বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মৃত্যুদণ্ড তুলে দেয়ার পক্ষে বিশেষজ্ঞরা

  •    
  • ১০ অক্টোবর, ২০২১ ১৬:২৮

গত বছর যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা হয়েছে, তার মধ্যে শীর্ষে আছে চীন। দেশটিতে ২০২০ সালে ৪৮৩টি মৃত্যুদণ্ডের তথ্য রয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কাছে। সংস্থাটির হিসাবে এর পরের অবস্থানে থাকা দেশগুলো হলো ইরান, মিশর, ইরাক ও সৌদি আরব। বাংলাদেশের নামও আছে অ্যামনেস্টির এই তালিকায়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিচারিক প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান তুলে দেয়ার উদাহরণ বাড়ছে। সবশেষ গত শুক্রবার মৃত্যুদণ্ড বিলোপের ঘোষণা দিয়েছে আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওন। বিশ্বের ১১০টি দেশে এখন শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড নেই।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পরিসংখ্যান বলছে, বহু দেশ মৃত্যুদণ্ডের বিধান থেকে সরে এলেও অনেক দেশে এ ধরনের দণ্ড এখনও আইনিভাবে স্বীকৃত এবং জনপ্রিয়। গত বছর ৫৪টি দেশে অন্তত ১ হাজার ৪৭৭ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, এর আগের বছর ২০১৯ সালে সংখ্যাটি ছিল ২ হাজার ৩০৭।

গত বছর যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা হয়েছে, তার মধ্যে শীর্ষে আছে চীন। দেশটিতে ২০২০ সালে ৪৮৩টি মৃত্যুদণ্ডের তথ্য রয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কাছে। সংস্থাটির হিসাবে এর পরের অবস্থানে থাকা দেশগুলো হলো ইরান, মিশর, ইরাক ও সৌদি আরব। বাংলাদেশের নামও আছে অ্যামনেস্টির এই তালিকায়। সংস্থাটি বলছে, গত বছর বাংলাদেশে ১১৩টির বেশি মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা হয়েছে, সাজা কার্যকর হয়েছে দুটি।

এমন পরিস্থিতিতে ১০ অক্টোবর রোববার বিশ্বব্যাপী পালন করা হচ্ছে ১৯তম আন্তর্জাতিক মৃত্যুদণ্ডবিরোধী দিবস

১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র গ্রহণ করার পর থেকে অনেক দেশই মৃত্যুদণ্ডের বিধান রোহিত করছে। সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে এ ধরনের শাস্তির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং দ্য কাউন্সিল অফ ইউরোপ। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ফেডারেল বিচার ব্যবস্থায় মৃত্যুদণ্ড বিলোপের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

বাংলাদেশের আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেশে ‘জনপ্রিয়’ হলেও আধুনিক বিশ্বপরিস্থিতিতে এটি পর্যালোচনার সময় এসেছে।

দেশে বেশ কিছু ফৌজদারি অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে রয়েছে মৃত্যুদণ্ডের বিধান। ‘দণ্ডবিধি, ১৮৬০’ এর যে ১০টি ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে, সেগুলো হলো ১২১, ১৩২, ১৯৪, ৩০২, ৩০৩, ৩০৫, ৩০৭, ৩২৬ (ক), ৩৬৪ (ক) এবং ৩৯৬। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়ে থাকে, বাংলাদেশ তার একটি।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিশ্বের অনেক দেশই বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশেও মৃত্যুদণ্ডের বিধান বহাল রাখার আর প্রয়োজন নেই। তার কারণ, অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে আমৃত্যু কারাদণ্ডই একটি বড় শাস্তি। এটা কার্যকর করা গেলে আর মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োজন হয় না, যদিও বিষয়টি নির্ভর করে পরিস্থিতির উপর।’

মৃত্যুদণ্ড বাতিল করলে অপরাধ বেড়ে যাবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যে কারণে মৃত্যুদণ্ড হয়, সেই কারণগুলো নির্ণয় করে যদি রোহিত করা যায়, তাহলেই হবে। এটা হলে আর অপরাধের সংখ্যা বাড়বে না।’

আপিল বিভাগের সাবেক বিচারক বিচারপতি নিজামুল হকও সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করছেন না। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, মৃত্যুদণ্ড পৃথিবী থেকে তুলে দেয়া উচিত। কারণ, মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। যদিও এ ক্ষেত্রে সময় লাগবে, এর জন্য ক্যাম্পেইন করা দরকার। আমাদের সামনে আগাতে অনেক সময় লাগবে। তবে আমাদের এমন একটা লক্ষ্য থাকা উচিত, যাতে পৃথিবীতে কোথাও মৃত্যুদণ্ডের বিধান না থাকে।’

দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সময় হয়নি। তবে মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে ক্যাম্পেইনটা জোরালো হওয়া উচিত।

‘আমি মনে করি না, মৃত্যুদণ্ডের ভয়ে মানুষ অপরাধ থেকে দূরে থাকে। অনেক আগে থেকেই মৃত্যুদণ্ড আছে, কিন্তু তাতে কি অপরাধ কমেছে?’

মানবাধিকার কর্মী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আসলে যে কোনো অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে সব সময়ই মৃত্যুদণ্ড দাবি করে আসছি। সবার দাবিই থাকে মৃত্যুদণ্ড। তবে আমার ব্যক্তিগত মত হলো, লিগ্যাল সিস্টেমে অনেক সময় ব্যক্তি নির্দোষ হয়। শতভাগ নির্ভুল বা নিশ্চিতভাবে কারও অপরাধ প্রমাণ করে সাজা হয়েছে এমনটা কি আমরা বলতে পারব?

‘সেই ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, সন্দেহের ঊর্ধ্বে উঠে মৃত্যুদণ্ড দেয়া আদৌ সম্ভব কিনা! এর মানে এটা ভাবা যাবে না, আমি বিচার বিভাগকে কটাক্ষ করছি। আমাদের সিস্টেমে সঠিক বিচার নাও হতে পারে। সব কিছু মিলিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে না।’

তিনি বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়ে অপরাধ সেই অর্থে কমানো গেছে এমনটা বলা যাবে না। এ কারণে আমি বলব, মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া যেতে পারে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন খন্দকার ফারজানা রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৯৬৬ সালে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়। ওই চুক্তির ২ নম্বর ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড নিরোধের সিদ্ধান্ত আসে। সেটি বিশ্বের অনেক দেশ কার্যকর করলেও এখনও বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান একটি বৈধ সাজার পদ্ধতি। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এই বিধান নিরোধ করা নিয়ে সেভাবে কাজ শুরু হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বেশিরভাগ আইন ব্রিটিশ আইন থেকে এসেছে। এই আইনগুলোতে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট (সর্বোচ্চ সাজা) কী হবে তা বলা আছে। আইনগতভাবে মৃত্যুদণ্ডের সাজা লিগ্যাল। তবে একইভাবে চিন্তা করতে হবে, আমাদের যে সামাজিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, সেখানে মৃত্যুদণ্ডের বিপরীতে আমৃত্যু বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান কতটুকু প্রত্যাশিত।

‘আমরা যে ব্রিটিশ কলোনিয়াল আইন থেকে বের হতে পারিনি, তার প্রমাণ হলো এখনও নতুন নতুন যে আইন হচ্ছে তাতেও সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বলব, বাংলাদেশে এমন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়নি যাতে এখনই মৃত্যুদণ্ডের বিধান রোহিত করা যাবে।’

ফারজানা রহমান বলেন, ‘তবে মৃত্যুদণ্ডের বিধানের ফলে ব্যক্তির বাঁচার অধিকার লংঘিত হয়, তাছাড়া মৃত্যুদণ্ড মানুষকে সংশোধনের সুযোগ দেয় না। সেখান থেকে বলব, আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো চিন্তা করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আমরা তুলে দিতে পারি কিনা তা নিয়ে এখনই কাজ শুরু করা উচিত।’

‘ওয়ার্ল্ড কোয়ালিশন এগেইনস্ট ডেথ পেনাল্টি’-এর পক্ষ থেকে ২০০৩ সালের ১০ অক্টোবর প্রথমবারের মতো ‘আন্তর্জাতিক মৃত্যুদণ্ডবিরোধী দিবস’ পালন করা হয়।

দ্য কাউন্সিল অফ ইইউ ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে ‘ইউরোপীয়ান ডে এগেইনস্ট ডেথ পেনাল্টি’ পালনে সম্মত হয়। পরের বছরের ১০ অক্টোবর এটি প্রথম পালন করে ইউরোপের দেশগুলো।

এ বিভাগের আরো খবর