করোনার কারণে প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার পর সশরীরে ক্লাস শুরু হলেও শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির সংখ্যা বেশ কম। প্রথম দিকে উপস্থিতির হার ছিল ৬০ শতাংশের বেশি, কিন্তু ধীরে ধীরে কমছে এ হার।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ সেপ্টেম্বর সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর পর ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ছিল ৬০ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই হার ছিল ৫৫ শতাংশ। সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত স্কুলে উপস্থিতির হার ছিল প্রায় ৫০ শতাংশ। এরপর থেকে গত কিছুদিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির গড় হার নির্ণয় করেনি মাউশি।
স্কুলে উপস্থিতির হার প্রতিনিয়ত কমার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে শিক্ষা প্রশাসনকে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ‘ব্লেন্ডেড এডুকেশন সিস্টেম’ বা মিশ্র শিক্ষাব্যবস্থার আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ব্লেন্ডেড এডুকেশন সিস্টেমের একটি রূপরেখা (ফ্রেমওয়ার্ক) তৈরির জন্য জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সেই সঙ্গে সশরীরে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি এবং অনলাইন বা অনসাইটের শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের মাঝে বোঝানো ও প্রদর্শন করার মাধ্যমে পাঠদান করার পদ্ধতিকে ব্লেন্ডেড এডুকেশন বলা হয়।
জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নিজামুল করিম বলেন, ‘ব্লেন্ডেড এডুকেশন সিস্টেম নিয়ে একটি ন্যাশনাল টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ টাস্কফোর্সের অধীনে ছয়টি উপকমিটি হয়েছে। এই উপকমিটিগুলো কাজ করছে। এর মধ্যে গবেষণা উপকমিটি একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।’
স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার কমছে কেন, এমন প্রশ্নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ড. এ কিউ এম শফিউল আজম বলেন, ‘স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমার বিষয় অবশ্যই উদ্বেগের। এ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। এর মধ্যে ব্লেন্ডেড এডুকেশন সিস্টেম চালুও একটি।’
ব্লেন্ডেড এডুকেশন সিস্টেম কেমন হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মূলত সবাইকে শিক্ষার আওতায় আনতেই এই উদ্যোগ। ধরেন নদীপাড়ে একটি গ্রামে কিছু শিক্ষার্থী রয়েছে কিন্তু স্কুল নেই তারাও এ সিস্টেমে পড়াশোনা করতে পারবে প্রযুক্তির সাহায্যে।’
যাদের পক্ষে স্কুলে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তারাও এ সিস্টেমের মধ্যে পড়াশোনায় অংশ নিতে পারবে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘ব্লেন্ডেড এডুকেশন সিস্টেমে সবাই শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে। কেউ নির্ধারিত সময়ে অ্যাসাইনমেন্ট পাওয়া বা জমা দিতে না পারলে সুবিধাজনক সময়ে অনলাইনেই তা দেখতে পারবে, জমা দিতে পারবে। এক্ষেত্রে সরকার প্রযুক্তিগত সহায়তা করবে।’
গত ৯ এপ্রিল একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমার্বতনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, শিক্ষার আধুনিকায়নে সরকার ব্লেন্ডেড এডুকেশন সিস্টেম চালুর কথা ভাবছে।
তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা শেষ করে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করার পরও নতুন কোনো ক্ষেত্রে জ্ঞান অর্জন করা তার জন্য জরুরি হয়ে যেতে পারে। তখন ওই কর্মজীবীর পক্ষে আবার বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব নয়। এই প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ব্লেন্ডেড এডুকেশন ও মডিউলার এডুকেশনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ২০২০ সালের ১৭ মার্চ সারা দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। এর প্রায় দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজে ক্লাস শুরু হয়। তবে প্রতিদিন সব শ্রেণিতে ক্লাস হচ্ছে না।
শুধু চলতি বছরের ও আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস নেয়া হচ্ছে। আর অন্যান্য শ্রেণির মধ্যে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম, নবম শ্রেণিতে দুই দিন এবং অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এক দিন ক্লাসে আসতে বলা হয়েছে।