এক দশক আগে দেশে মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) চালু করলেও একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান মোট বাজারের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ দখল করে রেখেছে। আর্থিক সেবা খাতে গ্রাহকরা একটি কোম্পানির হাতেই জিম্মি বলে অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
তারা বলছে, একটি কোম্পানিই তাদের মতো করে এমএফএস বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নীতিমালা না থাকায় অন্য কোনো সেবা দাঁড়াতে পারছে না। এমএফএস সেবায়ও সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে না।
গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সার্ভিস চার্জ আরও কমিয়ে কীভাবে বাজারে প্রতিযোগিতা আনা যায় এবং ছোট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখা যায় সে ব্যাপারে প্রতিযোগিতা কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে কমিশনের চেয়ারপারসনকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘এ পর্যন্ত অনেকগুলো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অনুমতি নিলেও কার্যক্রম করে মাত্র ১৭-১৮টি। এমএফএস খাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকার কারণে দু-একটি ছাড়া বাকিরা টিকতে পারেনি। আর এর সুফল ভোগ করছে মাত্র দুই-একটি আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, “ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ মাত্র আড়াই বছরেই স্বল্প মুনাফায় গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে। নগদে ক্যাশ আউট চার্জ সর্বনিম্ন ১১ টাকা ৪৯ পয়সা। তা ছাড়া, বিনা খরচে সেন্ড মানি, সম্পূর্ণ ফ্রিতে বিল পে, সেভিংস-এ সর্বোচ্চ মুনাফাসহ আরও অনেক সুবিধা দিচ্ছে এই সেবাটি।”
মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন বলছে, মোবাইল আর্থিক সেবা টিকিয়ে রাখতে একক আধিপাত্য বন্ধ করা জরুরি। যথাযথ নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা নিশ্চিতসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় যত দ্রুত সম্ভব মোবাইল আর্থিক সেবার নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার।
তারা বলছে, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ একক আধিপত্য মুক্ত করতে সিগনিফিক্যান্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। ফলে প্রতিযোগিতায় ছোট বা মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো না হারিয়ে সমান তালে টিকে থাকতে পারছে। এসএমপি নীতিমালার উদ্দেশ্য বাজারে একক আধিপত্য বিস্তার করা কোম্পানিকে নিয়ম-নীতির মাধ্যমে কিছুটা নিয়ন্ত্ৰণ করা। যাতে করে, সম ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, গত কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) টেলি সেক্টরে একক আধিপত্য নিযন্ত্রণে সিগনিফিকান্ট মার্কেট পাওয়ার নীতিমালা প্রণয়ন করে। ফলে টেলিকম সেক্টরে গ্রামীণ ফোনের একক আধিপাত্য কমেছে। মার্কেটে টিকে থাকার সুযোগ তৈরি হয়েছে দেশীয় টেলিকম কোম্পানি টেলিটকসহ অন্যান্য টেলিকম অপারেটরের। এজন্য মোবাইল আর্থিক সেবা নিয়ন্ত্রণে বাজার নিয়ন্ত্রণ পলিসি প্রয়োজন।
চিঠিতে তারা বলেন, মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে বিকাশ প্রতি হাজারে ক্যাশ আউট চার্জ ১৮ টাকা ৫০ পয়সা। আর সেন্ড মানি বা এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে টাকা পাঠাতে গেলে প্রতি লেনদেনে নেয়া হয় ৫ থেকে ১০ টাকা।
ইউটিলিটি বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে বিকাশের চার্জ সবচেয়ে বেশি। এসব বিল দেয়ার ক্ষেত্রে বিকাশ চার্জ ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। জমা টাকায় মুনাফা দেয় সাড়ে ৪ শতাংশ।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেটেও প্রতি হাজারে ক্যাশ আউটে খরচ গুণতে হয় ১৮ টাকা। সেন্ড মানি এবং ইউটিলিটি বিল দেবার ক্ষেত্রে কোনো খরচ করতে হয় না।
নতুন এসে সবচেয়ে কম খরচে সেবা দিচ্ছে ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদ। প্রতি হাজার টাকা ক্যাশ আউটে প্রতিষ্ঠানটি চার্জ নিচ্ছে ১১ টাকা ৪৯ পয়সা। নগদ-এ সেন্ড মানির ক্ষেত্রে কোনো টাকা গুণতে হয় না গ্রাহকদের। ইউটিলিটি বিলও নেয়া হচ্ছে না কোনো অর্থ। আর জমা টাকায় মুনাফা দেয়া হয় সাড়ে ৬ শতাংশ।