সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজামণ্ডপ ও বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ সাত দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
মঙ্গলবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে এই স্মারকলিপি তুলে দেয়া হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক রহমতুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক ড এ কে এম গোলাম রাব্বানীসহ কয়েকজন শিক্ষক।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, সম্প্রতি কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার কথিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ দেশের ১৫টি জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতার কারণ ও আক্রমণের তীব্রতা উপলব্ধির উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ১৮ অক্টোবর কুমিল্লা ও চৌমুহনীতে হামলার শিকার পূজামণ্ডপ, মন্দির, আশ্রম, ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে।
এছাড়া ওই সময় আক্রান্ত পরিবার, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাবি শিক্ষক সমিতি।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, চৌমুহনীতে বিজয়া দশমীর দিন এ ধরনের ঘটনার আশঙ্কায় স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যেই প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। এরপরেও জুমার নামাজের পর বিভিন্ন মন্দির, আশ্রম ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে হয়তো এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো যেত।
এতে বলা হয়েছে, আক্রমণ শুরুর পরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন সক্রিয় হলে ক্ষতির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত বলে এলাকাবাসী মনে করেন। স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির অনৈক্যের সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা নির্বিঘ্নে এ হীন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, যে মুহূর্তে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হচ্ছে, সে মুহূর্তে ষড়যন্ত্রকারীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করতে তৎপর রয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, এই একই অপশক্তি এর আগে কক্সবাজারের রামু, সুনামগঞ্জের শাল্লা ও বগুড়ায় গুজব সৃষ্টি করে এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রয়াসকে বাধাগ্রস্ত করাই এই অপশক্তির উদ্দেশ্য।
সাম্প্রদায়িক হামলার মতো অপরাধমূলক কার্মকাণ্ড ও অস্থিতিশীলতার পুনরাবৃত্তি রোধে ঢাবি শিক্ষক সমিতি স্মারকলিপিতে চারটি বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে।
এগুলো হলো-
# আশঙ্কা থাকার পরেও সংশ্লিষ্ট স্থানে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেয়ার এবং হামলার সময়ে স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার যে অভিযোগ উঠেছে সেটি তদন্ত করা। এক্ষেত্রে কারও কোনো অবহেলা বা শিথিলতা থাকলে সেটি চিহ্নিত করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
# হামলার ঘটনায় নিহতদের পরিবার, ক্ষতিগ্রস্ত পূজামণ্ডপ, আশ্রম, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া।
# এ ধরনের ঘটনা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল তাই দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের ব্যবস্থা করা। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ধরনের আক্রমণের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
# ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামে যেকোন সহিংসতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী যেকোনো অপতৎপরতা বন্ধে সর্বাত্মক সতর্কতা এবং আইনের শাসন নিশ্চিতের উদ্যোগ নেয়া।