মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধির আলোচনার মধ্যে টানা তৃতীয় মাস কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগ বাড়াল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটির ৩৩ লাখেরও বেশি শেয়ার কিনেছে তারা।
সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৯.৫৯ শতাংশ ধরে রেখেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা, যা আগস্ট শেষে ছিল ৮.৭৪ শতাংশ।
তারও আগের মাসে জুলাই শেষে কোম্পানির মোট শেয়ারের ৮.৪৫ শতাংশ ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। অর্থাৎ দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন নিয়ে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা কাজ করলেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অনেকটাই নির্ভার, যে কারণে তারা বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শকিল রিজভী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সব সময় পুঁজিবাজারে সব দিকের খবর নিয়েই শেয়ার কিনেন আবার বিক্রি করেন। মুনাফা হতে পারে এমন যে কোনো কোম্পানিতে তারা বিনিয়োগ করতে পারে। এখানে দোষের কিছু নেই।
গত চার মাসে কেপিসিএলের শেয়ারের হিস্যার তথ্য।
‘আবার তাদের কাছে কোনো কোম্পানির সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলেও বা আগামীতে ভালো করবে এমন সম্ভাবনা থাকলেও বিনিয়োগ করতে পারে।’
সব শেয়ার বিক্রি করে আবার কেনা শুরু
গত মে মাসে কোম্পানিটির দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর মে ও জুন মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা প্রায় সব শেয়ার বিক্রি করে দেয়।
গত এপ্রিল শেষেও কোম্পানির মোট শেয়ারের ৯.২ শতাংশ ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর ০.৩০ শতাংশ ছিল বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে।
৩০ মে শেষে কোম্পানির শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমে দাঁড়ায় ১.৬৫ শতাংশ আর বিদেশি বিনিয়োগ কমে হয় ০.০২ শতাংশ।
জুন শেষে আরও কমে তাদের হিস্যা। ৩০ জুন শেষে কোম্পানির মোট শেয়ারের ০.৫২ শতাংশ থাকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর মে শেষে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে যত শেয়ার ছিল, তার অর্ধেকও বিক্রি করে দেয়া হয়। তখন মোট শেয়ারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হিস্যা ছিল ০.০১ শতাংশ।
সে সময় কেপিসিএলের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে শেয়ার দর কমে যায়। এক পর্যায়ে শেয়ার মূল্য ৩৫ টাকার ঘরে নেমে আসে।
তবে যে আইনে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অনুমোদন দেয়া হয়, সেই আইনের মেয়াদ আরও বেড়েছে ৫ বছর। এরপর সেপ্টেম্বরের শুরুতে শেয়ার দর আবার বাড়ে।
তবে জুলাইয়ে কেপিসিএলের মোট শেয়ারের ৮.৪৫ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ধারণ করে থাকে। আর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকে ০.২১ শতাংশ।
৩৯৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিতে মোট শেয়ার সংখ্যা ৩৯ কোটি ৭৪ লাখ ১৩ হাজার ১৭৯টি।
এই হিসাবে জুলাই মাসে ৩ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৮৬৫টি শেয়ার কিনেছে। আর বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কিনে ৭ লাখ ৯৪ হাজার ৮২৬টি।
অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মিলিয়ে এই মাসে কিনেছে মোট ৩ কোটি ২৩ লাখ ৯ হাজার ৬৯১টি শেয়ার।
আগস্টে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আরও ১১ লাখ ৫২ হাজার ৪৯৮টি শেয়ার কেনে। ওই মাস শেষে কেপিসিএলের মোট শেয়ারের ৮.৭৪ শতাংশ শেয়ার থাকে তাদের হাতে।
সেপ্টেম্বর শেষে মোট শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিযোগকারীদের হিস্যা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৯.৫৯ শতাংশ। অর্থাৎ এই এক মাসে মোট শেয়ারের আরও ০.৮৫ শতাংশ শেয়ার কেনে তারা। অর্থাৎ এই মাসে তারা কিনেছে ৩৩ লাখ ৭৮ হাজার ১২টি শেয়ার।
সেপ্টেম্বর শেষে এই হিসাবটি প্রকাশ করেছে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ। তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এখনও এই হিসাব প্রকাশ করা হয়নি। এর আগের তিন মাসেও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জেই হিসাবটি আগে প্রকাশ করা হয়।
কেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধির চুক্তি কবে
ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে আইনের মেয়াদ গত ১৬ সেপ্টেম্বর ৫ বছর বাড়ানোর পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধারণা ছড়িয়ে পড়ে যে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বেড়ে গেছে। পরে কেপিসিএল ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগারীদেরকে সাবধান করে যে, আইনের মেয়াদ বাড়া মানেই কেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি নয়। এ নিয়ে আলোচনা চলছে।
আইনের মেয়াদ বৃদ্ধির পাঁচ দিন পর ২১ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চার কোম্পানির কর্মকর্তাদের মধ্যে চুক্তির শর্ত নিয়ে বৈঠক হয়। তবে সেই বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
বৈঠকে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে এ ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ কেনার জন্য গ্যারান্টি চাওয়া হয়। তারা বলেছে, ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকলে এই বিষয়ে আগে থেকে সিদ্ধান্ত না হলে তাদের পক্ষে কোম্পানি চালানো কঠিন।
বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি মূল্য বা ট্যারিফ হার নিয়েও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকায় ট্যারিফ বেশি চেয়েছে কোম্পানিগুলো।
এর এক সপ্তাহ পর ২৯ সেপ্টেম্বর চার বিদ্যুৎ কোম্পানির কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবির চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন। পিডিবি প্রধান কোম্পানিগুলোর বক্তব্য শোনেন। তবে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
কেপিসিএল ছাড়াও আরও তিনটি কোম্পানির তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে আলোচনা চলছে। এর একটি কোম্পানি হলো সামিট পাওয়ার। বৃহস্পতিবার কোম্পানিটি ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে এ বিষয়ে একটি বার্তা দিয়েছে।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর আলোচনা চলছে। বিষয়টি সরকারের জোর বিবেচনায় আছে।