শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালে। প্রায় দুই বছর ধরে তিনি তৃতীয় বর্ষেই আটকে আছেন। কলেজ খোলার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের রুটিন পরীক্ষা চলছিল। চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা নভেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল।
উপমা বলেন, ‘বারবার ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্রে যাওয়া যেমন পিছিয়ে যাচ্ছে, তেমনি আর্থিক ক্ষতিরও সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এতে আমাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।’
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাবরিনা আফরিন বলেন, ‘প্রতিটি শিক্ষার্থী আশা করে লেখাপড়া শেষে একটি ভালো চাকরিতে ঢোকার। তবে লেখাপড়া শেষ করতেই যদি জীবন থেকে এত বছর চলে যায়, তাহলে সরকারি চাকরির জন্য নিজেকে তৈরি করব কীভাবে?’
শিক্ষার সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে গত ৩ মার্চ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ সভা-সমাবেশ, মিছিল, স্লোগান নিষিদ্ধ করেছিল কর্তৃপক্ষ। এই নিষেধাজ্ঞা আমলে নেয়নি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন।
আধিপত্য বিস্তারের জেরে গত শুক্রবার রাতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করলেও রাতের ঘটনার জেরে শনিবার সকালে ছাত্রলীগের ওই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষেরই কর্মী আহত হন। আহত তিনজনের মধ্যে নওফেলের অনুসারী মাহাদী আকিবের অবস্থা বেশ গুরুতর।
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুরুতর আহত মাহাদী আকিব
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। তাদের কারণে কেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হবে, সেই প্রশ্ন করেন অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেষ বর্ষের একজন শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রভাব বিস্তার ও ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ছাত্রলীগ সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। সংঘর্ষ দেখা দিলে কলেজ কর্তৃপক্ষ দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়। ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীর খেসারত সাধারণ শিক্ষার্থীরা কেন দেবে?’
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ তুচ্ছ ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে এভাবে হল ত্যাগের নির্দেশ দিচ্ছে। আইন প্রয়োগ ও শাস্তি কার্যকর করার ক্ষেত্রে কলেজ প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। গুটিকয়েক শিক্ষার্থীর জন্য আমাদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।’
শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, অনেক শিক্ষকও ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী অধ্যাপক বলেন, ‘মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের এমনিতেই এত পড়াশোনার চাপে থাকতে হয়। সেখানে আবার তারা রাজনীতিও করতেছে। সেটা ঠিক আছে কিন্তু তারা তো আবার মারামারি করে পড়ালেখার পরিবেশ নষ্ট করতেছে। তাদের জন্য শত শত শিক্ষার্থী পিছিয়ে যাচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায়, এমনটা হচ্ছে।’
কলেজ কর্তৃপক্ষের ঘোষণার পর শনিবার হল ছেড়ে যান শিক্ষার্থীরা
এ বিষয়ে চমেক অধ্যক্ষ সাহেনা আকতার বলেন, ‘বাধ্য হয়ে কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ক্যাম্পাস শান্ত রাখতে এটা ছাড়া আর কোনো অপশন নেই আমাদের হাতে।’
দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এত দিন ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল। ক্যাম্পাস খোলার পর এই প্রথম সংঘর্ষ হলো। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্তে যে দোষী হবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা কাউকে ছাড় দেব না।’