বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিক্ষা বোর্ডের কোটি টাকা উধাও: পলাতক কর্মকর্তা বরখাস্ত

  •    
  • ১২ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:১৭

আব্দুস সালাম যশোর শিক্ষা বোর্ডের হিসাব সহকারী। যশোর শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর আত্মগোপনে থাকা সালামের লেখা একটি চিঠি সংবাদমাধ্যমগুলোকে দেখায় বোর্ড কর্তৃপক্ষ। চিঠির সঙ্গে আসে ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকার একটি চেক জমা দেয়ার রশিদও। বোর্ড চেয়ারম্যান আমীর হোসেন জানান, ওই চিঠিতে সালাম লিখেছেন যে তিনি একাই আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত। তবে চিঠিটি হাতে লেখা নয়, টাইপ করা।

যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আত্মগোপনে থাকা কর্মচারী আব্দুস সালামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

বোর্ডের হিসাব সহকারী সালামের নামে আসা টাকা আত্মসাতের দায় স্বীকার করা এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।

সোমবার রাতে বোর্ডের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বোর্ড চেয়ারম্যান মোল্লা আমির হোসেনের সভাপতিত্বে বোর্ড সভায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমান, যশোর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নার্গিস শিরীন, মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক এনামুল হক হাওলাদার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল খালেকসহ আরও কয়েকজন।

সভায় চেক জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া টাকা উদ্ধারের চেষ্টা এবং ঘটনায় আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

১৫ লাখ ফেরত ও সালামের দেয়া চিঠি

যশোর শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর লেখা আত্মগোপনে থাকা আব্দুস সালামের একটি চিঠি সোমবার বোর্ডে আসে বলে জানান বোর্ড চেয়ারম্যান। এর সঙ্গে আসে ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকার একটি চেক জমা দেয়ার রশিদও।

বোর্ড চেয়ারম্যান আমীর হোসেন জানান, ওই চিঠিতে সালাম লিখেছেন যে তিনি একাই আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত।

চিঠির একটি ছবি নিউজবাংলাকে দেয় বোর্ড কর্তৃপক্ষ। সেটি হাতে লেখা নয়, টাইপ করা। চিঠির নিচে আব্দুস সালামের স্বাক্ষর করা।

চিঠিতে নিজেকে আব্দুস সালাম পরিচয় দিয়ে লেখা আছে, ‘চেক জালিয়াতি করে টাকা গ্রহণের ঘটনায় আমি ব্যক্তিগতভাবে দায়ী। টাকা আমি নিজ প্রয়োজনে খরচ করে ফেলেছি। আজ ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা ফেরত দিলাম। বাকি টাকাও পর্যায়ক্রমে ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করছি।’

আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে শিক্ষা বোর্ডে দুদকের প্রতিনিধি দলের পরিদর্শনের পরদিন সোমবার এই চিঠি সংবাদমাধ্যমে উপস্থাপন করেন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান।

বোর্ডের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত আছেন চেয়ারম্যান নিজেও। সঙ্গে আছেন উপসহকারি প্রকৌশলী কামাল হোসেন, ভারপ্রাপ্ত সেকশন অফিসার (প্রশাসন) রাকিব হাসান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু ও শাহী লাল স্টোরের মালিক আশরাফুল ইসলাম।

তবে তারা সবাই অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।

যেভাবে ধরা পরে টাকা আত্মসাতের ঘটনা

যশোর শিক্ষা বোর্ডের অডিট কর্মকর্তা আবদুস সালাম জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরের বিভিন্ন মালপত্র কেনার জন্য ১০ হাজার ৩৬ টাকার ৯টি চেক ইস্যু করা হয়। অর্থাৎ ৯০ হাজার ৩২৪ টাকা বরাদ্দ করা হয়।

তবে ব্যাংক স্টেটমেন্টের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যায় ঢাকার ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং সাতটি ও যশোরের শাহী লাল স্টোর দুটি চেকের মাধ্যমে বোর্ডের ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। সেই হিসাবে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৫৩ হাজার ৬৫৬ টাকার হদিস নেই।

চেকের মুরি বইয়ের (গ্রাহকের কাছে থাকা চেকের অংশ) সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকের স্টেটমেন্ট মেলানোর সময় এই জালিয়াতি ধরা পড়ে বলে জানান অডিট কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক শিক্ষা বোর্ড শাখার ব্যবস্থাপক এস এম শাহিদুর রেজা বলেছিলেন, ‘ঢাকার ফকিরাপুলের ভেনার্স প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের চেকের উল্লিখিত অ্যামাউন্ট ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক যশোর শাখার ক্লিয়ারিং চেকের মাধ্যমে তুলে নেয়া হয়েছে।’

যশোর শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন সে সময় জানিয়েছিলেন, যে দুই প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লোপাট করা হয়েছে, তাদের মালিকরা টাকা ফেরত দেয়ার জন্য যোগাযোগ করছেন।

বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আত্মসাৎ হওয়া টাকার মধ্যে শরিফুল ইসলাম বাবুর প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার ১০ টাকা জমা হয়। বাকি টাকা যায় শাহী লাল স্টোরের অ্যাকাউন্টে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শাহী লাল স্টোর ও ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। বোর্ডের অদূরেই শেখহাটি বাজারে অবস্থিত শাহী লাল স্টোর মূলত একটি গ্যাস বিক্রির প্রতিষ্ঠান। শুক্রবার সকালে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ পাওয়া যায়। বন্ধ রয়েছে দোকান মালিক আশরাফুলের মোবাইল ফোনও।

পাশের দোকানের মালিক মনদ্বীপ জানান, শাহী লাল স্টোরে ফ্লেক্সি লোড, মোবাইল ও সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি হয়। ফটোস্ট্যাটও করা হয় দোকানটিতে।

ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবুর যশোর রাজারহাটস্থ বাসভবনের সঙ্গে রয়েছে একটি প্রিন্টিং প্রেস। এ প্রতিষ্ঠানটির সাইনবোর্ডে শরিফুলের মোবাইল নম্বর দেয়া রয়েছে। তবে সেখানে ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

শরিফুলকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “প্রকৌশলী কামাল হোসেন ও কর্মচারী আব্দুস সালাম আমাকে অর্থ আত্মসাতের প্রস্তাব দেন। তারা বলেন ‘বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তা এটা চাইছেন, কোনো সমস্যা হবে না।’ পরে তারা আমাকে চেক দেন। আবার পরে সেই টাকা তুলতে ফিরতি চেক নিয়ে যান।”

এই অভিযোগের বিষয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেছেন, ‘তদন্তে যদি আমার সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে তাহলে আমি মেনে নেব।’

অর্থ আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেনের বিরুদ্ধেও।

তিনি বলেন, ‘সচিব ও অডিট শাখা থেকে চেক আসে। তারা স্বাক্ষর করার পর আমি করেছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সব রহস্য উদঘাটন করবে। এর বাইরে আমি কিছু বলতে চাই না।’

অর্থ আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে দুদক

গত রোববার সকালে দুদকের যশোর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেয় শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এরপর দুপুরে দুদক যশোরের উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাতের নেতৃত্বে একটি দল শিক্ষা বোর্ডে যায়। তদন্তের অংশ হিসেবে তারা বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করেছেন। দলটি বিকেল ৪টা পর্যন্ত শিক্ষা বোর্ডে ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, রোববারই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে প্রাথমিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। তাতে আড়াই কোটি টাকার চেক জালিয়াতির সঙ্গে বোর্ডের কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তবে ঢাকা থেকে রিপোর্ট আসার পর বিস্তারিত ঘটনা জানা যাবে।

এ বিভাগের আরো খবর