দুর্গাপূজার তৃতীয় দিন মহাষ্টমীর আনুষ্ঠানিকতা পালনে প্রস্তুত মণ্ডপগুলো। তবে করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মতো এবারও হচ্ছে না এদিনের মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা।
রাজধানীর প্রধান মন্দির ঢাকেশ্বরীতে বুধবার সকাল ৯টা বাজতেই শুরু দেবীর মহাষ্টমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা।
মহাষ্টমীর সকাল থেকেই রাজধানীর মন্দিরগুলোতে দেখা যায় পুণ্যার্থীদের উপস্থিতি। বেশি ভিড় দেখা যায় ঢাকেশ্বরীতে। মন্দিরের প্রবেশ পথে নারী ও পুরুষের জন্য রয়েছে আলাদা লাইন। সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত ধর্মদাশ চট্টোপাধ্যায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে মহামায়ার ষষ্টক অর্থাৎ ৬ বছরের কুমারী রূপ উমার পূজা করা হয়। এর মাধ্যমে পৃথিবীতে যেন নারীর সম্মান প্রতিষ্ঠিত হয় এ বার্তায়ই দেয়া হয়।’
তবে গত বছরের মতো এবারও হচ্ছে না কুমারী পূজা। মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মন্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহামারির কারণে মহাঅষ্টমীর দিন এবারও হচ্ছে না কুমারী পূজা। গত বছরেরর মতো এবারও রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়নি।’
এর আগে মঙ্গলবার হয় দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীর আনুষ্ঠানিকতা। এদিন মণ্ডপে মণ্ডপে অঞ্জলি নিতে ভিড় জমান পুণ্যার্থীরা।
আগের দিন উলুধ্বনি, শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাক-ঢোলের বাজনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ষষ্ঠীপূজা। এর মাধ্যমে শুরু হয় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ঢাক-ঢোলের বাজনা, কাঁসা, শঙ্খের আওয়াজ এবং ভক্তদের উলুধ্বনিতে দেবী দুর্গাকে পৃথিবীতে স্বাগত জানানো হয়।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার মহানবমীবিহিত পূজা এবং শুক্রবার দশমীবিহিত পূজা সমাপন এবং প্রতিমা বিসর্জন।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার দেবী মর্ত্যে এসেছেন ঘোড়ায় চেপে। পুরাণ অনুযায়ী, দুর্গা ঘোড়ার পিঠে চড়ে এলে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, ঝড়, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। আর ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দেবী মর্ত্য ছাড়বেন দোলায় চড়ে। দোলায় গমনেও বাড়বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্বিপাক।
দুর্গাপূজার মহাষ্টমীর সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দেবীর কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। ছবি: নিউজবাংলাবাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যানুযায়ী, এ বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর সারা দেশে দুর্গাপূজার মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ২১৩টি।
ঢাকা মহানগরে এবার পূজা হবে ২৩৭টি মণ্ডপে। এর মধ্যে সূত্রাপুর থানায় সবচেয়ে বেশি ২৫টি মণ্ডপ, কোতোয়ালি থানায় ২১টি, ওয়ারীতে ১৬টি, গেন্ডারিয়ায় ১৪টি, হাজারীবাগে ১৩টি, তুরাগে ১২টি, বাড্ডায় ১০টি, বনানীতে ৯টি, মোহাম্মদপুরে ৯টি, দারুসসালাম ও গাবতলীতে ৮টি, ডেমরায় ৮টি এবং তেজগাঁও থানায় ৬টি মণ্ডপ রয়েছে।
পুরাণ অনুযায়ী, ব্রহ্মার বর পেয়ে মানুষ ও দেবতাদের অজেয় হয়ে উঠেছিলেন মহিষাসুর। ফলে তাকে পরাজিত করার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর যে মহামায়ারূপী নারী শক্তি তৈরি করেন তিনিই দেবী দুর্গা। দশভূজা দুর্গা টানা ৯ দিন যুদ্ধ করে মহিষাসুরকে বধ করেন।