পূজামণ্ডপে হামলার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে এসব হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আয়োজকরা। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় না আনা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
বাগেরহাট
জেলা হিন্দু মহাজোটের আয়োজনে বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সামনে শনিবার দুপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন বাগেরহাট জেলা হিন্দু ছাত্র মহাজোটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নয়ন পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর ঘরামী, জেলা জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোটের সভাপতি মনোরঞ্জন হালদার ও কোষাধ্যক্ষ বাপন মজুমদার।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। পূজামণ্ডপে ভাঙচুর ও দোকানপাটে লুটপাট হয়েছে। দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
বরগুনা
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বরগুনা জেলা কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা হয়েছে দক্ষিণের জেলাটিতে।
বরগুনা প্রেস ক্লাব চত্বরে শনিবার বিকেল ৫টার দিকে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বরগুনা জেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুখরঞ্জন শীল।
তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় সংঘাত সৃষ্টিকারীরা কখনোই এ দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনেনি। তারা দেশ ও জাতির চিরশত্রু। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
সমাবেশে পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সিকদার শিবু, শংকর দেবনাথ, সুখরঞ্জন রায়, শিপন শীল ফ্যালা, সমরেশ কর্মকার, অমিত অধিকারী, বিধান রায় ও খোকন কর্মকার উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠি
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ঝালকাঠি জেলা কমিটির আহ্বানে শনিবার বিকেল ৫টায় মদন মোহন আখড়াবাড়ি মন্দির প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের ঝালকাঠি জেলা সভাপতি অসীম কুমার সাহার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা রাখেন সংগঠনের জেলা শাখার সহসভাপতি নির্মল চন্দ্র দে তরণী, সাধারণ সম্পাদক তরুণ কর্মকার, সহসাধারণ সম্পাদক অলোক সাহা, সংগঠনের সদর উপজেলা শাখার সভাপতি দিলীপ হালদার, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জেলা শাখার সভাপতি অমল দাস ও বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ ঝালকাঠি জেলা শাখার সভাপতি কার্তিক দত্ত।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘গুজব ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে যে হামলা হয়েছে, তা মেনে নেয়া যায় না। এই দেশের মাটিতেই এসব ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তাদের শাস্তির আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।’
টাঙ্গাইল
পূজামণ্ডপ ও বাড়িঘরে হামলার প্রতিবাদে শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে কেন্দ্রীয় কালীবাড়ি প্রাঙ্গণে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ টাঙ্গাইল শাখার উদ্যোগে হওয়া সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি সুভাষ চন্দ্র সাহা ও জেলা পূজা উদযাপন সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ গুন ঝন্টু।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে দেশের বিভিন্ন মন্দির, দোকান ও বসতবাড়িতে হামলা চালিয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে সারা দেশে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
নীলফামারী
শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে শনিবার সকালে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট নীলফামারী জেলার উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি জুয়েল রায়ের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক বিপুল চন্দ্র রায়, সদর উপজেলা শাখার সভাপতি জয়ন্ত কুমার রায় ও সাধারণ সম্পাদক শান্ত কুমার রায়।
বক্তারা অবিলম্বে প্রতিমা ভাঙচুর ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
শরীয়তপুর
পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় শনিবার রাত ৮টার দিকে নড়িয়ার ডিঙ্গামানিক গ্রামে রামঠাকুরের জন্মস্থান শ্রীশ্রী সত্যনারায়নের সেবা মন্দিরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে সভাপতিত্ব করেন মন্দিরের নির্বাহী কমিটির জেষ্ঠ্য সদস্য রাজ রথীন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন শ্রী শ্রী সত্যনারায়নের সেবা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক মুকুল চন্দ্র রায়, সদস্য শিবু পাল, শ্যাম কুমার ঘোষ, মিঠুন চক্রবর্তী, গৌতম প্রসাদ চক্রবর্তী, গোবিন্দ পাল ও বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদের শরীয়তপুর জেলা কমিটির সদস্য সচিব রুপক চক্রবর্তী।
মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক মুকুল চন্দ্র রায় বলেন, ‘ ১৯৭১ সালেও শ্রী শ্রী রামঠাকুরের সমাধি মন্দিরে হামলা হয়নি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এমন বাংলাদেশ দেখে আমরা শঙ্কিত-আতঙ্কিত।
বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদের শরীয়তপুরের সদস্য সচিব রুপক চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা নতুন প্রজন্ম। সম্প্রতির বন্ধনে সবাই একত্রে থাকতে চাই। যারা এ ধরণের কাজ করে সম্প্রীতিতে আঘাত হেনেছেন, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
সিলেট
দুর্গাপূজায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, পূজামণ্ডপ ও বাড়িঘরে হামলা-লুটপাটের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে সংক্ষুব্দ নাগরিক আন্দোলন ও পূজা উদযাপন পরিষদ।
শনিবার বিকেলে নগরের রিকাবীবাজার এলাকার কবি নজরুল অডিটরিয়ামের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচীর আয়োজন করে সংক্ষুব্দ নাগরিক আন্দোলন।একই সময় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটি সিলেট জেলা শাখা।
কর্মসূচী থেকে তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও দাবি জানান বক্তারা।