ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছেন নাসিরনগর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজন। চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি নিয়ে উপজেলাজুড়ে সমালোচনা চলছে। এ ছাড়া মন্দির ভাঙচুর মামলার আসামি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
মনোনয়ন পাওয়া যে তিন প্রার্থীকে নিয়ে আলোচনা চলছে তারা হলেন আবুল হাসেম, আক্তার মিয়া ও দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি।
এর মধ্যে সদরে হাসেম, পূর্বভাগে আক্তার এবং হরিপুর ইউনিয়ন থেকে আতিকুর প্রার্থী হয়েছেন।
মঙ্গলবার ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তাদের মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আগামী ১১ নভেম্বর নাসিরনগর উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন। ওই তিনজন ছাড়া যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তারা হলেন গুনিয়াউক ইউনিয়নে জিতু মিয়া, ভলাকুট ইউনিয়নে রুবেল মিয়া, গোকর্ণ ইউনিয়নে ছোয়াব আহমেদ, কুন্ডা ইউনিয়নে ওয়াছ আলী, বুড়িশ্বর ইউনিয়নে এ টি এম মোজাম্মেল হক সরকার, ধরমন্ডল ইউনিয়নে বাহার উদ্দিন চৌধুরী, চাপরতলা ইউনিয়ন মনসুর আলী ভূঁইয়া, চাতলপাড় ইউনিয়নে আবদুল আহাদ, ফান্দাউক ইউনিয়নে ফারুকুজ্জামান ফারুক, গোয়ালনগর ইউনিয়নে কিরণ মিয়া।
২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবরে ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবি পোস্ট করার অভিযোগকে কেন্দ্র করে নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে দুই শতাধিক হিন্দু বাড়িঘর ও ১৫টি মন্দিরে হামলা চালানো হয়। পিটিয়ে আহত করা হয় অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষকে।
এ ঘটনায় আদালতে পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্রে ২২৮ আসামির মধ্যে আওয়ামী লীগের ৩০-৩৫ জন এবং বিএনপির ৬০-৭০ জন নেতা-কর্মীর নাম আসে। সেখানে উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে হাসেম, আক্তার এবং আতিকুরের নাম রয়েছে।
এ ঘটনায় হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ১৩ কিলোমিটার দূরের হরিপুর ইউনিয়ন থেকে ১৪ থেকে থেকে ১৫টি ট্রাক ভরে মানুষ আসার পর হামলা হয় নাসিরনগরের হিন্দুপল্লিতে। যেসব ট্রাকে চড়ে হামলাকারীরা এসেছিল সেগুলোর ব্যবস্থা ও অর্থের জোগান দেন আঁখি। তবে তার দাবি, তিনি বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েছিলেন।
চার বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুপল্লিতে হামলার দৃশ্য। ছবি: নিউজবাংলা
স্থানীয়রা জানান, হামলার আগের দিন রসরাজের নামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ছড়ালে এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। এ সময় চেয়ারম্যান আঁখি হিন্দুপ্রধান ওই গ্রামের বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে যেতে বলেন। তার কথা শুনে অনেক পুরুষ আশপাশের এলাকায় গিয়ে হামলা থেকে রক্ষা পেলেও তাদের বাড়িঘর ছাড় পায়নি। এখন তিনি চেয়ারম্যার প্রার্থী।
এ ছাড়া অপর দুজন সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসেম ও মো. আক্তার মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় সে সময়।
সমালোচনা প্রসঙ্গে হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার আমাদের বলেছিলেন, প্রত্যেক চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়ন তাদের আমলনামার ভিত্তিতে দেয়া হবে। আমি মনে করি আমার আমলনামার ভিত্তিতে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এবারের নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারব।’
নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল হাসেমের সঙ্গে কথা বলতে তার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। বক্তব্য পাওয়া যায়নি আক্তার মিয়ারও।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী একটি দল। তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী সাম্প্রদায়িকতার জন্য সামাজিকভাবে চিহ্নিত হয়েছে। তাদের মনোনয়ন-সম্পর্কিত আমলনামায় চার্জশিটভুক্ত আসামি হিসেবে উল্লেখ করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের আবার মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আমার ধারণা, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে তথ্য গোপন করা হয়েছে। যার কারণে তাদের নাম আবারও এসেছে।’