নিত্যপণ্যের যে ঊর্ধ্বগতি, তার পেছনে কারসাজি রয়েছে বলে মনে করে খোদ ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই।
বিশেষ করে পেঁয়াজের দাম নিয়ে যা ঘটেছে, তার উল্লেখ করে সংগঠনের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, সরকার আমদানি শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমে যাওয়াই প্রমাণ করে যে, এই পণ্যের যে বাজারদর ছিল সেটি স্বাভাবিক ছিল না।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারে কারসাজিতে জড়িত অল্প কয়েকজন ব্যবসায়ী। অর্থনীতি, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য দূরীকরণে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখার পরেও, কয়েকজনের জন্য পুরো ব্যবসায়ী সমাজের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে।
রোববার রাজধানীর এফবিসিসিআই কার্যালয়ে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মজুদ, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি’ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ী নেতারা।
এফবিসিসিআই কার্যালয়ে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মজুদ, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি’ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ী নেতারা। ছবি: নিউজবাংলা
গত দুই বছর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর বাংলাদেশে পণ্যটির দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। ২০১৯ সালে কেজি প্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হয় দুইশ থেকে আড়াইশ টাকায়। ২০২০ সালে দাম অতটা না বাড়লেও কেজিতে ১২০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
এবারও অক্টোবরের শুরুতে এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। ভারত আবার রপ্তানি বন্ধ করে দেবে, এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর এই ঘটনা ঘটে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে পরে নিশ্চিত করা হয় এবার নিষেধাজ্ঞা আসছে না আর এরপর পণ্যটির দাম কমতে শুরু করে।
পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ওপর আলোচনা করতে গিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম কমাতে সরকার দ্রুত আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের কয়েক ঘন্টার মধ্যে পণ্যটির দাম কমেছে। হ্রাসকৃত হারে শুল্ক পরিশোধ করা পেঁয়াজ বাজারে আসার আগে দাম কমে যাওয়া স্বাভাবিক নয়। এই ঘটনাই বলে দেয় পেঁয়াজের বাজারে অস্বাভাবিক কোনো বিষয় রয়েছে।’
নিত্যপণ্য বিক্রিতে অস্বাভাবিক মুনাফা হচ্ছে-এই অভিযোগও করেন জসিম উদ্দিন। বলেন, ‘শ্যামবাজারে এক আড়ত থেকে আরেক আড়তে ভিন্ন ভিন্ন দামে পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়। আবার খুচরা বাজারেও এক বাজার থেকে আরেক বাজারে দামের পার্থক্য কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এই অবস্থা অস্বাভাবিক।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ব্যবসা করব, কিন্তু এমন কিছু করব না, যাতে পুরো ব্যবসায়ী সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
আলোচনায় পেঁয়াজের আড়তদার ও আমদানিকারকরা দাম বৃদ্ধি ও কমার পেছনে নানা যুক্তি দেন। পেঁয়াজ পরিবহনে চাঁদাবাজি, ভারতে বৃষ্টি এবং সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল দেয়ার কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বেড়েছে।
এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ‘দোকানিদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল নেয়ার কাজ মালিক সমিতির নয়। এ দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির।’
এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন এফবিসিসিআই সভাপতি। ব্যবসায়ীদের এমন আরও কোনো সমস্যা থাকলে তা এফবিসিসিআইকে জানানোর আহ্বানও জানান।
এক সপ্তাহের মধ্যে এফবিসিসিআই'র স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যক্রম শুরু হবে জানিয়ে সভাপতি বলেন, ‘কমিটিগুলো ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধানে নিরলসভাবে কাজ করবে।’
সংগঠনের সহ-সভাপতি এম এ মোমেন, আমিনুল হক শামীম, হাবিব উল্লাহ ডন, পরিচালক ও সাবেক সহ-সভাপতি রেজাউল করিম রেজনুসহ অন্যান্য পরিচালক এবং এফবিসিসিআইয়ের প্রধান নির্বার্হী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহফুজুল হকও এতে বক্তব্য রাখেন।
চাল ও পেঁয়াজের আমদানিকারক, আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধি ও রাজধানীর বিভিন্ন বাজার সমিতির ব্যবসায়ী নেতারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।