কম দামে পোশাক রপ্তানি না করতে একমত হয়েছে দেশের পোশাক শিল্পমালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
সংগঠন দুটির নেতারা বলেছেন, বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ায় বায়াররা (ক্রেতা) এখন পোশাকের বেশি দাম দিচ্ছে। যা সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এটা ধরে রাখতে হবে। কম দামে আর পোশাকের অর্ডার নেবে না কোনো রপ্তানিকারক।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের তরুণ উত্তরাধিকারদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইয়ুথ লিডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বায়লা) আয়োজিত ‘রোড টু রিকভারি’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এ অঙ্গীকার করেছে পোশাক রপ্তানিকারকরা।
আলোচনায় দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা সামলে আমরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছি। প্রচুর অর্ডার আসছে। ভালো দামও পাচ্ছি। বার্গেনিং (দেনদরবার) করে বেশি প্রাইস আদায় করে দিচ্ছি। এইটা আমরা ধরে রাখতে চাই। আমরা আর কম দামে কোনো পোশাক বিক্রি করব না; অর্ডার নেব না। সব রপ্তানিকারকদের এটা জানিয়ে দেয়া হয়েছে।’
‘তবে, এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে; এই যে আমরা পোশাকের বেশি দাম পাচ্ছি, সেটাতে কিন্তু আমাদের আয় বাড়ছে না। সুতাসহ সব ধরনের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। জাহাজ ভাড়াও বেড়েছে।’
পোশাকখাত নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকরা। ছবি: নিউজবাংলা
নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘পোশাকের প্রাইস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের রপ্তানিকারকদের মধ্যে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা ছিল। বায়াররা সেই সুযোগ নিয়ে কম দামে পোশাক কিনেছে। এখন আমরা সবাই একমত হয়েছি, আর কম দামে কোনো পোশাক রপ্তানি করব না।’
তিনি বলেন, ‘বায়াররা এতোদিন নীতি-নৈতিকতার কথা বলে কম দামে পোশাক কিনে আমাদের ঠকিয়েছে। আমরা আর ঠকতে চাই না।’
তরুণ উদ্যোক্তা অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফ জহির বলেন, ‘এখন সময় এসেছে, বায়ারদেরকে বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য করতে হবে।’
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এতোদিন বায়াররা ভিয়েতনাম থেকে যে পোশাক ২০ ডলারে কিনেছে; আমাদের কাছ থেকে একই পোশাক কিনেছে ১০-১২ ডলারে। করোনার পর বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ায় বাধ্য হয়ে তারা প্রচুর অর্ডার দিচ্ছে; দামও বেশি দিচ্ছে। এটাই আমাদের সুযোগ; সময় এখন আমাদের। আমরা কেউ যেনো কম দামে কোনো পোশাকের অর্ডার না নেই।’
বায়লার সভাপতি তরুণ উদ্যোক্তা সায়েম গ্রুপের পরিচালক আবরার হোসেন সায়েমের সভাপতিত্বে এবং নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছির সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী, গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিং উৎপাদনকারীদের সংগঠন- বিজিএপিএমইএর উপদেষ্টা এবং সাবেক সভাপতি রাফেজ আলম চৌধুরী, হোহেনস্টেইন ল্যাবরেটরিজ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান এবং ঢাকায় কর্মরত অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
পোশাকখাতের তরুণ উদ্যোক্তাদের নতুন সংগঠন বায়লা। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্যের সুনাম তুলে ধরা, বাজার গবেষণা, পণ্যবৈচিত্র্যকরণে নতুন প্রজন্মের চিন্তাভাবনা নিয়ে প্রতিষ্ঠানিক কাজ করার অঙ্গীকার করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে।
সে সঙ্গে পোশাক খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বায়লা। ৫০ বছরের কম বয়সী শিল্পোদ্যোক্তারা এর সদস্য হতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে বায়লা সভাপতি আবরার হোসেন সায়েম বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাক শিল্প আরও অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সরকার-বেসরকারি খাত সম্মিলিতভাবে কাজ করলে সেই লক্ষ্য অবশ্যই অর্জন করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘নতুন উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা, প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বাজার বৃদ্ধির নতুন সুযোগগুলো নিয়ে কাজ করার প্রয়াস থেকেই বায়লার জন্ম। তৈরি পোশাকখাতে গুণগত পরিবর্তন আনতে তারুণ্যের উদ্যোম ও প্রবীণের অভিজ্ঞতার সমন্বয় খুবই জরুরি। বায়লার মাধ্যমে আমরা তরুণদের ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
করোনা মহামারির মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ৮২ শতাংই এসেছিল তৈরি পোশাক শিল্পখাত থেকে।
গত অর্থবছরের সে ইতিবাচক ধারা চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরেও অব্যাহত রয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পণ্য রপ্তানি থেকে ১ হাজার ১০২ কোটি ২০ লাখ (১১.০২ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। এরমধ্যে ৮২ দশমিক ২০ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।