দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। আমেজ ফিরেছে দুর্গাপূজায়। উৎসব প্রাণবন্ত করতে চলছে শেষ সময়ের কেনাকাটা। ক্রেতা আকর্ষণে বাহারি সাজপোশাকের পশরা সাজিয়েছে বিপণীবিতানগুলো।
দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোতে আনা হয়েছে বাহারিপোশাক। গরমের বিষয়টি মাথায় রেখে সুতি কাপড়ে বিভিন্ন ডিজাইনে বর্ণিল পোশাক নিয়ে এসেছে ‘দেশি দশ’। তাদের আনা পোশাকগুলোতে রয়েছে দেশীয় ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেল।
পূজার পোশাকে এবারের ট্রেন্ড ‘ফ্যামিলি প্যাক’। অর্থাৎ বিশেষ ম্যাচিং পোশাক রয়েছে পরিবার ও যুগলদের জন্য। বেশির ভাগ পোশাকেই দুর্গা দেবীর মাথার শূল, মুকুটসহ, মন্দির ও পূজার বিভিন্ন উপকরণ প্রাধান্য পেয়েছে। দামও নাগালের মধ্যে।
এবারের শারদ সংগ্রহে তৈরি করা হয়েছে আরামদায়ক নানা পোশাক। এসব পোশাকে মূলত কটন, হাফসিল্ক, সেমি পিউর, লিলেন কাপড়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। মূল রঙ হিসাবে বেছে নেয়া হয়েছে লাল, নীল, পিচ, কমলা, হলুদ, ব্রাউন, লাইট অলিভ ও গেরুয়া।
শারদ সংগ্রহে সব বয়সের সবার জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অনন্য ডিজাইনের পোশাক। যেমন: শাড়ি, থ্রিপিস, কামিজ, স্কার্ট টপস, ফ্রক, বেবি শাড়ি, রেডি ব্লাউজ, ওড়না, আনস্টিচ ড্রেস, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, শার্ট, ধূতি, উত্তরীয় ইত্যাদি। এ ছাড়া, বিশেষ ম্যাচিং পোশাক রয়েছে পরিবার ও যুগলদের জন্যে।
মেয়েদের জন্য সুতি থেকে শুরু করে জামদানি, সিল্ক, তসর, কাতান শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। মেয়েদের পোশাকের পাশাপাশি ছেলেদের ও বাচ্চাদের জন্যও নতুন ডিজাইনের পোশাক এসেছে। পোশাকের নকশা ফুটিয়ে তোলার জন্য স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, হাতের কাজ, প্যাচওয়ার্ক, কারচুপি ব্যবহার করা হয়েছে।
দেশি দশের মধ্যে ‘রঙ বাংলাদেশ’, ‘অঞ্জন’স’, ‘কে ক্রাফট’ পূজা উপলক্ষে ফ্যামিলি প্যাক পোশাক বাজারে এনেছে। বাবা-বা, ছেলে-মেয়ে সবাই একই ডিজাইনের পোশাক পাবেন এখানে। উৎসবে ম্যাচিং পোশাকের কারণে থ্রি পিস ও শাড়ি দুটির সঙ্গে মিলিয়ে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টপস পাওয়া যাচ্ছে।
‘দেশী দশ’ এর ফ্যাশন হাউসগুলোতে মেয়েদের কুর্তি কিনতে খরচ হবে ৭৫০-৩০০০ টাকা, থ্রি-পিস পড়বে ১৮০০-৮০০০ টাকা। মেয়ে বাচ্চার পোশাক পড়বে ৬০০-৩০০০ টাকার উপরে এবং ছেলে বাচ্চাদের পোশাক পড়বে ৪৫০-২৫০০ টাকা। শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। ছেলেদের পাঞ্জাবি ৭০০-৬০০০ টাকা, শার্ট ও পলো পড়বে ৫৫০-২৫০০ টাকার ওপরে।
শারদীয় আয়োজনকে অনিন্দ্যসুন্দর করতে ‘রঙ বাংলাদেশ’ থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে মন্দির ও প্রতীক, দেবীর অলংকার ও শতরঞ্জি।
‘রঙ বাংলাদেশ’ এর বিক্রয়কর্মী সোনিয়া আক্তার বলেন, অন্যান্যবারের চেয়ে এবার ফামিলি প্যাকের চাহিদা বেশি। বিবাহিত নারীরা থ্রি পিস বা শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পাঞ্জাবি ও ছেলে মেয়েদের পোশাক কিনছে।
বাবা-মা আর ছোট ভাই চন্দনের সঙ্গে পূজার কেনাকাটা করতে এসেছে বিএফ শাহিন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র নন্দন। ‘রঙ বাংলাদেশ’ থেকে দুটি ফতুয়া আর একটি পাঞ্জাবি কিনেছে নন্দন। পুজার এক একটি দিন ভিন্ন ভিন্ন পোশাকে নিজেকে দেখতে চাই সে।
দুই ভাই কী একই রকম পোশাক কিনেছো, এমন প্রশ্নে নন্দন জানায়, ছোট ভাইয়ের সঙ্গে অধিকাংশ সময় তার পছন্দ মেলে না। কখনও পছন্দ মিলে গেলে কেনা হয়।
তাদের মা জানান, বছরে এই একটি বড় উৎসব। গত বছর করোনার কারণে পূজায় কেনাকাটা করা হয়নি, কিন্তু এবার নিজেদেরসহ আত্মীয়দের জন্যও নানা পোশাক কিনেছেন।
‘বাংলার মেলা’ এবার শারদ উৎসবে অল্প কিছু পোশাক নতুন তুলেছে। বিক্রয়কর্মী রুমানা, ‘মেয়েদের ড্রেস বেশি বিক্রি হয়েছে। কোনোদিন থ্রি পিস বেশি, আবার কোনোদিন শাড়ির চাহিদা বেশি। দুটোরই চাহিদা আছে।’
শারদ উৎসবে গতানুগতিক ড্রেস আছে ‘দেশাল’ এ। মেয়েদের জন্য নতুন টপস আর ছেলেদের জন্য নতুন পাঞ্জাবি নিয়ে এসেছে দেশাল।
‘কে ক্র্যাফট’ তৈরি করেছে লং-কুর্তি, টপস, শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, পাঞ্জাবি, শার্ট ও শিশুদের জন্য নতুন ডিজাইনের সব পোশাক। বরাবরের মতো এবারও যুগল ও ফ্যামিলি পোশাক রয়েছে তাদের। অর্থাৎ মা ও মেয়ের কুর্তি, বাবা ও ছেলের জন্য পাঞ্জাবি। এ ছাড়া, যুগলদের জন্য রয়েছে শাড়ি ও পাঞ্জাবি।
লিনেন, কটন, ভয়েল ও সিল্ক ইত্যাদি আরামদায়ক কাপড়ে প্রিন্টিং, এমব্রয়ডারি ও মিক্সড মিডিয়া ব্যবহার করা হয়েছে। এবারকার পূজা আয়োজনে উল্লেখযোগ্য রঙের মাঝে আছে মেরুন, ফিরোজা, লাইট ব্রাউন, কোরাল রেড ও অরেঞ্জ।
‘কে ক্রাফট’ এর বিক্রয়কর্মী হীরা আক্তার বলেন, ‘অন্যান্য বারের চেয়ে এবার ফ্যামিলি প্যাকেজ বেশি কিনছে। তবে ফ্যামিলি প্যাক আলাদাও বিক্রি হচ্ছে।’
দুর্গাপূজা সামনে রেখে ‘অঞ্জনস’ নিয়ে এসেছে বিভিন্ন ধরনের নকশা ও প্যাটার্নের বৈচিত্র্যময় পোশাক।
মেয়েদের ফতুয়া, কুর্তি ও টপস, জমকালো কাজের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি রয়েছে এখানে। ছোটদের জন্য আছে বিভিন্ন ধরনের রঙিন পোশাক। পোশাকে আরামের কথা চিন্তা করে বেছে নেয়া হয়েছে কটন, লিনেন কটন, সিল্ক, এন্ডি সিল্ক, জর্জেট, এন্ডি কটনসহ নতুন ধরনের উইভিং ডিজাইনের কাপড়। পোশাক ছাড়াও থাকছে বিভিন্ন ধরনের গয়না ও হোম টেক্সটাইল।
দুই মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন রিপা রায়। তিনি বলেন, ‘পূজাতে নারীদের শাড়িই পছন্দ বেশি। আমি দুটো শাড়ি কিনেছি। আর একটি জামদানি অথবা কাতান শাড়ি কিনতে মার্কেটে এসেছি।’
সপ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তী রায় বলেন, “পূজা উপলক্ষে ফ্যাশন হাউস ‘সারা’ থেকে কয়েকটি টপস কিনেছি। এখনও পার্টি ড্রেস কেনা হয়নি। সেটা কেনার জন্য আজ এসেছি। প্রায় সব দোকানেই পছন্দসই পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মৃত্তিকা সাহা জানান, থ্রি-পিস পরে সহজেই চলাফেরা করা যায়। তাই পূজা উপলক্ষে এবার তিনি দুটি থ্রি-পিস কিনেছেন।
দেশী দশের ‘নিপুন’ এর সেলসকর্মী বলেন, ‘ফ্যামিলি প্যাকের ক্ষেত্রে নিপুণ-এ মায়ের সঙ্গে মেয়ে আর বাবার সঙ্গে ছেলের ম্যাচিং পোশাক রয়েছে। পুরো পরিবারের ম্যাচিং পোশাক তাদের নেই।’
‘দেশী দশ’ এর পাশাপাশি পূজা উপলক্ষে নতুন পসরা সাজিয়েছে ফ্যাশন হাউস ‘সারা’। মেয়েদের জন্য থাকছে ফ্যাশন টপস, থ্রিপিস, কুর্তি, এথনিক, লেডিস ক্যাজুয়াল শার্ট, আনস্টিচ লউন থ্রিপিস,লন থ্রি পিস, পালাজ্জো এবং ডেনিম ওয়্যার। পাশাপাশি পার্টি ওয়্যার সিঙ্গেল পিস, এক্সক্লুসিভ প্রিন্টেড শাড়ি, প্রিন্টেড থ্রিপিস, ফ্যাশন টপস এবং প্রিন্টেড কাফতানও রয়েছে এখানে।
সারার পূজা কালেকশনে ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি, টি-শার্ট,ফতুয়া, কাতুয়া, ডেনিম ওয়্যার, ক্যাজুয়াল শার্ট, পোলো শার্ট, ফরমাল শার্ট, চিনো প্যান্ট, ডেনিম প্যান্ট, পায়জামা রয়েছে।
পাশাপাশি বাবা-ছেলের জন্য একই ডিজাইনের পাঞ্জাবিও রয়েছে পূজার স্পেশাল কালেকশনে।
সারা লাইফস্টাইল মেয়ে শিশুদের জন্য ফ্যাশন টপস, ফ্রক, থ্রিপিস ইত্যাদি নিয়ে এসেছে। আর ছেলে শিশুদের জন্য থাকছে কাতুয়া, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, সিঙ্গেল শার্ট, শার্ট ও প্যান্ট সেট, সিঙ্গেল প্যান্ট ইত্যাদি।
‘আড়ং’ এ মেয়েদের পাঞ্জাবি, কুর্তা, থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার উপরে পর্যন্ত। মেয়েদের সুতি থেকে শুরু করে জামদানি, সিল্ক, তসর, কাতান শাড়ি পাওয়া যাবে। যার দাম পড়বে ১ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ছেলেদের পাঞ্জাবি-পাজামা, শর্টকুর্তা, ফতুয়া, ও বিভিন্ন ধরনের শার্ট রয়েছে। এগুলোর দাম ৬৫০ থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত।
মেয়ে বাচ্চাদের পোশাকের দাম পড়বে ২৫০ থেকে ৪ হাজার টাকার উপর পর্যন্ত। আর ছেলে বাচ্চাদের পোশাক পড়বে ২৫০ থেকে ৩ হাজার টাকার উপরে।
আড়ংয়ের এক বিক্রয়কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গতবার করোনার কারণে উৎসবে কেউ বের হতে পারেনি, কিন্ত এবার বিক্রি ভালো। পূজাতে সবাই নতুন পোশাক কিনছে। পোশাকের পাশাপাশি তাদের গয়নাগুলোও ভালো বিক্রি হচ্ছে।’