বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৭৩ বছরেও স্বাদে অনন্য গাইবান্ধার রসমঞ্জরী

  •    
  • ১৩ অক্টোবর, ২০২১ ১২:২৫

১৯৪৮ সালে শহরের সার্কুলার রোডের রমেশ সুইটসের কর্ণধার রমেশ চন্দ্র ঘোষ জেলায় সর্বপ্রথম রসমঞ্জরী তৈরি করেন। সে সময় ভারতের উড়িষ্যা থেকে কারিগর এনে তিনি এই মিষ্টি তৈরি করতেন। পরবর্তী এক দশকের মধ্যেই রসমঞ্জরীর স্বাদ জেলার গণ্ডি পেরিয়ে দেশব্যাপী মানুষকে আকৃষ্ট করে।

গোল গোল নরম মিষ্টি; ঘন লালচে দুধে জমে যেন ক্ষীর। এই মিষ্টি মুখে দিলেই মিলবে অদ্ভুত প্রশান্তি। রস আর অনন্য স্বাদের জন্য এই মিষ্টির নাম রসমঞ্জরী। এটি গাইবান্ধার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি, যা দেশ পেরিয়ে এখন বিদেশেও যাচ্ছে।

দুধ, ছানা, ক্ষীর ও চিনির মিশ্রণে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ছোট ছোট গোলাকার ছানায় তৈরি মিষ্টিতে ব্যবহার করা হয় দুধের ঘন রস।

গাইবান্ধার ছোট বড় প্রায় সব মিষ্টির দোকানেই এখন রসমঞ্জরী বিক্রি হলেও শুরুটা হয় রমেশ ঘোষের হাত ধরে। ১৯৪৮ সালে শহরের সার্কুলার রোডের রমেশ সুইটসের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ জেলায় সর্বপ্রথম রসমঞ্জরী তৈরি করেন।

১৯৪৮ সালে শহরের সার্কুলার রোডের রমেশ সুইটসের কর্ণধার রমেশ চন্দ্র ঘোষ জেলায় সর্বপ্রথম রসমঞ্জরী তৈরি করেন।

ওই সময় ভারতের উড়িষ্যা থেকে কারিগর এনে তিনি এই মিষ্টি তৈরি করতেন। পরবর্তী এক দশকের মধ্যেই রসমঞ্জরীর স্বাদ জেলার গণ্ডি পেরিয়ে দেশব্যাপী মানুষকে আকৃষ্ট করে।

রমেষ ঘোষের মৃত্যু হয়েছে বেশ আগে। এখন তার ব্যবসা ধরে রেখেছেন স্বজনরা। তবে এখন রসমঞ্জরীর জন্য বিখ্যাত গাইবান্ধা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও নাড়ু মিষ্টান্ন ভাণ্ডারসহ একাধিক দোকান। প্রতিদিন এক একটি দোকানে তৈরি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি রসমঞ্জরী। এর একটি অংশ রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।

এক কেজি রসমঞ্জরী তৈরিতে ২৮০ টাকা খরচ হয় দোকানিদের। আর তারা প্রতি কেজি বিক্রি করেন ৩২০ টাকায়।

রমেশ ঘোষের দোকান রসমঞ্জুরির পথিকৃৎ হলেও বিক্রিতে খ্যাতি অর্জন করেছে কাচারি বাজারের গাইবান্ধা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। প্রতিদিন ৬০০ কেজির বেশি রসমঞ্জরী তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি।

জেলায় গাইবান্ধা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের দুটি শাখা ও একটি কারখানা রয়েছে। কর্মচারীর সংখ্যা ৪০ জন।

কারখানার প্রধান কারিগর নূর আলম রসমঞ্জরীর প্রস্তুত প্রণালি সম্পর্কে জানান, প্রথমে বিভিন্ন খামারি ছাড়াও মিল্কভিটা কোম্পানির কাছে খাটি দুধ সংগ্রহ করেন তারা। এরপর বড় কড়াইয়ে সেগুলো জ্বাল দিতে হয়। পরে ফুটন্ত দুধ ঠান্ডা করে হালকা গরম অবস্থায় ছানা ছেঁকে বের করতে হয়।

তারপর হালকা আটা, সুজি ও চিনি দিয়ে মিশ্রণটি মেশিনে দিয়ে গোল গোল করে মিষ্টি কাটতে হয়। পরে সেগুলো ফুটন্ত চিনির সিরায় ১০ থেকে ১২ মিনিট সেদ্ধ করে ফের সিরায় নামানো হয়। কিছুক্ষণ ঠান্ডা করার পর তা ক্ষিরে ঢোবালেই ক্ষির-গুটি মিলে তৈরি হয় সুস্বাদু ও রসে টইটুম্বুর রসমঞ্জরী।

নূর আলম বলেন, ‘আমাদের তিনটে দোকানে রসমঞ্জরী ছাড়াও নানা পদের দই-মিষ্টি বিক্রি হয়। ৬০০ কেজির মতো রসমালাই যায়। তা ছাড়া রসগোল্লা, সাগরভোগ, কালোজামসহ বহু পদের মিষ্টি ও দই বিক্রি হয়। কেউ কেউ পাইকারি নিয়েও ঢাকায় বিক্রি করেন।’

২০ কিলোমিটার দূর থেকে নাড়ু মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে রসমঞ্জরীর স্বাদ নিতে গিয়েছিলেন ষাটোর্ধ্ব মজনু মিয়া। তিনি বলেন, ‘গাইবান্ধার যত দোকান আছে; তারমধ্যে নাড়ু বাবুর দোকানের রসমঞ্জরী আমি পছন্দ করি। আজ খেতে এসেছি। যাওয়ার সময় বাড়িতেও নেব।’

রংপুর থেকে পাপুল মিয়া গাইবান্ধায় এসেছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। তার সঙ্গে দেখা হয় গাইবান্ধা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে। তিনি বলেন, ‘গাইবান্ধার রসমঞ্জরীর নাম অনেক শুনেছি। আজ প্রথম খাচ্ছি। আসলেই এর স্বাদে ভিন্নতা আছে।’

গাইবান্ধা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের পরিচালক কাজী নাজমুল হাবিব বলেন, ‘জেলার ঐতিহ্যের কথা চিন্তা করে এই প্রতিষ্ঠানটি করা হয়। শুধু জেলায় নয়; সারা দেশসহ এই রসমঞ্জরী আমরা বিদেশেও পাঠাচ্ছি।'

তিনি আরও বলেন, ‘জেলা ব্যান্ডিং এ রসমঞ্জুরি স্থান পাওয়ায় খুব খুশি হয়েছি। রসমঞ্জরীর সেই স্বাদ ও ঐতিহ্য ধরে রেখে ব্যবসাটা স্বচ্ছতার সঙ্গে চালিয়ে যেতে চাই।’

নাড়ু মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের পরিচালক কানাই ঘোষ বলেন, ‘গাইবান্ধার রসমঞ্জরী প্রসিদ্ধ। এই মিষ্টি দেশের বাহিরেও সুনাম কুড়িয়েছে। এই মিষ্টি খেতে কিংবা কিনতে এসেও মানুষের মাঝে উচ্ছ্বাস-আনন্দ দেখা যায়। অতিথি আপ্যায়ন, বিয়েবাড়িসহ মানুষ এই রসমঞ্জরী বিদেশেও নিয়ে যায়। আমরাও বাপ-দাদার সেই নির্দেশনা মেনেই বাকি জীবন ব্যবসাটাকে ধরে রাখতে চাই।’

এ নিয়ে গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র মতলুবর রহমান বলেন, ‘রসমঞ্জরী গাইবান্ধার ইতিহাস-ঐতিহ্য হওয়ায় জেলা ব্যান্ডিংয়ে এটি স্থান পেয়েছে। এই রসমঞ্জরী বিশ্ব দরবারে গাইবান্ধাকে পরিচিত করতে অনন্য ভূমিকা রেখেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর