স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে দাঁত দেখে শিশুদের বয়স নির্ধারণ করছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, শিশুদের বয়স নির্ধারণে যুগ যুগ ধরেই এমনটা করে আসছেন তারা।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হঠাৎ আলোচনা শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাসে প্লে গ্রুপে শিক্ষার্থীদের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর।
বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, ‘শিক্ষার্থীর যোগ্যতা’ অংশে তিনটি শর্ত রয়েছে। এগুলো হলো—বয়স, উচ্চতা ও ওজন।
বয়সের শর্তে বলা হয়েছে, ১ জানুয়ারি ২০২২ সালে বয়স চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে হতে হবে।
উচ্চতার শর্তে বলা হয়েছে, তিন ফুট থেকে তিন ফুট আট ইঞ্চির মধ্যে হতে হবে।
ওজনের শর্তে লেখা আছে, ১৩ থেকে ২১ কেজির মধ্যে হতে হবে। এখানে আবার তিনটি আলাদা শর্ত রয়েছে। এগুলো হলো- শিক্ষার্থীর সব দুধদাঁত (২০টি) অটুট থাকতে হবে, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে এবং ছোঁয়াচে রোগ থাকলে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে না।
প্লে গ্রুপে শিশুশিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ২২ অক্টোবর লটারি করা হয়। এখন চলছে ভর্তির অন্যান্য প্রক্রিয়া। জানা যায়, এবার প্লে গ্রুপে বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণে মোট ৫৮০ শিশুকে ভর্তি করা হবে।
শিক্ষার্থীদের বয়স লুকানো ঠেকাতেই বিজ্ঞপ্তিতে দুধদাঁত এবং অন্যান্য শর্ত দেয়া হয়েছে বলে যুক্তি দেখান মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. বেলায়েত হুসেন।
তিনি বলেন, ‘অনেক অসাধু অভিভাবক শিক্ষার্থীর বয়স লুকিয়ে ভর্তি করতে চান। তারা যেন এ রকম করতে না পারেন এ জন্য ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে দুধদাঁতের বিষয়টি উল্লেখ করেছি।’
এই যুক্তির পক্ষে তিনি আরও বলেন, ‘এটি করার ফলে কেউ বয়স লুকাতে পারে না। আর এ পদ্ধতি আমরা ১৯৭৬ সালে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই করে আসছি। আর ছোঁয়াচে অসুখের কথা বলেছি যেন অন্য শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত না হয়।’
ইতোমধ্যে প্লে গ্রুপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে জানিয়ে বেলাল হুসেন বলেন, ‘অলরেডি আমরা প্লে গ্রুপের লটারির ফল প্রকাশ করে ফেলেছি। এখন এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই।’
স্বাস্থ্যবিষয়ক আমেরিকান ওয়েবসাইট ওয়েবএমডি ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, শিশুদের দুধদাঁতের সংখ্যা সব মিলিয়ে ২০টি। সাধারণত আট মাস থেকে তিন বছর বয়স পর্যন্ত এসব দাঁত গজায়। গজানোর সময় থেকে এক একটি দুধদাঁতের গড় আয়ুষ্কাল ছয় থেকে সাত বছর।
শিশুর দুধদাঁত পড়তে শুরু করে ছয় থেকে সাত বছরের দিকে। প্রথমেই পড়ে যায় মুখের একদম সামনের দিকের দাঁত। ওয়েবএমডি ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, শিশুর ১০ থেকে ১২ বছর বয়সে সবগুলো দুধদাঁত পড়া শেষ হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ডেন্টাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শ্যামল কৃষ্ণ সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দাঁত দেখে বয়স বের করার পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত। এ পদ্ধতিতে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে নির্ভুল তথ্য বের করা সম্ভব। তবে শতভাগ নিশ্চিত হতে হলে অবশ্যই এক্সরে পরীক্ষা করতে হবে।’
মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল কর্তৃপক্ষ প্লে গ্রুপে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শারীরিক উচ্চতা ও ওজনের সীমাও বেঁধে দিয়েছে। এ বিষয়টি নিয়েও সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বাংলাদেশের এই বয়সী একটি শিশুর ওজন সাধারণত কত হয়ে থাকে জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।
এ বিষয়ে ল্যাবএইড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সাধারণত এই বয়সের শিশুদের ওজনের ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ কেজিকে স্বাভাবিক বলে মনে করি। এর কম বা বেশি হলে তা স্বাভাবিক ওজন নয়।’
এই পুষ্টিবিদের জানান, তিনি তার ক্যারিয়ারে ১৩ থেকে ২১ কেজি ওজনের বাইরেও কম বা বেশি ওজনের পাঁচ বছরের বয়সী শিশু পেয়েছেন। এসব শিশুর ডায়েট চার্ট নিয়ে তিনি অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
উচ্চতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর পর্যন্ত একজন শিশুর উচ্চতা কত হওয়া উচিত তা নিদিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। কারণ, উচ্চতার বিষয়টি অনেকটা নির্ভর করে খাদ্যাভ্যাস ও জিনগত বৈশিষ্ট্যের ওপর।’
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জানান, স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারের একটি নীতিমালা রয়েছে, যা সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুসরণ করে।
তিনি বলেন, ‘যারা এমপিভুক্ত নয় অথবা সম্পূর্ণ বেসরকারি অর্থায়নে পরিচালিত তারা শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে নিজস্ব কিছু কিছু শর্ত আরোপ করে। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ এমন কিছু করে থাকতে পারে। বিষয়টি আমি খোঁজ নেব।’