বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নির্মাণের পরদিনই হেলে পড়ে যে সেতু

  •    
  • ১০ অক্টোবর, ২০২১ ০৮:৪৫

সিরতা বাজার কাটা খালের ওপর নির্মিত সেতুটি এখনও একপাশে হেলে আছে। যেকোনো সময় সম্পূর্ণ অংশ ধসে পড়তে পারে। সেতুটির দুই পাশে নেই কোনো সংযোগ সড়ক। খালে পানি না থাকায় দুই পারের লোকজন চলাচল করছে সেতুর নিচ দিয়ে।

ময়মনসিংহ সদরের খাগডহর ফেরিঘাট থেকে সিরতা বাজার পর্যন্ত বয়ে চলা কাটা খাল গ্রীষ্মে শুষ্ক থাকলেও বর্ষা ও বন্যায় থাকে পানিতে টইটম্বুর। স্থানীয় লোকজনের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এ খালের ওপর নির্মাণ করে ৬০ ফুটের সেতু।

অর্ধকোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে সেতুর নির্মাণকাজ ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল শেষ হওয়ার পরদিনই বন্যার তোড়ে এর সংযোগ ভেঙে যায়। সেতুটিও হেলে পড়ে।

এরপর কেটে গেছে চার বছর। এত বছরেও সেখানে আর কোনো সেতুর জন্য প্রকল্প বরাদ্দ হয়নি। স্থানীয় লোকজনের দুর্ভোগ কমাতে তৈরি সেতুই এখন হয়ে পড়েছে তাদের গলার কাঁটা।

ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সিরতা বাজার কাটা খালের ওপর নির্মিত সেতুটি এখনও একপাশে হেলে আছে। যেকোনো সময় সম্পূর্ণ অংশ ধসে পড়তে পারে। সেতুটির দুই পাশে নেই কোনো সংযোগ সড়ক। খালে পানি না থাকায় দুই পারের লোকজন চলাচল করছে সেতুর নিচ দিয়ে।

উপজেলা প্রশাসন জানায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু-কালভার্ট কর্মসূচির আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৪ লাখ ৪ হাজার ৬৫০ টাকা। সেতুটি নির্মাণ করে বরিশাল সদরের মেসার্স মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, প্রত্যন্ত অঞ্চলের সেতুটি নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। সেতুর দুইপাশে ফেলা লোকদেখানো মাটি কাজ শেষ হওয়ার পরদিনই বন্যার পানির তোড়ে ভেসে যায়। ধীরে ধীরে হেলে পড়ে সেতুটিও। সরকারি বরাদ্দে দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত সেতুটি নির্মাণ হলেও এক দিনও এর সুবিধা ভোগ করতে পারেনি কেউ।

স্থানীয় বিপ্লব হোসেন নামের একজন বলেন, ‘বন্যার সময় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি এই এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়। হাজারও মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল।

‘তবে জনগণের সুবিধার কথা চিন্তা করে সেতুটি নির্মাণ করা হয়নি। দুর্বলভাবে নির্মাণ করে সরকারি টাকা অপচয় করা হয়েছে। জনগণের দুর্ভোগ কমাতে চেষ্টা করলে এত বছরে নিশ্চয় একটি টেকসই সেতু নির্মাণ করা হতো।’

এই সড়কে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করে সংসার চালান সাইদুর রহমান নামের এক যুবক। তিনি বলেন, ‘সেতুটির পাশ দিয়ে মোটরসাইকেলে করে লোকজনকে ব্রহ্মপুত্র নদের ফেরিঘাট পর্যন্ত পারাপার করি।

‘সেতুটি ভালোভাবে নির্মিত হলে যাত্রী নিয়ে দ্রুত চলাচল করা যেত। সেতুটির পাশ দিয়ে কোনো সড়ক নেই। ভাঙাচোরা গর্তের ওপর দিয়ে বাধ্য হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।’

ভাঙাচোরা সড়কের কারণে প্রতিদিনই গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যত টাকা রোজগার করি, সেটা গাড়ি মেরামত করতেই খরচ হচ্ছে। ভালো একটি সেতু নির্মাণ করলে আমরা উপকৃত হতাম।’

স্থানীয় ঘটক আব্দুল করিম বলেন, খাগডহর ইউনিয়নের কাটা খালের পরের কয়েকটি গ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া নেই। যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় দীর্ঘদিন এ এলাকার ছেলে-মেয়েদের বিয়ে করানো খুব কঠিন ছিল।

তবে সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর পর দ্রুত অনেক বিয়ে হয়েছিল। এখন সবকিছু ঠিক হলেও যোগাযোগব্যবস্থার জন্যই অনেক বিয়ে ভেঙে যায়।

তাহের উদ্দিন নামের ষাটোর্ধ্ব একজন বলেন, ‘সেতু ভালা কইরা বানাইছে না। হুদাই উন্নয়নের স্বপ্ন দেহায়া ট্যাহা খরচ করছে। আমরার দুর্ভোগ শেষ হইত না৷

‘ভাবছিলাম, হামি সেতুর উরফে দিয়া না যাইতে পারলেও অন্যরা এর সুবিধা পাইব, কিন্তু এর উরফে দিয়া মানুষ তো দূরের কথা, একটা হেলও (শিয়াল) যাইবার পারছে না। এই সেতু এহন গলার কাঁডা। সবার কথা চিন্তা কইরা ভালা একটা সেতু নির্মাণ করা দরকার।’

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মনিরুল হক ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যতদূর মনে আছে, সরকারি বরাদ্দের সম্পূর্ণ টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়নি৷ সেতু ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় ১৪ লাখ টাকা দেয়া হয়েছিল। আর সেতুটি আমার সময় নির্মিত হয়নি। বিস্তারিত তৎকালীন পিআইও বলতে পারবেন।’

নতুন সেতু নির্মাণের বিষয়ে তিনি জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বর্তমানে ৬০ ফুট দীর্ঘ সেতু খুব কম নির্মাণ করছে। কাটাখালী খালে সেতু নির্মাণ করতে হলে ৬০ ফুটই করতে হবে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে একটি প্রস্তাব পাঠানোর পরিকল্পনা চলছে। যদি তারা অনুমোদন না পান, তাহলে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর (এলজিইডি) সেতুটি নির্মাণ করবে।

তৎকালীন পিআইও মমিনুর রহমান ছিলেন এই সেতুর নির্মাণকাজের তদারকিতে। তিনি বর্তমানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার সময়ে সেতুটি নির্মিত হয়েছিল সত্য। তবে আমি এখন ময়মনসিংহে নেই। ফলে সেতুটির বিষয়ে সামগ্রিক তথ্যও মনে নেই।’

এই কথা বলার পর তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন৷ এরপর বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

ময়মনসিংহ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু নির্মিত সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়েছে, সেহেতু একই স্থানে আরেকটি সেতু নির্মাণ করেই জনদুর্ভোগ লাঘব করতে হবে। এ জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে দ্রুত একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলেই প্রকল্পের মাধ্যমে আরেকটি সেতু একই স্থানে নির্মিত হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর