যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য ও ভুল কনটেন্ট ছড়িয়ে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
বুধবার র্যাব সদর দপ্তরে এক অনানুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য বা ভুল কনটেন্ট ছড়িয়ে দিচ্ছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করার চেষ্টা করছে, তাদের র্যাবের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, যারা এমন অপতৎপরতায় লিপ্ত আছেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং তাদের আমরা গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় সোপর্দ করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল দেশে এবং বিদেশে বসে আমাদের দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য চক্রান্ত করে যাচ্ছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য দেয়ার মাধ্যমে ভিডিও কনটেন্ট ছড়িয়ে দিয়ে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করছে।
‘পাশাপাশি অতীতের বিভিন্ন সময়ের ভিডিও কনটেন্টগুলো সাম্প্রতিক বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ভিডিও হিসেবে তারা প্রচার করার চেষ্টা করছে।’
বুধবার র্যাব সদর দপ্তরে এক অনানুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন। ছবি: নিউজবাংলা
ফেসবুকে ধর্মীয় উসকানিমূলক, মিথ্যা ও গুজব ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক রুমা সরকারকে আটক করে র্যাব। রাজধানীর বেইলি রোডের বাসা থেকে বুধবার সকালে তাকে আটক করা হয়।
দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, রাজধানী পল্লবীর সাহিনুদ্দীন হত্যাকাণ্ডের ভিডিও নোয়াখালীর যতন সাহা হত্যাকাণ্ডের বলে অপপ্রচারের অভিযোগে রুমা সরকারকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব সদর দপ্তরে নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশে একটি আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার ভিডিও সম্প্রতি দেশের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত জায়গায় আগুন দেয়া হয়েছিল, তার ভিডিও হিসেবে প্রচারের অপচেষ্টা করেছে। এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য ও এ ধরনের অপপ্রচার যারা চালাচ্ছে, এদের ব্যাপারে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র্যাব সোচ্চার রয়েছে।’
এ-সংক্রান্ত অভিযোগে যারা সরাসরি জড়িত, যারা বিভিন্ন মন্দিরে হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, যারা এ ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া ভিডিও কন্টেন্ট আপলোড করেছে, শেয়ার করেছে এবং বিভিন্ন ধরনের অযাচিত মন্তব্য করেছে, যারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যত্যয় করেছে, ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছি।
‘এ-সংক্রান্ত যারা হোতা, পাশাপাশি পেছন থেকে ইন্ধন দিয়েছে এ রকম প্রায় ২২ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি।’
অসৎ উদ্দেশে যারা এসব কন্টেন্ট ছড়িয়ে দিচ্ছে, তাদের সতর্ক করে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘একটি চক্র জেনেশুনে এসব সম্প্রচার করছে। আরেকটি চক্র নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ ধরনের ভিডিও কনটেন্ট ছড়িয়ে দিচ্ছে। এসব পেজের বেশ কিছু অ্যাডমিনকে আমরা ইতিমধ্যে শনাক্ত করেছি। যারা এ-সংক্রান্ত লাইক শেয়ার করছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, তাদের ইতিমধ্যে শনাক্ত করেছি। তাদের ব্যাপারে আমাদের অভিযান চলছে।’
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘গতকাল মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, আমরা কুমিল্লার ঘটনার যে হোতা তার অনেক কাছাকাছি আছি। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমরা এ ব্যাপারেও কাজ করছি। এই ধরনের গুজব ছড়ানোর সঙ্গে যারাই জড়িত হচ্ছে সে যেই হোক , যে শ্রেণির লোক হোক তার বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।’
গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশবাসীকে অনুরোধ করে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আপনারা অবশ্যই যা করবেন জেনে শুনে করবেন। না জেনে না বুঝে আপনারা কোন ধরনের কমেন্ট ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করবেন না। কারণ আপনার একটি শেয়ার থেকে হয়তো অনেক মানুষ বিভ্রান্ত হবে এবং অনেক ভুল তথ্য অনেক জায়গায় ছড়িয়ে যাবে।’