ফরিদপুরের রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে একটু পর পর চলছে উলুধ্বনি। কেউ কেউ বাজাচ্ছেন শঙ্খ।
নানা রঙের পোশাকে বুধবার সকাল থেকেই ভক্তরা জড়ো হতে শুরু করেছেন মন্দিরে। পূজামন্ডপকেও সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। ভক্তরা অপেক্ষা করছেন বিশেষ একজনের জন্য।
ঘড়িতে তখন ১০টা ৪৫ মিনিট। হই হই করে ওঠেন সবাই। মন্দিরে এসে পৌঁছেছে সাত বছর বয়সী উদিতা মুখোপাধ্যায়। নার্সারির ছাত্রী উদিতা ফরিদপুর শহরের শোভারামপুরের মিশর মুখোপাধ্যায় ও যুক্তা মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে।
উদিতাকে বসানো হয় পূজার মঞ্চে। বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার তৃতীয় দিন করা হয় কুমারী পূজা।
নবম বারের মতো ফরিদপুরের রামকৃষ্ণ মিশনে হয়েছে কুমারী পূজা। পূজা পরিচালনা করেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি, মন্ত্রপাঠ, ঘণ্টা ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো মন্দির এলাকা।
প্রসাদের জন্য লাইনে দাঁড়ানো তরুণী অর্চনা সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আনন্দ করছি। মূলত নিজেদের ও পৃথিবীর শান্তি কামনায় আমরা পূজা-অর্চনা করি।’
পূজা দিতে আসা চল্লিশ বছর বয়সী সাধনা চৌধুরী জানান, এবারই তিনি প্রথম এখানে এসেছেন। অনেক দেরিতে হলেও এই মন্দিরে কুমারী পূজায় আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা অরবিন্দু দাস বলেন, ‘দুর্গাপূজায় যে প্রতিমা পূজা করি সেটারই বাস্তব রূপ কুমারী পূজা। সমস্ত নারীর মধ্যেই দেবী মা রয়েছেন। কুমারী পূজার মাধ্যমে সমস্ত নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আসে, নিজেদের আধ্যাত্মিক উন্নতি হয়, সামাজিক উন্নতি হয়।
‘সব স্ত্রীলোক ভগবতির এক একটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতির বেশি প্রকাশ। তাই শিশুকে দেবী হিসেবে বিবেচনা করে কুমারী পূজা করা হয়।’
রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের সম্পাদক স্বামী সুরভরানন্দ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে কুমারী পূজা করা হয়েছে। ১৬টি উপকরণ দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস এই পাঁচ উপকরণে দেয়া হয় কুমারী মায়ের পূজা।
‘শাস্ত্রমতে দুর্গাপূজার মহা অষ্টমীর দিনে এক থেকে ষোলো বছরের কোনো অবিবাহিত কুমারী কন্যাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। এ বছর উদিতাকে মালিনীরূপে পূজা করা হয়েছে।’
রাজশাহী মহানগরীর সাগরপাড়ার ত্রিনয়নী সংঘ পূজা মন্ডপেও হয়েছে কুমারী পূজা।
রাজশাহী মহানগরীর সাগরপাড়ার ত্রিনয়নী সংঘ পূজা মন্ডপের কুমারী পূজা
পূজায় দেবীর আসনে বসানো হয় সাগরপাড়ার ছয় বছর বয়সী ইন্দুপ্রভা দাস তিতলিকে। তিতলি নগরীর ইউনিক পাবলিক স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী।
পূজা শুরুর আগে তিতলিকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে নানা অলঙ্কারে সাজানো হয়। তারপর নেয়া হয় মন্দিরে।
পূজা পরিচালনা করেন বিধান কুমার লাহিড়ী। ভক্তদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয় ফুল ও বেলপাতা।
ত্রিনয়নী সংঘের সাধারণ সম্পাদক অভি কুমার দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার ১৯তম কুমারী পূজা হলো। গত বছর করোনার কারণে মানুষের আগমন কম থাকলেও এবার প্রচুর ভক্ত এসেছিলেন। নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের সব রকম সহায়তা দেয়া হয়েছে।’