বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মরদেহটি নুরুল ইসলামের, বাড়ি মুলাদি

  •    
  • ১১ অক্টোবর, ২০২১ ১৪:৪৫

ওমর গাজী বলেন, ‘বাবা-মা সবাইকে নিয়ে ঢাকায় থাকি। বাবা গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। তিনি সুস্থ ও সবল ছিলেন। তার সঙ্গে কারো কোনো দ্বন্দ্ব নেই। বাড়ি থেকে রোববার সকালে রওনা দেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কীভাবে মারা গেলেন বুঝতে পারলাম না। আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। যেভাবেই মৃত্যু হয়ে থাক অন্তত বাবাকে শেষ দেখা দেখতে পাচ্ছি। রীতি মেনে দাফন করতে পারছি- এটাই আমাদের এখন প্রাপ্তি।’

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের করিডোরে পড়ে থাকা সেই মৃতদেহের পরিচয় পাওয়া গেছে। ৭০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি বরিশালের মুলাদি উপজেলার চর কালেখান গ্রামের মৃত রহমান গাজীর ছেলে নুরুল ইসলাম কুট্টি বলে শনাক্ত করেছেন স্বজনরা।

ফেসবুকের সুবাদে নুরুল ইসলামের খোঁজ পায় পরিবার। রাতেই ঢাকা থেকে শরীয়তপুর ছুটে আসেন তার দুই ছেলে ও জামাতা।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে বরিশাল থেকে শরীয়তপুর হয়ে ঢাকায় ছেলের বাসায় যাচ্ছিলেন নুরুল ইসলাম। কোনো সহযাত্রী তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল গেটের সামনে ফেলে রেখে যায়। দীর্ঘ সময় হাসপাতাল গেটে পড়ে থাকায় নজরে আসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। নুরুল ইসলামকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়।

চিকিৎসক পরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে নাম-পরিচয় না পাওয়ায় তারা বিষয়টি পুলিশকে জানায়। পালং মডেল থানার ওসিসহ পুলিশ সদস্যরা হাসপাতালে যান। ওই মৃত ব্যক্তির সুরতহাল করা হয়। একই সঙ্গে হাসপাতালে উপস্থিত হন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মনদীপ ঘরাই। তিনি ওই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। পুলিশও বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ শুরু করেন।

কিন্তু পরিচয় না পেয়ে একপর্যায়ে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের চিন্তাও করে প্রশাসন। এরই মধ্যে মৃত নুরুল ইসলামের ছেলেরা ফেসবুকে বিষয়টি জানতে পারেন। ফোনে যোগাযোগ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। এরপর ঢাকা থেকে শরীয়তপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। সোমবার রাত ১২টায় শরীয়তপুরে পৌঁছায় নুরুল ইসলামের দুই ছেলে ওমর গাজী ও স্বপন গাজী। এরপর শুরু হয় মরদেহ বুঝে নেয়ার নানা প্রক্রিয়া। সকালে তাদের পরিবারের আরও সদস্য ছুটে আসেন হাসপাতালে।

মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে মৃতদেহটি পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। দাফনের জন্য মরদেহ ঢাকায় নিয়ে যান স্বজনরা।

মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে ওমর গাজী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাবা-মা সবাইকে নিয়ে ঢাকায় থাকি। বাবা গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। তিনি সুস্থ ও সবল ছিলেন। তার সঙ্গে কারো কোনো দ্বন্দ্ব নেই। বাড়ি থেকে রোববার সকালে রওনা দেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কীভাবে মারা গেলেন বুঝতে পারলাম না। আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। যেভাবেই মৃত্যু হয়ে থাক অন্তত বাবাকে শেষ দেখা দেখতে পাচ্ছি। রীতি মেনে দাফন করতে পারছি- এটাই আমাদের এখন প্রাপ্তি।’

তিনিও আরও বলেন, ‘যারা আমার বাবাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন তারা শুধু দায়িত্ব পালন করেননি, একটি মানবিক কাজ করেছেন। তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনদীপ ঘরাই বলেন, ‘এটুকুই পাওয়া শেষযাত্রায় নুরুল ইসলামের পরিচয়টুকু হারাতে দিইনি। রোববার সারা দিন উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একটি টিম কাজ করেছে। আমার ফেসবুকে সন্ধান চেয়ে পোস্ট দিয়েছি। অনেকেই তা শেয়ার করেছে। তা দেখেই পরিবার তাদের মৃত স্বজনের খোঁজ পেয়েছে। সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর