কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই একসঙ্গে ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রথম দিন আজ।
রোববার দেশজুড়ে ২৬টি কেন্দ্রে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে। এই ইউনিটে আবেদন করেছিলেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৯০১ শিক্ষার্থী।
এক ঘণ্টার এই ভর্তি পরীক্ষা দুপুর ১২টায় শুরু হয়ে শেষ হয় ১টায়। তবে বিভিন্ন কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতির হারে দেখা যায় বৈচিত্র্য।
বরিশালে অনুপস্থিত ২২৪ পরীক্ষার্থী
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হলেও এদিন অনুপস্থিত ছিলেন ২২৪ পরীক্ষার্থী।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ‘এ’ ইউনিটে ৩ হাজার ৪৫৮ পরীক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৩ হাজার ২৩৪ জন। উপস্থিতির হার ৯৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি গুচ্ছে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একটি পরীক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন। এতে শিক্ষার্থীদের আর্থিক ও মানসিক কষ্ট লাঘব হবে। আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষার সব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ‘এ’ ইউনিটে উপস্থিতির হার ৯৩ দশমিক ৫ শতাংশ
সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামীতে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি গুচ্ছে পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব আরও ত্বরান্বিত হবে।’
দিনাজপুরে উপস্থিতির হার ৯৮ শতাংশ
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ছিল ৯৮ শতাংশ।
হাবিপ্রবি কেন্দ্রের পরীক্ষায় অংশ নেন ৭ হাজার ২৫ শিক্ষার্থী।
পরীক্ষা শুরুর পর বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম কামরুজ্জামান।
পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আজ একটি ইতিহাস রচিত হলো। গুচ্ছ পদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকের পরীক্ষায় উপস্থিতির হার অনেক বেশি, ৯৮ শতাংশের মতো। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা দিয়েছেন।
এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য উপাচার্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর, প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
কুবিতে অনুপস্থিত ১১১ জন
যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) কেন্দ্রে প্রথম দিন স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের গুচ্ছ পরীক্ষা সম্পন্ন হলেও অনুপস্থিত ছিলেন ১১১ পরীক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ হাজার ৫০৫ পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণের কথা থাকলেও পরীক্ষা দিয়েছেন ২ হাজার ৩৯৪ জন। উপস্থিতির হার প্রায় ৯৬ শতাংশ।
পরীক্ষা শেষে সাকিব আল হাসান নামের এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘পরীক্ষা আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে। হলে কোনো সমস্যা হয়নি। স্যাররা যথেষ্ট আন্তরিক ছিলেন।’
ফারহানা হোসেন সাথী নামের আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘পরীক্ষার প্রশ্ন কিছুটা কঠিন হয়েছে। এ ছাড়া পরীক্ষা দিতে কোনো সমস্যা হয় নাই। মূল গেট থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন, রোভার, বিএনসিসি, ছাত্রলীগের কাছ থেকে কক্ষ খুঁজে পেতে সহযোগিতা পেয়েছি।’
আব্দুস সাত্তার নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়ে ভালোই হয়েছে। বাড়ির কাছেই পরীক্ষা দিতে পেরেছে ছেলেমেয়েরা। আমাদের ভোগান্তি অনেকখানি কমেছে, পাশাপাশি আর্থিক দিকটাও সাশ্রয় হয়েছে। আমরা চাই সামনেও যেন এ ধারা অব্যাহত থাকে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, “সবার সার্বিক সহযোগিতায় আমরা ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে পেরেছি। সামনেও এ রকম সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।”
গুচ্ছ পদ্ধতিতে বি ও সি ইউনিটে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবে ৪ হাজার ৫২১ পরীক্ষার্থী।
কুষ্টিয়ায় পরীক্ষার্থী উপস্থিত ৯৮ শতাংশ
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শেষ হয়েছে ‘এ’ ইউনিটের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ অফিসের উপরেজিস্ট্রার সাহেদ হাসান নিউজবাংলাকে জানান, পরীক্ষা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি ভবনের ১১৪টি কক্ষে। ৭ হাজার ৮৫ পরীক্ষার্থীর ৯৮ ভাগই উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রে।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৮ শতাংশ পরীক্ষার্থীই উপস্থিত ছিলেন
তিনি আরও জানান, কোনো পরীক্ষার্থীকেই মাস্ক ছাড়া কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। পরীক্ষা উপলক্ষে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ক্যাম্পাসে টহল দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দিতে ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় ফটকে হেল্প ডেস্ক বসানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সালাম নিউজবাংলাকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ নভেম্বর ‘ডি’ ইউনিটে ধর্মতত্ত্ব ও ইসলামী শিক্ষা বিভাগের পরীক্ষা হবে। দেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এ অনুষদ না থাকায় স্বতন্ত্রভাবে পরীক্ষা হবে।”
ময়মনসিংহে পরীক্ষা দিয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা
ময়মনসিংহে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি)। এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হওয়ায় খুশি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
পরীক্ষার সময় বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফুল হাসান।
পরীক্ষা দিতে আসা নেত্রকোণা সদরের জান্নাতুল ফেরদৌস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি নেত্রকোণা সরকারি কলেজে পড়াশোনা করেছি। ভর্তিযুদ্ধে টিকে থাকতে গত কয়েক মাস ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করেছি। এই কেন্দ্রে (বাকৃবি) পরীক্ষা হওয়ায় বাসা থেকে ভোরে রওনা হয়েছি। টাকা ও পরিশ্রম দুটোই কম লেগেছে এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হওয়ায়।’
নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার এক অভিভাবক নূর জাহিদ বলেন, ‘কেন্দ্র পর্যন্ত আসতে যানজটসহ কোনো ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। বিভাগীয় শহরের এই কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় নিশ্চিন্তে আসতে পেরেছি। প্রশাসনের কঠোর মনিটরিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অপেক্ষায় থাকা সব অভিভাবকই স্বাস্থ্যবিধি মেনেছেন।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফুল হাসান
নূর জাহিদের মেয়ে সালমা আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরীক্ষা খুব কঠিন কিংবা খুব সহজও হয়নি। তবে আমার পরীক্ষা ভালো হয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হলে পরীক্ষা দিতে পেরেছি।’
কিশোরগঞ্জ থেকে আসা তৌফিকুর রহমান ও মজিবুর রহমান নামে দুই শিক্ষার্থী পরীক্ষা শেষে নিউজবাংলাকে জানান, অন্য বিষয়ের চেয়ে গণিত প্রশ্ন কঠিন হয়েছে। কিছু উত্তর ভুল হলেও ভর্তিযুদ্ধে টিকবেন বলে আশাবাদী তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ হাজার ৫৩৯ পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও পরীক্ষা দেন ১০ হাজার ৮০১ জন। উপস্থিতির হার ৯৩ দশমিক ৬ শতাংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনও প্রশ্ন ফাঁসের নজির নেই। আজকেও কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফুল হাসান বলেন, ‘কেন্দ্রের সব কক্ষে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা দিয়েছে।’
বশেমুরবিপ্রবিতে উপস্থিতির হার ৮৫ শতাংশ
গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ‘এ’ ইউনিটের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬ হাজার ৯১২ পরীক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৫ হাজার ৮৯২ জন। উপস্থিতির হার ৮৫ শতাংশ।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে ২৪ অক্টোবর ‘বি’ ইউনিট এবং ১ নভেম্বর ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষা হবে।
দেশের ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবারই প্রথম গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। এতে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ মিলিয়ে আসন রয়েছে ২২ হাজার ১৩টি। এর বিপরীতে আবেদন করেছেন ২ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৫ শিক্ষার্থী।
এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ১ লাখ ৩১ হাজার ৯০১ জন, ‘বি’ ইউনিটে ৬৭ হাজার ১১৭ জন এবং ‘সি’ ইউনিটে ৩৩ হাজার ৪৩৭ শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন বরিশালের তন্ময় তপু, দিনাজপুরের কুরবান আলী, কুষ্টিয়ার জাহিদুজ্জামান, ময়মনসিংহের কামরুজ্জামান মিন্টু এবং গোপালগঞ্জের মোজাম্মেল হোসেন মুন্না