সব অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে কৈলাসে স্বামী মহাদেবের কাছে ফিরে গেলেন দেবী দুর্গা। শুক্রবার বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
বিকেল ৪টা থেকে পুরান ঢাকার সদরঘাটের ওয়াইজঘাটে রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির থেকে প্রতিমা আসতে শুরু করে। একে একে নিয়ম মেনে বিসর্জন দেয়া হয় বুড়িগঙ্গায়। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকায় নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঘাটের চারপাশে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ জনসাধারণ ভিড় নিয়ন্ত্রণ করে।
লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পূজার আগে থেকে মণ্ডপগুলো ঘিরে আমাদের কঠোর নিরাপত্তা ছিল। আজকেও আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। যেখানে যে ধরনের নিরাপত্তা দরকার, সেই প্রস্তুতিই আমরা নিয়েছি।’
কড়া নিরাপত্তায় রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির থেকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
সোমবার ছিল ষষ্ঠী। এইদিন বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুর্গতিনাশিনীর বন্দনা। এরপর মঙ্গলবার মহাসপ্তমী, বুধবার মহাষ্টমী, বৃহস্পতিবার মহানবমী ও শেষ দিন শুক্রবার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে ধরনী থেকে সকল অশুভ শক্তি বিনাশ করে কৈলাশে ফিরে গেলেন দেবী।
হিন্দু ধর্মালম্বীদের মতে, ‘বিজয়া দশমী’কথাটির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বাঙালির আবেগ ও মনখারাপ মিশ্রিত একটি অনুভূতি। দশমী এলেই বাঙালির মনে আসে মায়ের ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা। সাধারণত দুর্গাপূজার অন্ত হয় দশমীর মাধ্যমেই। এই দিনেই মা দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও একটা বছর।
দেবীর বিদায়বেলায় কষ্ট ভুলে হাসিমুখে বিদায় জানানোর জন্য সিঁদুর খেলা হয়। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
দশমীর দিন সকালে দেবীর পূজা শেষে তাকে দর্পন বিসর্জন দেয়া হয়। এরপর শুরু হয় সিঁদুর খেলা। ভক্তরা একে অপরের মুখে মেখে দেয় লাল সিঁদুর। দেবীর বিদায়বেলায় কষ্ট ভুলে হাসিমুখে বিদায় জানানোর জন্য এ সিঁদুর খেলা হয়। বিদায় বেলার আগে দেবীকে পান ও মিষ্টি মুখ করানো হয়। এটি হিন্দু সংস্কৃতির একটি অংশ। এরপর বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ঘাটে। সেখানে ধুপ দিয়ে আরতি করা হয়। এরপর নদীতে সাত পাকে দেবীকে জলে বিসর্জন দেয়া হয়।
রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির থেকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
পঞ্জিকা অনুযায়ী এবার দেবী মর্ত্যে এসেছেন ঘোড়ায় চেপে। পুরাণ অনুযায়ী, দুর্গা ঘোড়ার পিঠে চড়ে এলে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, ঝড়, রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। বিজয়া দশমীতে দেবী মর্ত্য ছাড়ছেন দোলায় চড়ে। দোলায় গমনেও বাড়বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্বিপাক।
পুরাণ অনুযায়ী, ব্রহ্মার বর পেয়ে মানুষ ও দেবতাদের অজেয় হয়ে উঠেছিলেন মহিষাসুর। ফলে তাকে পরাজিত করার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর যে মহামায়ারূপী নারী শক্তি তৈরি করেন, তিনিই দেবী দুর্গা। দশভূজা দুর্গা টানা নয় দিন যুদ্ধ করে মহিষাসুরকে বধ করেন।
শুক্রবার বিকেলে পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাট ও মোহাম্মদপুরের বসিলায় নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত ধর্মদাশ চট্টোপাধ্যায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহিষাসুরের সঙ্গে নয় দিন নয় রাত যুদ্ধের পর দশম দিনে জয়ী হন দেবী দুর্গা। এ জন্যই বিজয়া দশমী। যুদ্ধ জয়ের আনন্দে সামিল হতে এই দিন হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাই মেতে ওঠে সিঁদুর খেলায়।’