প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘নিরাপদ ডটকম’-এর পরিচালক ফারহানা আফরোজ এ্যানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণখানের কাওলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান।
সিআইডি জানায়, ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘নিরাপদ ডটকম’-এর বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় গত ২ অক্টোবর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
আজাদ রহমান জানান, আগের মামলাতেই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ফারহানা আফরোজ এ্যানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে সিআইডির অভিযান চলছে।
সিআইডি বলছে, ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, রিং আইডিসহ বেশ কিছু ই-কমার্স সাইটের মতো গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের জন্য পরিকল্পনা সাজিয়েছিল নিরাপদ ডটকম। প্রতারণায় জড়িত এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ যাচাইয়ের পর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ই-কমার্সভিত্তিক আরও কিছু প্রতিষ্ঠান নজরদারিতে আছে।
এর আগে জুলাই মাসে ই-কমার্স সাইট নিরাপদ ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহরিয়ার খানকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
রাজধানীর শান্তিনগর থেকে তাকে গ্রেপ্তারের সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত পাঁচটি কম্পিউটার, দুটি ল্যাপটপ, দুটি হার্ডডিস্ক, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩টি চেক বই, ১৩টি ডেভিড/ক্রেডিড কার্ড, ২৩টি সিম কার্ড, সার্ভারের তথ্য ও অন্যান্য কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।
তখন ডিবির উপ-কমিশনার শরীফুল ইসলাম বলেন, প্রতারণার শিকার এক ব্যক্তি আদাবর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। থানার পুলিশের পাশাপাশি ডিবি সাইবার ক্রাইম বিভাগ মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তে যথাযথ তথ্যের ভিত্তিতে শাহরিয়ার খানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ই-কমার্স সাইট নিরাপদ ডটকমের প্রতারণা সম্পর্কে গোয়েন্দা এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার শাহরিয়ার ২০২০ সালের আগস্ট মাসে ‘নিরাপদ ডটকম’ নামে একটি অনলাইনভিত্তিক ই-কমার্স সাইট খুলে বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেন। তাদের কাছ থেকে একটি পেমেন্ট গেটওয়ের (এসএসএল কমার্স) মাধ্যমে অগ্রিম অর্থ হাতিয়ে নেন। তারা ৫০% ডিসকাউন্টে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফ্রিজ, ওভেনসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিকস আইটেম ৩০ দিনের মধ্যে হোম ডেলিভারি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকদের প্রলোভিত করেন।
পুলিশের তথ্য অনুসারে, নিরাপদ ডটকমের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৪ হাজার এবং তারা মাসে প্রায় ১২ হাজার অর্ডার পায়। যার মাধ্যমে প্রায় ৭-৮ কোটি টাকা তার ব্যাংক হিসাবে যুক্ত হয়। যারা পণ্য অর্ডার করেছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছাত্র ও অল্প বেতনের চাকরিজীবী। প্রাথমিক অবস্থায় তারা কিছু পণ্য ডেলিভারি করে সেই গ্রাহকদের দিয়ে তাদের পেজে পজিটিভ রিভিউ পোস্ট করিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে।
পরবর্তী সময়ে অধিক সংখ্যায় অর্ডার এবং অগ্রিম অর্থ পেলে তারা পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে। অনেক দিন পেরিয়ে গেলে গ্রাহকরা যখন বুঝতে পারেন তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তখন বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যম ও মিডিয়ার মাধ্যমে এর প্রতিকার দাবি করতে থাকেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি জানতে পেরেছে, গ্রাহকদের যারা চাপ প্রয়োগ করতে পেরেছেন, তাদের টাকা রিফান্ডের কথা বলে ব্যাংক চেক দিলেও টাকা ওঠাতে পারেননি। বারবার চেক ডিজঅনার হওয়ার অভিযোগ আসতে থাকলে প্রতারক গ্রাহকদের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।