সরকারের অন্যতম মেগাপ্রকল্প কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ পূর্ণাঙ্গ রূপ পাওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী শুক্রবার মধ্যরাতে টানেলটির দ্বিতীয় মুখ উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা (একনেক) শেষে মঙ্গলবার তিনি এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বঙ্গবন্ধু টানেল আমাদের স্বপ্নের অন্যতম বড় মেগাপ্রকল্প, রোমাঞ্চকর প্রকল্প। এটা ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই শেষ হয়ে যাবে বলে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা একনেক বৈঠকে জানিয়েছেন।’
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক প্রধান শেখ হাসিনা।
সভায় কর্ণফুলী টানেল নিয়ে আলোচনা হয় জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্পটির কাজ আগেভাগেই শেষ হবে। আগামী শুক্রবার এর দ্বিতীয় মুখ খুলে যাবে। একটা মুখ তো আগে খুলেছিল, দ্বিতীয়টিও খুলে দেয়া হবে। এতে আমাদের আসা-যাওয়ার পথ পুরোটাই উন্মুক্ত হবে, এক হবে।’
‘আশা ছিল, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এটি উদ্বোধন হবে। এখন আশা করা হচ্ছে, এত দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না, তার অনেক আগেই উদ্বোধন করা যাবে। তবে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারছি না, এটা কর্তৃপক্ষ ঠিক করবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এটা সরকারের জন্য অবশ্যই অনেক বড় আনন্দের ব্যাপার। প্রায় সময় কথা উঠেছে, কোনো প্রকল্প সময়মতো শেষ হয় না, আগায় না। এটি একটি বড় অভিযোগ। এ প্রকল্পে তেমনটি হয়নি, সময়ের আগেই শেষ হচ্ছে। মূল কাজ এখন শেষ হচ্ছে। তবে আরও অনেক কাজ বাকি আছে।’
২০১৫ সালে হাতে নেয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন রয়েছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে চীন সরকার।
দেশে প্রথমবারের মতো কোনো নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন এই টানেলের নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নামে। টানেল নির্মিত হলে দেশের জিডিপি শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এর মধ্যে টানেলের প্রতিটি টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেন থাকবে। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযুক্ত সড়ক থাকবে। আর রয়েছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ ওভারব্রিজ।
২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে নির্বাচনী সমাবেশে এই টানেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বছরই আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসার পর এই টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১২ সালে সেতু কর্তৃপক্ষ, সিসিসিসিএল ও অভি অরূপ অ্যান্ড পার্টনার্স হংকং লিমিটেড যৌথভাবে টানেল নির্মাণের কারিগরি ও অর্থনৈতিক সমীক্ষা করে। এরপর ২০১৪ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে দুই দেশের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে (সরকারের সঙ্গে সরকারের) সমঝোতা স্মারক সই হয়।
চীন সরকারই সিসিসিসিএলকে এই টানেল নির্মাণের জন্য মনোনীত করে। এ বিষয়ে ২০১৪ সালের ৩০ জুন সেতু কর্তৃপক্ষ ও সিসিসিসির মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি সই হয়।