সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে শাহ আরেফিন টিলা থেকে অবৈধভাবে পাথর লুটের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সিলেট জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে বুধবার মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন।
দুদকের পক্ষ থেকে প্রায় ২৫১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার পাথর লুটের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে টিলার কোয়ারির ইজারাদার মেসার্স বশির কোম্পানির মালিক মোহাম্মদ আলীকে। তিনি উপজেলার কাঁঠালবাড়ী এলাকার বাসিন্দা।
কোম্পানীগঞ্জে ১৩৭ দশমিক ৫০ একর আয়তনের শাহ আরেফিন টিলার নিচে রয়েছে বড় বড় পাথর খণ্ড। এসব পাথর উত্তোলন করতে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে সরকারি খাস খতিয়ানের বিশাল এই টিলা। লালচে, বাদামি ও আঠালো মাটির এই টিলার পুরোটা খুঁড়ে তৈরি করা হয়েছে অসংখ্য গর্ত। ফলে টিলার অস্তিত্ব এখন সংকটে।
টিলার মাটি কেটে গর্ত খুঁড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে প্রায়ই মাটি ধসে এখানে শ্রমিকের মৃত্যু হয়। গত পাঁচ বছরে এই টিলা ধসে অন্তত ২৫ জন পাথর শ্রমিক মারা গেছেন।
শাহ আরেফিন টিলা ধ্বংস করে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাথর উত্তোলনের বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে উঠে আসে গণমাধ্যমে। ২০১৬ সালে এই টিলা থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়। তবু ঠেকানো যায়নি অবৈধ পাথর উত্তোলন।
মামলা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের সিলেট জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ২০০৪ সালের এপ্রিলে শাহ আরেফিন টিলার ৬১ একর ভূমির পাথর তোলার জন্য ১৩ শর্তে মোহাম্মদ আলীকে ইজারা দেয়া হয়। তবে ইজারা নেয়ার পর শর্ত ভঙ্গ করে পাথর তোলা শুরু করেন তিনি। এতে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে টিলা থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দেয় খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো।
তবে মোহাম্মদ আলী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাথর তোলা অব্যাহত রাখেন। ৬১ একর ভূমি ইজারা নিলেও তিনি টিলার পুরো ১৩৭ একর জায়গা থেকে অবৈধভাবে পাথর তোলা শুরু করেন। পাথর তোলার আগে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা নেননি ইজারাদার।
এসব অভিযোগ এনে মামলার এজাহারে বলা হয়, অবৈধভাবে ৬২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫০ ঘনফুট সরকারি পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করে ২৫১ কোটি ৫৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা লুট করেছেন মোহাম্মদ আলী।
২০১৭ সালে পাথর তোলার সময় একসঙ্গে পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। সে সময়ও এ টিলায় অবৈধ কার্যক্রমের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। সে সময় জেলা প্রশাসনের তদন্তেও ইজারাদারের অনিয়মের প্রমাণ মেলে।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৬১ একর ভূমি লিজ নিয়ে ১৩৭ একরের পুরো টিলাটি ইজারাদার ধ্বংস করে দিয়েছেন।
সিলেটের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাফায়াৎ মুহম্মদ শাহেদুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে টিলা ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত ৪৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়।
টিলা কেটে পাথর উত্তোলনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শাহ আরেফিন খানকা শরিফের খাদেম এবং ইজারাদার জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।