স্কটল্যান্ডের গ্লাসকোতে শুরু হতে যাওয়া জলবায়ু সম্মেলন তথা ‘কপ-২৬’ ব্যর্থ হলে তীব্র খাদ্য আর পানি সংকটে পড়বে পৃথিবী। শুধু তাই নয়, এই ব্যর্থতা বিশ্বকে বিপুল অভিবাসনের মুখোমুখিও দাঁড় করাবে।
রোববার শুরু হতে যাওয়া এই সম্মেলনকে সামনে রেখে এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি এখন ইতালির রোমে শিল্পোন্নত দেশগুলোর ‘জি-২০’ সম্মেলনে অবস্থান করছেন। এখান থেকেই জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে স্কটল্যান্ডের গ্লাসকোতে যাবেন জি-২০’র নেতারা।
শুক্রবার জি-২০ সম্মেলন শুরুর আগে চ্যানেল ফোরকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে পৃথিবীর সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নিয়ে মন্তব্য করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আশঙ্কা করেন, জলবায়ু সম্মেলন ব্যর্থ হলে পৃথিবীতে এমন সব কাণ্ড-কারখানা ঘটতে পারে, যেসবের জন্য একসময় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল রোমান সভ্যতাও।
ছয় বছর আগে প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের কথাও মনে করিয়ে দেন বরিস। সেই সম্মেলনে জ্বালানী হিসেবে কয়লার ব্যবহার কমানো, কোটি কোটি বৃক্ষরোপণ এবং গ্রিন টেকনোলজির জন্য বিপুল অর্থের তহবিল গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আর এই লক্ষ্য পূরণে যুক্তরাজ্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির কথা বলতে গিয়েই ইতালির হারিয়ে যাওয়া রোমান সভ্যতার প্রসঙ্গ টেনে আনেন বরিস। তার আশঙ্কা, জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে এই সভ্যতার মতোই শিগগিরই হুমকির মুখে পড়বে মানবসভ্যতা।
বরিস জানান, বৈশ্বিক তাপমাত্রা আর চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলেই কঠিন সব ভূ-রাজনৈতিক কার্যকলাপের সূচনা হবে।
তিনি বলেন, ‘এমন হলে আপনার উৎপাদন কমে যাবে, মরুভূমির পরিমাণ বাড়বে, জনবসতি হারিয়ে যাবে, পানি আর খাদ্যের সন্ধানে যে যেখানে পারবে ছুটবে। আর এই ব্যপারগুলো রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা খুবই কঠিন।’
রোমান সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ ক্যালোসিয়ামের পাশে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বরিস স্মরণ করিয়ে দেন, রোমান সভ্যতা যখন ধ্বংস হয়েছিল, তখন এ ধরনের পরিস্থিতির সূত্রপাত হয়েছিল। মূলত এই সভ্যতা অভিবাসন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছিল। তারা তাদের সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল। প্রাচ্যের মানুষ তো বটেই, সারা পৃথিবী থেকেই সেখানে মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করেছিল। এর ফলে সমগ্র ইউরোপ এক গভীর আঁধারে ডুবে গিয়েছিল।
বরিস বলেন, ‘এমনটা আবারও ঘটতে পারে খুব শিগগিরই।’
তাই জলবায়ু সম্মেলনে শিল্পোন্নত দেশগুলোর নেতাদেরকে কার্বন নিঃসরণের কার্যকর পরিকল্পনা সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।