সারা বছরের অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে সোমবার। ঢাকে কাঠি পড়বে ষষ্ঠীর বোধনের মধ্য দিয়ে, শুরু হবে দেবী দুর্গার আরাধনা।
পূজার তোড়জোড়ও তাই চরমে। সব প্রস্তুতি শেষে এখন চলছে দেবীকে সাজানোর কাজ।
বাঙালি হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজনে সারা দেশের মতো সুনামগঞ্জের মণ্ডপে মণ্ডপে এখন ব্যস্ত প্রতিমাশিল্পীরা।
তবে শহরের রায়পাড়ার প্রতিমাশিল্পী প্রফুল্ল রায়ের ব্যস্ততা কিছুটা কম। প্রতিমা বানানো তার শেষ। তাতে রঙ-তুলির কাজ করে দিচ্ছেন তার দুই মেয়ে তন্না রানী পাল ও স্বর্ণা রানী পাল।
শহরের নতুনপাড়া, বাধপাড়া ও রায়পাড়া এলাকার প্রতিমার কাজ পেয়েছেন প্রফুল্ল। দুই মেয়ের সহযোগিতায় সবগুলো প্রতিমায় ফুটিয়ে তুলেছেন দেবীকে।
তিন বছর ধরে প্রতিমায় রঙ-তুলির কাজ করছেন তন্না ও স্বর্ণা। তাই বাবার চাপ কমেছে অনেকটাই।
তন্না পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাজটি আমি নিজ থেকেই করছি। স্নাতক শেষ করে এখন ফেসবুকে একটি পেইজ খুলে কাপড় ও গয়নার ব্যবসা করছি, যেটা খুব ছোট। তবে এ সময়টা আমি ও আমার ছোট বোন বাবার কাজে রঙ তুলি দিয়ে দেবীর সাজ ফুটিয়ে তুলি।’
কোথায় এ কাজ শিখেছেন?
তিনি বলেন, ‘আমি এ কাজ কারও কাছ থেকে শিখিনি। নিজে নিজেই শিখেছি। আমার ছোটবোন আর্টস ক্লাসে গেলেও আমি কখনও যাইনি।
‘এ কাজ তিন বছর ধরে করছি, তবে বাবা ৩০ বছর ধরে এ কাজের সঙ্গে রয়েছেন। তিনি প্রতিমা তৈরি করে দিনযাপন করেন, এ সময়টা আমাদের ব্যস্ত সময়। রঙ-তুলির এ কাজটি চালিয়ে যাব। এটি করতে আমার খুব ভালো লাগে।’
স্বর্না রানী পাল বলেন, ‘আঁকাআঁকির শখ ছিল ছোটবেলা থেকেই। একজন স্যারের কাছে ভর্তিও হয়েছিলাম, কিন্তু বেশি দিন যাওয়া হয়নি। পরে সব নিজে নিজে ভিডিও দেখে শিখেছি। ইচ্ছা আছে এই শখটিকে নিয়ে ভবিষ্যতে বড় কিছু করব।’
দুই মেয়ের কাজে বেশ সন্তুষ্ট প্রফুল্ল পাল।
তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে দুইটারে প্রতিমা তৈরি কইরা পড়াইছি। আমি ৩০ বৎসর ধরি এই কাজ করি, তারা আমারে এখন দেবীর রূপ ফুটাইয়া তুলাত সাহায্য করে। আগে কারিগররে টাকা দেয়া লাগতো, কিন্তু এখন নিজের মেয়েরাই করে। অনেকটা উপকার হয়। ইবার অনেকগুলা কাজ পাইছি। তাই আমরার এখন দম ফালানির সময় নাই।’
সুনামগঞ্জ পৌরসভা পূজা উদযাপন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাজ গোবিন্দ বলেন, ‘মেয়ে দুটি অনেক সুন্দর কাজ করে। রঙ-তুলির আঁচড়ে প্রতিমাগুলিতে জীবন্ত রূপ ফুটিয়ে তুলছে। এমন কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন।’