বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সালাম না দেয়ায় ঢাবির হলে শিক্ষার্থীদের চড়-থাপ্পড়

  •    
  • ২১ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:৫২

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত শুক্রবার আমি হল গেটে দাঁড়ানো ছিলাম। পাশ দিয়ে তৃতীয় বর্ষের এক বড় ভাই চলে গিয়েছিল, আমি খেয়াল করিনি। পরদিন ইনফরমাল গেস্টরুমে আমাকে জহুরুল ভাই থাপ্পড় দেয়। আমি দাঁত চেপে সহ্য করতে পারছি। কিন্তু আমার অনেক বন্ধু এটা সহ্য করতে পারে না। তারা কান্না করে দেয়।’

সিনিয়রদের সালাম না দেয়ায় এবং ছাত্রলীগের নিয়ম-কানুন না মানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে রুমে ডেকে নিয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে দ্বিতীয় বর্ষের সাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।

প্রায় প্রতিদিন প্রথম বর্ষের অন্তত একজন শিক্ষার্থীকে হলের ২২৫ ও ১১৯ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগীরা যাদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলেছেন তারা হলেন ইতিহাস বিভাগের আনিসুর, দর্শন বিভাগের নাফি, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রাইসুল, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের সজীব, ফারসি বিভাগের জহিরুল, সমাজ কল্যাণ বিভাগের শাকিল ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শামীম। তারা সবাই ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী।

দ্বিতীয় বর্ষের এসব শিক্ষার্থী হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল সোবাইলের ‘ছোট ভাই’ হিসেবে পরিচিত। সোবাইল ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী।

হল সূত্রে জানা যায়, হলের অধিকাংশ রুম ছাত্রলীগের দখলে। এসব রুমে ছাত্রলীগ নেতারাই সিট বরাদ্দ দেন। এ রকম একটি রুম হলের ২২৮ নম্বর। এই রুমটি সোবাইলের দখলে। প্রথম বর্ষের ২০ জন শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে এই রুমে থাকেন। সোবাইলের অনুসারীরাই মূলত এসব শিক্ষার্থীকে হলে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। বিনিময়ে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে যেতে হয় ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে। আর রাতে বসতে হয় গেস্টরুমে।

গেস্টরুমে ছাত্রলীগকর্মীরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের নিয়ম জানিয়ে দেন। এর মধ্যে সিনিয়রদের বাধ্যতামূলক সালাম দেয়া, সালাম দিয়ে হ্যান্ডস শেক (করমর্দন) করা, নিয়মিত রাজনৈতিক প্রোগ্রামে অংশ নেয়া অন্যতম। এ ছাড়া সিনিয়রদের সামনে হলের ক্যান্টিনে খাবার না খাওয়া, হলের লিফটে না চড়ার মতো উদ্ভট অনেক নিয়মও গেস্টরুম থেকে জানিয়ে দেয়া হয়।

এসব নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাতেই মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে প্রথম বর্ষের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর চড়াও হয়েছেন ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী কর্মীরা। নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের রুমে ডেকে চড়-থাপ্পড় এমনকি স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানোর অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে।

আবদুল্লাহ আল সোবাইলের অনুসারীরা সপ্তাহে ছয় দিনই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমে নেয়। এসব গেস্টরুম এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বিত হয়। ছয় দিনের মধ্যে তিন দিন আনুষ্ঠানিক এবং বাকি তিন দিন অনানুষ্ঠানিক গেস্টরুম।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আনুষ্ঠানিক গেস্টরুম হয় হলের নিচতলার অতিথি কক্ষে। এখানে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছাড়াও তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকায় এ গেস্টরুমে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মারধর বা তাদের প্রতি খারাপ ভাষা ব্যবহার করা হয় না।

আর অনানুষ্ঠানিক গেস্টরুম হয় দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের রুমে। কোনো নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে সেখানেই মূলত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মারধর এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, হলগেটে বড় ভাইদের সালাম না দেয়ায় গত কয়েক দিন ধরে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর মারধর চলছে। প্রথমবর্ষের ১৫ থেকে ১৭ জন শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের এসব মারের শিকার হয়েছেন। মারধরের বিষয়টি কাউকে না জানাতেও নির্দেশ দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত শুক্রবার আমি হলগেটে দাঁড়ানো ছিলাম। পাশ দিয়ে তৃতীয় বর্ষের এক বড় ভাই চলে গিয়েছিল, আমি খেয়াল করিনি। পরদিন ইনফরমাল গেস্টরুমে আমাকে জহুরুল ভাই থাপ্পড় দেয়। আমি দাঁত চেপে সহ্য করতে পারছি। কিন্তু আমার অনেক বন্ধু এটা সহ্য করতে পারে না। তারা কান্না করে দেয়।’

ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের গেস্টরুমে ১৪টি নিয়ম শেখানো হয়। প্রতিদিন এগুলো মুখস্থ বলতে হয়, কিন্তু আমি না পারায় আমাকে থাপ্পড় দিয়েছে আনিসুল ভাই। আমি গেস্টরুমে টিশার্ট পরে আসছি এটাও নাকি আমার অপরাধ ছিল।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, সপ্তাহের শনি সোম ও বুধবার তাদের ইনফরমাল গেস্টরুম। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরাই মূলত তাদের গায়ে হাত তুলে।

দ্বিতীয় বর্ষের যে সাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তাদের মধ্যে জহুরুলই সবচেয়ে বেশি উগ্র বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্যাম্পাস খোলার পর থেকে সোবাইল ভাইয়ের গ্রুপের ইমিডিয়েট সিনিয়ররা নিয়মিত গেস্টরুম করায়। সেখানে তারা বড় ভাইদের সালাম না দেয়া, হ্যান্ডশেক না করা, প্রোগ্রামে যেতে সামান্য দেরির কারণে মারধর করে।

‘সপ্তাহে তিন দিন আমাদের অনানুষ্ঠানিক গেস্টরুম হয়। প্রতিবারই তারা কাউকে না কাউকে মারধর করে। এ ছাড়া পিতা-মাতার নাম নিয়ে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজও করেন।’

মারধরের প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার এক বন্ধুকে রাজু ভাস্কর্য কোথায় জিজ্ঞাসা করেছিল দ্বিতীয় বর্ষের বড় ভাইয়েরা। তখন তার মাথায় বিষয়টি আসছিল না, তাই সে বলতে পারেনি। এরপর তাকে জহুরুল ভাই এমন জোরে থাপ্পড় দিয়েছিল, আমার সে বন্ধু কান্না করে দিয়েছে। তার হাঁফানি রোগও ছিল। থাপ্পড় খেয়ে সে হাঁফাচ্ছিল। পরে তাকে গেস্টরুম থেকে ছুটি দিয়ে দেয়।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সোবাইল গ্রুপের অনুসারী দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আনিসুর বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনি সোবাইল ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি আমাদের নেতা। এ ছাড়া আমার আর কিছু বলার নেই।’

সোবাইলের অনুসারী শাকিল ও জহিরুল অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। আর নাফি, সজীব, শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে আবদুল্লাহ আল সোবাইল বলেন, ‘আরও কয়েকজনের কাছে ঘটনাটা আমি শুনেছি। এরপর আলাদাভাবে দ্বিতীয় বর্ষ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমি বসেছি। তারা বলেছে, তারা মারধর করেনি। সামান্য উচ্চ বাক্যে বকা বা ধমক দিয়েছে।’

তবে সূত্র বলছে, মারধরের বিষয়ে গণমাধ্যমের কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকের ফোন পেয়ে সোবাইল তাৎক্ষণিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রলীগ কর্মীদের হলের অতিথি কক্ষে ডেকে আনেন। এরপর তিনি প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলা হয়েছে সেটি জানতে চান। শুরুতে বলতে দ্বিধা করলেও পরে সোবাইলের কাছে স্বীকার করেন, তারা প্রথম বর্ষের তিনজন শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তুলেছেন, তবে বেশি মারেননি।

এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমি বিষয়টি মাত্র শুনেছি। খোঁজ নিচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর