দেশে বিনিয়োগের এখনই উপযুক্ত সময় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনের তৃতীয় দিনে বৃহস্পতিবার ‘মধ্যপ্রাচ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন ড. মসিউর।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল। প্রবৃদ্ধি উচ্চতর সোপানের দিকে যাচ্ছে। দেশে বিনিয়োগের এখনই উপযুক্ত সময়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগে এগিয়ে আসা উচিত সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্যোক্তাদের।’
বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় দেশ উল্লেখ করে ড. মসিউর বলেন, ‘অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি বেসরকারি খাত। এ কারণে বেসরকারি খাতের সঙ্গে সরকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’
ওষুধ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ‘যেকোনো দেশে বিনিয়োগের আগে সে দেশের বাজার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। তা না হলে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হয়।
‘ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরিতে বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে গভীর সমুদ্রবন্দর, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণসহ বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আগামীতে আরও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনাও রয়েছে।’
ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী আলহোমদি বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য উন্নয়নে ‘বিজনেস কাউন্সিল’ গঠনের প্রক্রিয়া চলমান আছে। এটি গঠন হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও শক্তিশালী হবে।
তৈরি পোশাকমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বছরে ৫৩০ কোটি ডলারের বাজার রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি করে মাত্র ২২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য, যা মোট রপ্তানির ১ শতাংশ। মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানির বড় সম্ভাবনা সত্ত্বেও আমরা পারছি না।’
কীভাবে মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা তৈরির তাগিদও দেন ফজলুল হক।
লাল তীর সিড লিমিটেডের পরিচালক তাজওয়ার এম আউয়াল বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে প্রতিবছর দেড় শ কোটি ডলারের বাজার রয়েছে। সেখানকার বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত শাকসবজি রপ্তানি সম্ভব হলে আমাদের কৃষি খাতে আমূল পরিবর্তন ঘটবে।’
ডিপি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর শামীম উল হক বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও উন্নয়ন চাইলে অবকাঠামো ও নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় বাংলাদেশে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহের কথা জানান সাউদি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সপোর্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলাইমান আল জেদাই।
ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, দেশের মোট রপ্তানির মাত্র ৩ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানি হয়। অথচ সেখানে রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশকে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে পণ্যের বহুমুখীকরণ, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য ব্যবস্থা (পিটিএ) করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।