কোরবানির ঈদের পর থেকে বেড়েই চলেছে চালের দাম। পাশাপাশি সবজির দামও গত দুই সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী। তবে মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা কমতির দিকে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে ইলিশের ভরা মৌসুম এখন। তবুও ইলিশের স্বাদ নিতে পারছে না সাধারণ ক্রেতারা। ঢাকার বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ কিনতে গুনতে হবে ২৬শ থেকে ২৮শ টাকা, যা প্রায় চার কেজি গরুর মাংসের সমান। তাই মধ্যবিত্তের ধরাছোঁয়ার বাইরে ইলিশ। অন্যান্য মাছের দামও কিছুটা বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভরা মৌসুম হলেও এবার ইলিশের সরবরাহ কম। সাগরে বা নদীতে খুব বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে না। তাই ইলিশের দাম বাড়তি।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মোকামগুলোতেই চালের দাম বেড়েছে। চালকল মালিকরা ঈদের পর চালের দাম বাড়িয়েছেন। প্রতি বস্তা চালের দাম ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে ঈদের আগের চেয়ে এখন প্রতি কেজি চাল মানভেদে ২ থেকে ৮ টাকা টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা দরে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের কেজি ৭৪ থেকে ৮০ টাকা এবং মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৬ টাকা কেজিতে।
মোহাম্মদপুর বাজারের একজন চাল ব্যবসায়ী বলেন, নাজিরশাইল ছাড়া পাইজাম, বিআর-২৮, মিনিকেটের দাম কেজিপ্রতি ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগে ৬৮ টাকা কেজি দরে পাইকারিতে যে মিনিকেট চাল কিনতাম, গতকাল শুক্রবার কিনেছি ৭৬ টাকা কেজি দরে।
এদিকে ছোট বাজারে ও পাড়ার মুদি দোকানে দাম আরেকটু বেশি। রামপুরা বাজারের চাল বিক্রেতা জুবায়ের বলেন, ঈদের পর থেকে দোকান খুলে যে চালই অর্ডার দিচ্ছি, তারই দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি। দিনাজপুর, নওগাঁ, কুষ্টিয়া সব মোকামে চালের দাম বাড়ছে।
বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধন্দুল ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া পটল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, টমেটো ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, গাঁজর ১৬০ টাকা, শসা ৮০ টাকা এবং আলু প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে যাওয়া বেসরকারি চাকরিজীবী বায়জিদ বলেন, বাজারে সবজির দাম কয়েকদিন ধরে বেড়েছে। আজও বাড়তি দামে সবজি কিনলাম। কিছুদিন আগেও সবজির দাম কম ছিল, কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে বলতে গেলে সবজি দাম বাড়তি যাচ্ছে।
সবজির দাম বৃদ্ধি বিষয়ে মিরপুর ৬ নাম্বার বাজারের সবজি বিক্রেতা জসিম বলেন, বেশ কিছু সবজির মৌসুম এখন প্রায় শেষ। যেসব সবজির মৌসুম শেষ হয়েছে সেগুলোর দাম বেড়েছে। মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারে এসব সবজির সরবরাহ কিছুটা কম। ফলে সবজি গুলোর দাম বেড়েছে। নতুন মৌসুমের সবজি উঠার আগ পর্যন্ত কিছুটা বাড়তি থাকবে।
রাজধানীর বাজারে ঈদের পর থেকে নিম্নমুখী ছিল মুরগির দাম। কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সোনালি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে প্রতি ডজন ডিমের দাম নেমেছে ১২০ টাকায়। বড় বড় বাজারে কিনলে ১১৫ টাকায়ও কেনা যাচ্ছে। তবে এ দাম ডিম উৎপাদনকারীর জন্য লোকসানের বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। বিপুল হোসেন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, অন্তত ১৪০ টাকা ডজন ডিমের দাম হলে খামারিদের কিছু লাভ হয়, এবার দাম খুব কমে তাদের লোকসান হচ্ছে।
এদিকে মুদি পণ্যগুলো দাম তেমন হেরফের হয়নি। তেল, চিনি, ডাল, আটা, ময়দা, সুজি আগের দামে কেনা যাচ্ছে। কম দামে কেনা যাচ্ছে পেঁয়াজ, আলু, আদা, রসুনসহ অন্য নিত্যপণ্যও।