চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে বেনীপুর গ্রামে টিকা নেয়ার এক দিন পর গৃহবধূর মৃত্যুর কারণ নিয়ে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য।
রেখা খাতুন নামে ওই গৃহবধূর মৃত্যুর পর কয়েকটি গণমাধ্যমে ‘টিকা নেয়ার পর গৃহবধূর মৃত্যু’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সেখানে রেখার স্বামী আমিনুর রহমানের বক্তব্য দেয়া হয়।
তবে আমিনুর নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে-এমন কোনো কথা তিনি বলেননি। কোনো সাংবাদিকের সঙ্গেই তার এ বিষয়ে কথা হয়নি। অথচ তার নামে মন্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে এক ঘণ্টার মধ্যেই দেখা দেয়। ওই নারীর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা তাদের।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গত বুধবার সকালে আমার স্ত্রী রেখা খাতুন, মা খাদেজা খাতুন, বাবা মইরদ্দীন মণ্ডল ও খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী সেলিনা খাতুন জীবননগর পৌরসভা থেকে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ নেয়। ওই দিন রাতে তার (রেখা) শরীরে হালকা জ্বর আসে।
‘পরদিন সকালে তাকে পল্লী চিকিৎসক আশাবুল হকের কাছে নিয়ে যাই। তিনি একটা নাপা ট্যাবলেট ও একটা হিস্টাসিন ট্যাবলেট দেন। বাড়ি এসে ওষুধগুলো আমার স্ত্রীকে খাওয়াই।’
আমিনুর আরও বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর উঠান ঝাড়ু দেয়ার সময় মাটিতে পড়ে যায় রেখা। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আমার স্ত্রী অনেক আগে থেকেই অ্যাজমা ও হার্টের রোগে ভুগছিল।’
তিনি জানান, তার পরিবারের চার সদস্য একসঙ্গে টিকা নিলেও অন্যদের শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়নি। সবাই সুস্থ আছেন।
তাকে উদ্ধৃত করে রেখার মৃত্যু নিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে জানিয়ে আমিনুর বলেন, ‘অপপ্রচারের কারণে আমি বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। অথচ আমি এ বিষয়ে কারও কাছে কোনো মন্তব্য করিনি।’
সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আসাদ মিয়া বলেন, ‘রেখা খাতুনের মৃত্যুর বিষয়ে আমার সাথে কোনো সাংবাদিকের কথা হয়নি, কিন্তু আমার উদ্ধৃতি দিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এটা কোনো দায়িত্বশীল সংবাদকর্মীর কাজ না।’
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাহমুদ বিন হেদায়েত সেতু জানান, বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে নেয়ার আগেই রেখার মৃত্যু হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মেহবুবা মাজনিন হক ছন্দা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তা এক ঘণ্টার মধ্যেই দেখা দেবে। কয়েকটি গণমাধ্যমে আমার মন্তব্য বিকৃত করে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক।’
পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় এবং প্রাথমিকভাবে মৃত্যু নিয়ে চিকিৎসকদের কোনো সন্দেহ না থাকায় গৃহবধূ রেখার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। বৃহস্পতিবারই তাকে দাফন করা হয়।