রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা আলোচিত মামলার রায় বুধবার। ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোসা. কামরুন্নাহার এই আলোচিত মামলার রায় পড়ে শোনাবেন।
১২ অক্টোবর এই মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ছিল। তবে বিচারক ছুটিতে থাকায় এবং রায় পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়।
৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা চার বছরের পুরোনো এই মামলার বিচার কার্যক্রম সমাপ্তির জন্য যুক্তিতর্কের শুনানিতে অংশ নেন।
এতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আফরোজা ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জ এবং বাদীর নিজ খরচায় নিয়োজিত আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বিচারকের কাছে বলেছিলেন, ‘যেটি যৌক্তিক মনে হয় সেটিই রায়ে উঠে আসুক।’
সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আফরোজা ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দুজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী আদালতে এসে সাক্ষ্য দেননি। এ ছাড়া সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ জমা দেয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। তবে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত আছে, পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় আদালত যদি মনে করে আসামিদের দণ্ড দিতে পারে।’
এ মামলায় আসামিপক্ষে বিভিন্ন তারিখের শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজল, কাজী নজিবুল্যাহ হীরু, আব্দুল বারেক চৌধুরি, খায়রুল ইসলাম লিটন, মো. হেমায়েত উদ্দীন মোল্যাসহ আরও কয়েকজন।
আলোচিত এ মামলার শুনানির সময় মামলার দুই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী আহমেদ শাহরিয়ার ও ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি আদালতে উঠে আসে।
তখন আইনজীবীরা বলেছিলেন, ‘সাক্ষ্য দিতে বারবার সমন পাঠানো হলেও তারা আদালতে আসেননি।’
যুক্তিতর্ক শুনানির সময় বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেছিলেন, ‘লকডাউনের আগে জানুয়ারিতে তিনবার সমন পাঠানো হয়। এমনকি মোবাইল ফোনেও আদালতে এসে সাক্ষ্য দেয়ার অনুরোধ করি। এতকিছুর পরও তারা আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেননি।’
মামলার তথ্য থেকে জানা গেছে, ধর্ষণের শিকার দুই শিক্ষার্থীর বন্ধু আহমেদ শাহরিয়ার ওই দিন রেইনট্রি হোটেলে উপস্থিত ছিলেন। তাকেও মারধর করেন অভিযুক্তরা।
পিয়াসা এই মামলার অন্যতম আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদের সাবেক স্ত্রী। ধর্ষণের ঘটনার পর পিয়াসার বিভিন্ন বক্তব্যও আলোচনায় এসেছিল।
এ দুই সাক্ষীর না আসা প্রসঙ্গে আসামি নাঈম আশরাফের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম লিটন যুক্তিতর্কে বলেছিলেন, ‘যদি ঘটনা সত্য হতো, তাহলে তারা সাক্ষ্য দিতে আসতেন। মামলার বাদীর বান্ধবীর কাপড়চোপড় পরীক্ষার জন্য জমা নেয়া হলেও বাদীর কাপড় আলামত হিসেবে গ্রহণ করেননি তদন্ত কর্মকতা।’
আসামি সাফাত ও অন্যরা ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতা অথবা সাফাতের সাবেক স্ত্রী পিয়াসার ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
‘জোরপূর্বক ধর্ষণের আলামত নেই’ বলে চিকিৎসকের সনদপত্রের বিষয়েও বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন আসামিপক্ষের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল।
এর আগে ২৯ আগস্ট এ মামলার আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি হয়। ওই দিন আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিত বক্তব্য ও ছবি আদালতে জমা দেয়া হয়।
আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্রের অন্তর্ভুক্ত সাক্ষীদের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ মোট ২২ জনের সাক্ষ্য নিতে সক্ষম হয়েছে।
৫ সেপ্টেম্বরে জামিনে থাকা আসামি সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু সাদমান সাকিফ, দেহরক্ষী রহমত আলী, সাফাতের বন্ধু নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিম, গাড়িচালক বিল্লালের জামিন বাতিল করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠান। সেই থেকে তারা কারাগারে আটক রয়েছেন।
সর্বোচ্চ শাস্তির মামলায় এবং দণ্ডপ্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকলে সাধারণত রায় ঘোষণার আগে জামিন বাতিল করে আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়।
২০১৭ সালের ২৮ মার্চ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে অস্ত্রের মুখে ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ৬ মে বনানী থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়।
ওই বছরের ৭ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।