লেনদেনের প্রায় চার ভাগের একভাগ একটি কোম্পানিতেই। এমন অবিশ্বাস্য চিত্র দেখা গেল দেশের পুঁজিবাজারে।
রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৭১ কোটি ৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেডেরই ৩৪২ কোটি ১৯ লাখ টাকা হাতবদল হয়েছে। অর্থাৎ মোট লেনদেনের ২৩.২৬ শতাংশ।
এই হুলুস্থুল হলো কোম্পানিটির লভ্যাংশ ঘোষণার পর।
২০১০ সালের মহাধসের পর কোম্পানিটি প্রথমবারের মতো ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করল এবার। শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৭ টাকা ৫৩ পয়সা। আগের বছর আয় ছিল ৫১ পয়সা।
গত দেড় বছরে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৩ টাকা থেকে বেড়ে দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ১৬৭ টাকা ৭০ পয়সা। তবে এক পর্যায়ে দাম ১৮০ টাকা উঠে গিয়েছিল। এত বেশি হারে কোনো শেয়ারের দাম বাড়েনি দেশের পুঁজিবাজারে।
মূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেক্সিমকোর শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও বাড়ছে। গত জুলাইয়ে কোম্পানিটির চার কোটির বেশি আর আগস্টে সাত কোটি শেয়ার কিনেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।
এই এক বছরে বেশিরভাগ দিনই লেনদেনের শীর্ষে ছিল এই কোম্পানিটি। মাঝে কেবল দুই একদিন ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো, গত মাসে লাফার্ম হোলমিস, ওরিয়ন ফার্মা বেক্সিমকোকে ঠেলে নিচে নামিয়েছে। তবে শেয়ারদর বৃদ্ধি থামেনি।
তবে এক এক বছরে কোনো কোম্পানির তিনশ কোটি টাকার বেশি লেনদেনর চিত্র দেখা যায়নি। আজ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হওয়া ওরিয়ন ফার্মাও হাতবদল হয়েছে বেক্সিমকো ফার্মার চার ভাগের এক ভাগের কম। এই কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ৭৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
পিপিই পার্ক ছাড়াও আরও একটি কারণে বেক্সিমকোর শেয়ারদর ক্রমেই বাড়ছে। কোম্পানিটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সি পাওয়ার দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কাজ পেয়েছে। এর মধ্যে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নে একটি ২৮০ মেগাওয়াট ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় নির্মিত হচ্ছে ৫৫ মেগাওয়াটের আরও একটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এর মধ্যে গাইবান্ধার কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে তিস্তা সোলার লিমিটেড আর পঞ্চগড়েরটি নির্মাণ করছে করতোয়া সোলার লিমিটেড নামে কোম্পানি। এই দুটি কোম্পানির ৭৫ শতাংশের মালিক বেক্সিমকোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সি পাওয়ার। বেক্সি পাওয়ারের ৭৫ শতাংশের মালিক আবার বেক্সিমকো লিমিটেড।
এই দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে উৎপাদনে আসবে।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থায়নের জন্য বেক্মিমকো তিন হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড ছেড়েছে।
লভ্যাংশ ঘোষণা হওয়া অন্য কোম্পানির চিত্র কী
রোববার লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ১৪টি কোম্পানির কোনো মূল্যসীমা ছিল না। এর মধ্যে বেক্সিমকোর মতো চিত্র অন্য কোনো কোম্পানিতে দেখা যায়নি।
বেক্সিমকোর প্রায় দ্বিগুণ লভ্যাংশ ঘোষণা করা স্কয়ার ফার্মার শেয়ারদর কমেছে। কোম্পানিটি এবার শেয়ার প্রতি ৬ টাকা লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই ঘোষণায় শেয়ারদর ২৩৩ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২২৬ টাকা ২০ পয়সা।
শেয়ার প্রতি দুই টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করা একই গ্রুপের স্কয়ার টেক্সটাইলের শেয়ারদর ২ টাকা ১০ পয়সা বেড়ে ৪৯ টাকা ৮০ পয়সা থেকে হয়েছে ৫১ টাকা ৯০ পয়সা।
বেক্সিমকো লিমিটেডের সমান লভ্যাংশ ঘোষণা করা একই গ্রুপের বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ারদরও কমেছে। সাড়ে তিন টাকা লভ্যাংশ ঘোষণার প্রভাবে শেয়ারদর ২২৯ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৪০ পয়সা কমে হয়েছে ২২৬ টাকা ২০ পয়সা।
একই গ্রুপের আরেক কোম্পানি শাইনপুকুর সিরামিক শেয়ার প্রতি ২৫ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণার পর শেয়ার দর কমেছে ১ টাকা ৬০ পয়সা। ৩৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৩৫ টাকা ৩০ পয়সা।
শেয়ারে ১৪ টাকা ৫০ পয়সা ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়ার ঘোষণায়রেনাটার কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১ টাকা ২০ পয়সা। দাম এক হাজার ৪৪০ টাকা ১০ পয়সা থেকে হয়েছে ১ হাজার ৪৪১ টাকা ৩০ পয়সা।
শেয়ার প্রতি ২০ পয়সা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণা করা মেরিকোর শেয়ারদর বেড়েছে ৭ টাকা ২০ পয়সা। শেয়ারদর দুই হাজার ৩০৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৩১৫ টাকা ৫০ পয়সা।
শেয়ার প্রতি ৫ টাকা (এর মধ্যে ১ টাকা এসেছিল অন্তর্বর্তী, চূড়ান্ত লভ্যাংশ ৪ টাকা) লভ্যাংশ ঘোষণা করা বিএসআরএম লিমিটেডের দর ১১৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১১৯ টাকা।
একই গ্রুপের আরেক কোম্পানি বিএসআরএম স্টিল শেয়ার প্রতি ৪ টাকা (এর মধ্যে ১ টাকা এসেছিল অন্তর্বর্তী, চূড়ান্ত লভ্যাংশ ৩ টাকা) লভ্যাংশ ঘোষণার পর শেয়ারদর ২ টাকা ১০ পয়সা বেড়ে ৬৯ টাকা ৯০ পয়সা থেকে হয়েছে ৭২ টাকা।
শেয়ার প্রতি ১ টাকা ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা প্রকৌশল খাতের বিসিএস ক্যাবলস দর হারিয়েছে ৪ টাকা ৭০ পয়সা। ৬৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে শেয়ারদর নেমে এসেছে ৬১ টাকা ৫০ পয়সা।
লোকসান দেয়ার পরও রিজার্ভ থেকে শেয়ার প্রতি ২০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করা বিবিএস দর হারিয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। শেয়ারদর ১৮ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৬ টাকা ৫০ পয়সা। দাম কমেছে ১০.৩২ শতাংশ।
প্রকৌশল খাতেরই আরেক কোম্পানি ন্যাশনাল পলিমার শেয়ারে এক টাকা লভ্যাংশ ঘোষণার পর দর হারিয়েছে ৩ টাকা ৭০ পয়সা। শেয়ারদর ৫৬ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৫২ টাকা ৯০ পয়সা।
দ্বিগুণ আয় করার পর শেয়ার প্রতি ৩ টাকা ৭০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করা বাংলাদেশ সাবমেরিন কোম্পানি লিমিটেড দর হারিয়েছে ১ টাকা ৯০ পয়সা। শেয়ারদর ২১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২১০ টাকা ৬০ পয়সা।
শেয়ার প্রতি ২০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করা বস্ত্র খাতের আনলিমা ইয়ার্ন দর হারিয়েছে ৩ টাকা ১০ পয়সা। শেয়ারদর ৩৮ টাকা ৭০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ৩৫ টাকা ৬০ পয়সায়।
দিনের সবচেয়ে বেশি পতন হওয়া কোম্পানিটির নাম ফাস ফাইন্যান্স। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে ১০ টাকার শেয়ারে ১৪ টাকার বেশি লোকসান করার কারণে লভ্যাংশ না দেয়া কোম্পানিটি দর হারিয়েছে ১০.৬৬ শতাংশ। শেয়ারদর ৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৬ টাকা ৭০ পয়সা।