বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কবিষয়ক প্রতিবেদনের জন্য ‘বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন নিউজবাংলার সাংবাদিক মৌসুমী ইসলাম।
‘চীনকেন্দ্রিক বাণিজ্যে স্বস্তি’ শিরোনামে এ প্রতিবেদনের জন্য ‘বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধিতে চায়নিজ কোম্পানির সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক ক্যাটাগরিতে তিনি এ পুরস্কার জিতে নিয়েছেন।
চলতি বছর ২৯ জানুয়ারি আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায় তার এ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। বর্তমানে মৌসুমী ইসলাম নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ কর্মরত।
বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (বিসিসিসিআই-ইআরএফ) যৌথভাবে দুই দেশের সম্পর্কের বিভিন্ন খাতভিত্তিক মোট ১০টি ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার দিচ্ছে।
রোববার ছিল বিষয়ের ওপর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ী মৌসুমী ইসলামের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও ৫০ হাজার টাকার ডামি চেক তুলে দেন।
এ সময় বিসিসিসিআই সভাপতি গাজী গোলাম মুর্তজা, ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদুল ইসলাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন ঢাকায় চায়নিজ রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
বাংলাদেশ এবং চীনের বর্ধনশীল বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক তুলে ধরার লক্ষ্যে গত বছর বিসিসিসিআই এবং ইআরএফ যৌথভাবে এ পুরস্কার চালু করে।
উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উদ্ভাবন, শিক্ষা, হসপিটালিটি, সংস্কৃতি এবং পর্যটন ক্ষেত্রে সংবাদপত্র, টেলিভিশন এবং অনলাইনে কর্মরত ইআরএফের অর্ধশতাধিক সদস্য প্রতিবেদন জমা দেন। এর মধ্য থেকে ১০টি রিপোর্টকে সেরা হিসেবে অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোকে পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হয়।
আরও যারা অ্যাওয়ার্ড পেলেন
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক ক্যাটাগরিতে দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ড-এর বিশেষ প্রতিনিধি আবুল কাশেম, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পে চায়নিজ রাষ্ট্রীয় কোম্পানির বিনিয়োগ ক্যাটাগরিতে দ্য নিউ এইজ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশে চায়নিজ বেসরকারি বিনিয়োগ ক্যাটাগরিতে দ্য ডেইলি স্টার-এর স্টাফ রিপোর্টার আহসান হাবীব, বাংলাদেশে চায়নিজ বিনিয়োগকারী ও তাদের কর্মীদের জীবনাচরণ ক্যাটাগরিতে দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর বিশেষ প্রতিনিধি জসিমউদ্দিন হারুন, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ ক্যাটাগরিতে দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর ইকোনমিক এডিটর প্রয়াত এ জেড এম আনাস পুরস্কার পেয়েছেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য চীন ক্যাটাগরিতে নিউজ২৪ টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার বাবু কামরুজ্জামান, করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে বাংলাদেশ-চায়নিজ বেসরকারি খাতের উদ্যোগ ক্যাটাগরিতে যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার আলমগীর হোসেন, পর্যটন, আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক খাতে বাংলাদেশ-চীন বেসরকারি খাতের উদ্যোগ ক্যাটাগরিতে গাজী টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার তৌহিদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ-চীন ভৌগোলিক অর্থনীতি অথবা অর্থনৈতিক কূটনীতি ক্যাটাগরিতে যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মাসুদুজ্জামান রবীন পুরস্কার পেয়েছেন।
এই পুরস্কারের বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ড পত্রিকার চিফ নিউজ এডিটর এ এম এম হারুনর রশিদ, বিসিসিসিআইর সহসভাপতি অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহ মো. সুলতান উদ্দিন ইকবাল ও গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের অন্যতম সম্পাদক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী।
পুরস্কারের পুরো প্রক্রিয়া সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাবেক ব্যুরো প্রধান সিরাজুল ইসলাম কাদির।
দুই দেশের সম্পর্কে রাজনীতির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা: বাণিজ্যমন্ত্রী
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ব্যবসা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের বিবেচনায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অংশীদার হলো চীন। রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল, এক্সেসরিজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা রয়েছে। ফলে দুই দেশের সম্পর্কে রাজনীতির চেয়ে ব্যবসার গুরুত্ব বেশি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীটাই ব্যবসার ওপর চলছে। বৈশ্বিক রাজনীতি এখন অর্থনৈতিক রাজনীতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে থাকেন শুধু রাজনৈতিক কূটনীতিতে হবে না। ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়ে কূটনীতি করতে হবে। সেই কূটনীতিতে যে সফল হবে, সে-ই প্রকৃত সফল।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের বিবেচনায় চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অংশীদার। বাংলাদেশ যত কাঁচামাল আমদানি করে, তার বড় অংশই আসে চীন থেকে। এ জন্য করোনা মহামারি শুরুর সময় সবাই দুশ্চিন্তায় পড়েছিল যে কাঁচামাল সরবরাহের কী হবে। কাঁচামাল না পাওয়া গেলে সময়মতো পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে না। বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্প।
‘এ ছাড়া এক্সেসরিজ খাতেও একই অবস্থা সৃষ্টি হয়। যদিও এক্সেসরিজে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। তারপরও চীনের ওপর নির্ভরশীলতা রয়েছে। এ ছাড়া দেশের মধ্যে যত বড় বড় নির্মাণ কার্যক্রম আছে, তার অনেক ক্ষেত্রেই চীনের অংশগ্রহণ আছে। ফলে দুই দেশের সম্পর্কে রাজনীতির চেয়ে ব্যবসার গুরুত্ব বেশি।’
এ সময় ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘চীন বৈশ্বিক উন্নয়নে কাজ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। সবুজ ও স্বাস্থ্যসম্মত বৈশ্বিক উন্নয়ন চায় চীন। মানবকল্যাণ এবং কাউকে পেছনে ফেলে নয় এমন উন্নয়ন চায় চীন। এ জন্য আঞ্চলিক উন্নয়ন ও বিভিন্ন উদ্ভাবনে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশও চীনের এই বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ থেকে সহায়তা পাবে। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) নির্ধারিত সময়ে অর্জন হয়েছে। আগামী উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোও সময়মতো অর্জন হবে। ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশের। আর ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৩৫তম অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হবে।’
বিসিসিসিআইয়ের যুগ্ম মহাসচিব আল মামুন মৃধার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির মহাসচিব শাহজাহান মৃধা বেনু। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-চীনের উষ্ণতম অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টি করাই বিসিসিসিআইয়ের মূল লক্ষ্য। এ ধরনের রিপোর্টিং এ লক্ষ্যকে এগিয়ে নেবে।
ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম বলেন, চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা রয়েছে। মহামারি মোকাবিলায় চীন করোনার টিকা এবং অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করছে। আশা করা যায় বিসিসিসিআই এ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেবে।
বিসিসিসিআইয়ের যুগ্ম মহাসচিব আল মামুন মৃধা তার সমাপনী বক্তব্যে এই অ্যাওয়ার্ডের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সাংবাদিকদের জন্য ফেলোশিপ চালু করা হবে বলে জানান।