শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাতলা গ্রামের ফারজানা আক্তার সন্তান জন্ম দিতে ভর্তি হয়েছেন সদর হাসপাতালে। শয্যা খালি নেই বলে তার ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের করিডোরের মেঝেতে। প্রসবের পরও নবজাতককে নিয়ে থাকতে হয়েছে মেঝেতে।
ফারজানা বলেন, ‘কোনো সিট পাই নাই। কোনো রহম সিঁড়ির কোনায় জায়গা পাইছি। কোনো বিছানাও পাই নাই। ছোডো বাচ্চাডারে লইয়া অনেক কষ্টে আছি। এইহান দিয়া হারাদিন মানুষ যায়-আহে, বাচ্চাডা ঘুমাইতে পারে না। হুদা কান্দে। কিয়ারুম, আমাগো গরিবের তো আর অন্য জায়গা নাই। হেললিগ্যাই সরকারি হাসপাতালে আইছি।’
১০০ শয্যার এই সদর হাসপাতাল ঘুরে বৃহস্পতিবার দেখা গেছে, পুরুষ, নারী ও শিশু বিভাগের ৯টি ওয়ার্ডের সব কটি শয্যায় রোগী ভর্তি। আর ফারজানার মতো বারান্দায় ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫৭ জন।
সদর উপজেলার চিকন্দি গ্রামের আয়শা বেগমকে এক মাস বয়সী সন্তান নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতে। বাচ্চার ঠান্ডা লেগেছে বলে তিনি জানান।
আয়শা বলেন, ‘ভাই গত তিন দিন ধইরা চোখে ঘুম নাই। যেমন গরম, হেমন নোংরা। মানুষের আওয়াজে ঘুম নাই, খাওয়া নাই। বাচ্চার লগে অহন আমিও অসুস্থ হইয়া যাইতাছি।’
শুধু শয্যাই নয়, হাসপাতালটির চিকিৎসক সংকটও ভোগান্তি বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ সেবাপ্রত্যাশীদের।
পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ষাটোর্ধ্ব আমেনা বেগম সকাল ৯টায় হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসেন ডাক্তার দেখাতে। তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাড়ি।
ক্ষুব্ধ আমেনা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বুড়া মানুষ। তিন ঘণ্টা খাড়াইয়া থাইক্কা আরও অসুস্থ হইয়া পড়ছি। আর পারি না। ওহন বাড়ি যাইমু গিয়া। হাসপাতালে এমন মানুষ আমার জনমেও দেহি নাই।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সেখানে ২৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মধ্যে ৯ জন কর্মরত আছেন। আর চিকিৎসা কর্মকর্তার ২৬টি পদে কর্মরত আছেন ১০ জন।
হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে ইনডোর ও আউটডোরে প্রতিদিন তিন শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে। তাদের বেশির ভাগই সিজনাল জ্বর, ঠান্ডা ও কাশি নিয়ে আসছে।
‘অনেক শিশু নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ রোগীর চাপ বেড়েছে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে।’
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মুনীর আহমেদ খান বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ার কারণে শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হচ্ছেন। বারান্দায় ও মেঝেতে জরুরি ভিত্তিতে বিছানার ব্যবস্থা করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, এ দুর্ভোগ সাময়িক। মৌসুমি রোগবালাই কমে গেলেই সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।