বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রেমিট্যান্স কমার কারণ বোঝার চেষ্টায় অর্থমন্ত্রী

  •    
  • ৬ অক্টোবর, ২০২১ ২০:০৭

‘আগে যে পরিমাণ জনবল বিদেশে ছিল, এখন সে পরিমাণ বিদেশে আছে কি না, সেটা নিশ্চিত হওয়ার পরেও যদি কম আসে, তখন বুঝতে হবে অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে।‘

করোনাকালে বিশ্ব অর্থনীতি যখন স্থবির, তখন প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে জোয়ার বইলেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি ফেরার পর তা কমে আসার কারণ বোঝার চেষ্টা করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

২০২০ সালের শুরুতে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর রেমিট্যান্স কমে আসবে বলে বিভিন্ন সংস্থা পূর্বাভাস দিলেও ঘটে উল্টো। প্রতি মাসেই আসতে থাকে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয়। আর এতে ভর করে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উঠে নতুন উচ্চতায়।

তবে গত তিন মাস ধরে এই রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা পড়েছে।

অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রবাহ স্বাভাবিক হবে।

বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে এ কথা বলেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, ‘আগে যে পরিমাণ জনবল বিদেশে ছিল, এখন সে পরিমাণ বিদেশে আছে কি না, সেটা নিশ্চিত হওয়ার পরেও যদি কম আসে, তখন বুঝতে হবে অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে।‘

তবে কামাল নিজেই কিছু অনুমান তুলে ধরেন। বলেন, ‘রেমিট্যান্স কম আসার মূল কারণ হচ্ছে, বিদেশে যেসব প্রবাসী থাকেন, তাদের অনেকেই করোনার কারণে দেশে এসে আর যেতে পারেননি।’

কিছুটা কমলেও যে পরিমাণ প্রবাসী আয় আসছে, তাতে সন্তোষও প্রকাশ করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘গত ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এখনও যে গতিতে আসছে, সে গতিতে এলে ২২ থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলার আসবে। ২২ বিলিয়ন ডলার কিন্তু কম না।’

দুই তিন মাসে স্বাভাবিক হওয়ার আশা

এমন আশা করার কারণ ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, ‘অনেক প্রবাসী যারা বাড়িতে আটকে পড়েছিল তারা করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পরে কাজে ফিরে যাচ্ছে।

‘রেমিট্যান্স আসে তাদের কাছ থেকেই, যারা বিদেশে যান। আগে যত পরিমাণ বিদেশে ছিলেন, এখন সেই পরিমাণ নেই। যাওয়া শুরু হয়েছে। আমার মনে হয়, দুই-তিন মাসে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।’

টাকা বিদেশ হয়ে দেশে আসার সন্দেহ নাকচ করলেন অর্থমন্ত্রী

রেমিট্যান্সের প্রণোদনার সুযোগ নিতে টাকা বিদেশে পাচারের যে সন্দেহ করা হচ্ছে, তা নাকচ করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এই ধরনের সন্দেহের বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটা কোনো সঠিক প্রস্তাব বলে আমার মনে হচ্ছে না। আমার মনে হয় এ ধরনের কথাবার্তা ঠিক না।’

অন্য কোনো টাকা রেমিট্যান্সের নামে দেশে ঢুকছে কি না, তা খতিয়ে দেখার সুপারিশ করেছিল গবেষণা সংস্থা সিপিডি।

বাংলাদেশের বিদেশি অর্থ উপার্জনের বড় খাত হচ্ছে প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিটেন্স। এই অর্থ বৈধভাবে পাঠানো উৎসাহিত করতে সরকার ২ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে।

অর্থাৎ প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে সরকার আরও ২ টাকা যোগ হয়ে মোট ১০২ টাকা দিচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ বলে প্রণোদনা পাওয়ার জন্য দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে আবার নিয়ে আসা হয়। আমি বার বার একটা কথা বোঝাবার চেষ্টা করেছি, দেশে তো বহু খাত আছে, যাদের আমরা ইনসেনটিভ দিয়ে থাকি। মাছ, সবজিতে আমরা ইনসেনটিভ দেই, তাহলে শুধু রেমিটেন্স খাতকে তারা টার্গেট করবে কেন?’

সন্দেহ না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘যে পরিমাণ জনবল আমাদের বিদেশে আছে, সেই অনুপাতে টাকা আসছে কি না, সেটা দেখতে হবে। এর চেয়ে বেশি আসলে তখন বুঝতে হবে যে এখানে অন্য কিছু হচ্ছে।’

রেমিট্যান্সের হিসাবনিকাশ

বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স প্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে ১৭২ কোটি ৬০ লাখ (১.৭২ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ কম। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

এটি গত ১৫ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।

গত বছরের মার্চে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স তলানিতে নেমে আসে; ওই মাসে মাত্র ১০৯ কোটি ৩০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

এরপর থেকে অবশ্য মহামারির মধ্যেই রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়তে থাকে। মে মাসে আসে ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। জুনে তা বেড়ে ১৮৩ কোটি ২৬ লাখ ডলারে ওঠে।

২০২০-২১ অর্থবছরের পুরোটা সময় জুড়ে (২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন লক্ষ্য করা যায়। ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি (২৪.৭৮) ডলার রেমিট্যান্স পাঠায় প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।

গত অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে সাত মাসই ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।

কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সপ্রবাহে ভাটার টান লক্ষ্য করা যায়। প্রথম মাস জুলাইয়ে আসে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার। আগস্টে আসে ১৮১ কোটি ডলার।

সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৫৪০ কোটি ৮০ লাখ (৫.৪০ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম।

২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৬৭১ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।

এ বিভাগের আরো খবর