এশিয়ার সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল-পেট্রাপোল সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টাই খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। বাংলাদেশ ইতিবাচক সাড়া দিলে দুই দেশের নাগরিকরা ২৪ ঘণ্টাই এই বন্দর দিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন।
একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হবে রাত-দিন সব সময়। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির পরিচালক অজিত কুমার সিং (অপারেশন) গত ২৫ অক্টোবর এ-সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছেন। সেই নির্দেশিকা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ভারতীয় কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
পরীক্ষামূলকভাবে আগামী তিন মাসের জন্য আপাতত নতুন এই নিয়ম চালু করা হবে। এই নির্দেশিকা সফল হলে তা স্থায়ীভাবে চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। তবে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে শুধু বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে।
বর্তমানে সকাল ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পণ্য পরিবহন চালু রয়েছে। পাশাপাশি সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যাত্রী পরিষেবা চালু রয়েছে। এ সময়ের বাইরে কোনো যাত্রীর সীমান্ত পার হওয়ার যতই প্রয়োজন থাকুক না কেন, নির্দিষ্ট সময়ের পর ইমিগ্রেশন দপ্তর খোলা না থাকায় তাদের আটকে থাকতে হতো চেকপোস্ট এলাকায়। ফলে যাত্রী পরিষেবা ২৪ ঘণ্টার জন্যই চালু হলে হয়রানি কমবে দুই দেশের নাগরিকদের।
গত ৩১ আগস্ট এ বিষয়ে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বর্ডার ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে একটি বৈঠক হয়। তারপরই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে বেনাপোলের ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, ভারতের বনগাঁ পৌরসভার কালিতলা পার্কিংয়ের সিন্ডিকেট না ভাঙলে ২৪ ঘণ্টা পণ্য পরিবহনে আমদানি-রপ্তানিতে কোনো উপকারই আসবে না। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা ট্রাকগুলো বনগাঁর কালিতলা পার্কিংয়ে দিনের পর দিন আটকে রেখে ব্যবসায়ীদের নানাভাবে হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য চালানের একেকটি ট্রাক মাত্র ৬ কিলোমিটার দূর বনগাঁ থেকে বেনাপোল বন্দরে আসতে এক মাস থেকে দেড় মাস সময় লাগছে। ওপারের পার্কিংয়ের দৌরাত্ম্য কমাতে না পারলে ২৪ ঘণ্টা খোলা রেখে ব্যবসায়ীদের কোনো উপকারেই আসবে না। আগে যেখানে ৪০০ থেকে ৪৫০ ট্রাক পণ্য বেনাপোল বন্দরে আসত, এখন সেটা কমে ২৫০ থেকে ৩০০-এ দাঁড়িয়েছে।
ইন্দো-বাংলা চেম্বার অফ কমার্স সাবকমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাণিজ্য আর চিকিৎসাসেবা নিতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিপুল যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। বর্তমানে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যাত্রী পরিষেবা চালু রয়েছে ইমিগ্রেশনে। এ সময়ের বাইরে কোনো যাত্রীর সীমান্ত পার হওয়ার যতই প্রয়োজন থাকুক না কেন, নির্দিষ্ট সময়ের পর ইমিগ্রেশন দপ্তর খোলা না হওয়া অবধি তাদের আটকে পড়তে হতো চেকপোস্টে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল বন্দর ২৪ ঘণ্টা সচল রাখার। যাত্রী পরিষেবা ২৪ ঘণ্টার জন্য চালু হলে হয়রানি কমবে দুই দেশের নাগরিকদের।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘বর্তমানে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে সপ্তাহে ৬ দিন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এ ছাড়া সরকারি ছুটির দিন বাণিজ্য বন্ধ থাকে। এখন সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা আমদানি-রপ্তানি চালু হলে হলে বাণিজ্যে গতি ফিরবে। এতে সরকারেরও রাজস্ব আয় বাড়বে।
‘তবে কালিতলা পার্কিংয়ের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। এমন সিদ্ধান্তে উপকৃত হবে দুই দেশের মানুষ।’
এশিয়ার সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল-পেট্রাপোল। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানোর লক্ষ্যে বহির্বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে বছর তিনেক আগেই এই সীমান্ত দিয়ে ২৪ ঘণ্টার জন্য পণ্য পরিবহন পরিষেবা চালু করা হয়। তবে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট দিয়ে ২৪ ঘণ্টার পণ্য পরিষেবা চালু থাকলেও করোনার কারণে লকডাউন পরিস্থিতিতে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনও বেশ কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর পণ্য পরিবহন চালু হয়েছে। এবার দুই দেশের মধ্যে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা চালু হবে যাত্রী পরিষেবাও। এর ফলে নানা প্রয়োজনে দুই দেশে মানুষই উপকৃত হবে। বাণিজ্য ও যাত্রী যাতায়াত দুই খাতেই প্রসার ঘটবে।
প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে ভারতের সঙ্গে। আমদানি বাণিজ্য থেকে সরকারের বছরে রাজস্ব আয় হয় ৬ হাজার কোটি টাকার মতো। আর এ পথে দুই দেশের মধ্যে বছরে প্রায় ১৮ লাখ যাত্রী যাতায়াত করে। ভ্রমণ খাতে সরকারের রাজস্ব আসে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে মেডিক্যাল, বিজনেস ও স্টুডেন্ট ভিসায় যাত্রী যাতায়াত চালু রয়েছে। গত বছরের ১৩ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে ভ্রমণ ভিসা।
এ ব্যাপারে বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক মামুন তরফদার বলেন, ‘২৪ ঘণ্টা বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চালুসহ ২৪ ঘণ্টা চেকপোস্ট খোলা রেখে যাত্রীসেবা দেয়ার ভারতীয় সিদ্ধান্ত শুনেছি। তবে এ-সংক্রান্ত কোনো পত্র আমরা পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থে ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে আমরা প্রস্তুত আছি।’