ঘুমন্ত অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে রুমের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী।
রোববার ভোরে হলের ১৩৬ নং রুমে এ ঘটনা ঘটে। আহত কামরুল হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
১৩৬ নং রুমটিতে চার বেডে আটজন শিক্ষার্থী থাকেন। এর মধ্যে একটি বেডে থাকেন কামরুল ও রুমান। রুমান ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী। ঘটনার সময় রুমান বাড়িতে ছিলেন।
কামরুল হাসানের আরেক রুমমেট আরফাত চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজ সকাল ছয়টার দিকে আমি পড়ছিলাম। তখন হঠাৎ আওয়াজ হয়। পাশে তাকিয়ে দেখি কামরুল হাসানের ওপর পলেস্তারা পড়েছে। তার কপাল ফেটে যায়। রক্ত চলে আসে। তবে গুরুতর কিছু না হওয়ায় সে ক্লাসে চলে যায়।’
কামরুল হাসান বলেন, ‘আমি ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ ওপর থেকে খসে পড়া পলেস্তারার আঘাতে আমার ঘুম ভেঙে যায়। কপালে হাত দিয়ে দেখি রক্ত। এই পলেস্তারা আমার কপালে না পড়ে চোখেও পড়তে পারত। সবাই ঘুম থেকে উঠে দিনের আলো দেখলেও আমি হয়তো আজ চোখের আলো হারাতাম।’
কামরুল বলেন, ‘আজকে হয়তোবা আমার চোখ রক্ষা পেয়েছে, কিন্তু ভবিষ্যতে হলের প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীর জীবন কি রক্ষা হবে? এসব দেখার কি কেউ আছে? হল কর্তৃপক্ষ ঐতিহ্যের অজুহাত দিয়ে আমাদের হলটি বৃহৎ আকারে সংস্কার করছে না। শিক্ষার্থীদের জীবনের চেয়ে তাদের কাছে ঐতিহ্য রক্ষা বড় হয়ে গেছে। প্রশাসনের কাছে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা নাকি ঐতিহ্য রক্ষা করা।’
ঘটনার পরপরই প্রাধ্যক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হলের কর্মচারী তত্ত্বাবধায়ক হালিম। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি স্যারকে জানিয়েছি। বেলা ১১টার দিকে আমি সেই রুমে যাই। রুমের ছাদ থেকে খসে পড়তে পারে এ রকম পলেস্তারা ফেলে দিয়ে চলে আসি।’
তবে বিকেল পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আসেননি হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মজিবুর রহমান।
বিষয়টি জানাতে তিনবার প্রভোস্ট অফিসে গেলেও একবারও প্রভোস্টের সাক্ষাৎ পাননি বলে জানান ভুক্তভোগী কামরুল হাসান।
হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৭ সালে একবার এবং সবশেষ ২০১৯ সালের শুরুতে হলের ঝুঁকিপূর্ণ সব রুমের ছাদে নতুন পলেস্তারা লাগানো হয়। তবে তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
হল তত্ত্বাবধায়ক আবদুল হালিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন হলের ঝুঁকিপূর্ণ রুমগুলোর ছাদে নতুন করে পলেস্তারা লাগিয়ে দিয়েছিল। তবে পলেস্তারা লাগানোর পর এসবে পানি দেয়া প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু রুমগুলোতে শিক্ষার্থীরা উঠে যাওয়ায় আর পানি দেয়া সম্ভব হয়নি।
পলেস্তারা খসে পড়ার বিষয়টি অবগত আছেন বলে জানালেন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মজিবুর রহমান। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। আমি এখন একটা নিয়োগ বোর্ডের ভাইভাতে আছি। ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনকে বলেছি তারা যেন হলের প্রতিটি রুম চেক করে। আর আহত শিক্ষার্থীর দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে আমি হলে বলে দিচ্ছি।’