দলীয় প্রার্থী বাছাই করে কেন্দ্রে পাঠানোর শেষ দিন ছিল বুধবার। কিন্ত শেষ দিনেও বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় চারটি ইউনিয়নে বাছাইকৃত প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে পাঠাতে পারেনি উপজেলা আওয়ামী লীগ।
এই ব্যর্থতার জন্য স্থানীয় সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান রিমনের হস্তক্ষেপ ও জবরদস্তিকে দায়ী করেছেন উপজেলার নেতারা।
প্রার্থী বাছাইয়ের বর্ধিত সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাবির হোসেনকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে সাংসদ রিমনের অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
গত সোমবারের সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকে লাঞ্ছিত করার একটি ভিডিও নিউজবাংলা প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। এতে দেখা যায়, নেতা-কর্মীদের সামনেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আকন মোহাম্মদ শহীদ সাধারণ সম্পাদক জাবির হোসেনের দিকে বারবার তেড়ে যান। প্রতিবারই উপস্থিত নেতা-কর্মীরা তাকে নিবৃত করার চেষ্টা করেন। এ সময় এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন ঘটনাস্থলেই ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাবির হোসেন বলেন, ‘প্রার্থী মনোনীত করতে উপজেলার সদর, চরদুয়ানী, রায়হানপুর ও নাচনাপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে আমরা বৈঠকে বসি। বৈঠকে বরগুনা-২ আসনের সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান রিমনও অনুসারীদের নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়- তিন জনের নাম আমরা সুপারিশ করে জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমন্বয় করে কেন্দ্রে পাঠাবো। কিন্ত সাংসদ রিমন এতে আপত্তি তোলেন এবং তার পছন্দের প্রার্থীর নাম সবার ওপরে রেখে সেখানে বসেই তালিকা করার জন্য চাপ দেন। একপর্যায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এমপি রিমনের ঘনিষ্ঠ আকন মোহাম্মাদ শহীদ আমাকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন। পরে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।’
জাবির হোসেন জানান, ওই ঘটনার পরও তারা তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে একটি তালিকা প্রস্তুত করেন। কিন্ত সাংসদ রিমন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সম্পাদকদের ওই তালিকায় স্বাক্ষর দিতে নিষেধ করেন। এ কারণে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনেও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। পরে বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের জানানোর পর সেখানেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়।
জাবির দাবি করেন, ‘বিএনপি, জামায়াত ও বিতর্কিতরা সাংসদ রিমনের অনুসারী। আমার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে এটা পরিকল্পিত ও এমপি রিমনের প্রত্যক্ষ মদদেই।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এমপি রিমন অযাচিত হস্তক্ষেপ করায় এখনও পর্যন্ত আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। ওই চারটি ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাইয়ে এমপি রিমন যাদের পছন্দ করছেন, তারা সবাই কম-বেশি বিতর্কিত। বিশেষ করে, রায়হানপুর ইউনিয়নে তার পছন্দের প্রার্থী মিজানুর রহমান রুপক ২০০১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগদান করে, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় শেখ হাসিনাকে রিমান্ডে নেয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন। এ ছাড়া সদর ইউনিয়নে এমপির পছন্দের প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদকে ঘিরেও বিতর্ক আছে। আসাদের শ্বশুর মকবুল হোসেন শান্তি কমিটির ইউনিয়ন কমান্ডার ছিলেন। একইভাবে চরদুয়ানী ও নাচনাপড়া ইউনিয়নেও এমপি রিমনের পছন্দের প্রার্থী বিতর্কিত।’
তিনি বলেন, আমাদের চাপ প্রয়োগ করে প্রভাব খাটিয়ে রিমন এসব প্রার্থীর মনোনয়নের জন্য বাধ্য করাতে চাইছেন। তা না করায় তিনি আমাদের কার্যক্রমকে বাঁধাগ্রস্ত করছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বিধিবহির্ভূতভাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই ও মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করেছেন। এ তালিকা নিয়ে প্রার্থী ও তাদের লোকজন ক্ষুদ্ধ হওয়ায় বর্ধিত সভায় তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। এটা আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে আমার অনুসারী দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ সত্য নয়।’
চাপ প্রয়োগ ও তৃনমূল নেতাদের ভয় ভীতি দেখানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'তৃণমূলের নেতারাই তো প্রার্থী বাছাই নিয়ে উপজেলার বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগের কাছে অভিযোগ করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভায় সহ-সভাপতি হিসেবে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এটা কোনো প্রকার চাপ সৃষ্টি নয়।'
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্জ্ব জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, ‘প্রার্থী বাছাইয়ে জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা ও বিধিমালা আছে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সাংসদের হস্তক্ষেপ ও চাপের বিষয়ে উপজেলা লিখিত অভিযোগ করলে আমরা সেটি কেন্দ্রে পাঠাবো।’