টানা তিন সপ্তাহ ধরে দর সংশোধনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়ালেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বলেছেন, আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করলে ক্ষতিই হয়।
পুঁজিবাজার অতিমূল্যায়িত নয়, আগে বলা এই মূল্যায়ন আবার তুলে ধরে তিনি বলেছেন, বাজারের আরও অনেক দূর যাওয়ার সুযোগ আছে।
সোমবার আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনে ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২১’এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
গত বছর শিবলী রুবাইয়াতের নেতৃত্বে বিএসইসি পুনর্গঠনের পর সোয়া এক বছরে পুঁজিবাজারে ব্যাপক উত্থান হয়েছে। মূল্য সূচক বেড়েছে তিন হাজার পয়েন্টের বেশি।
তবে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে দর সংশোধন শুরু হওয়ার পর স্বল্প মূলধনি ও লোকসানি কোম্পানির ব্যাপক দরপতনের কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
অবশ্য গত কয়েক মাসে এই ধরনের কোম্পানিতে মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগ হয়েছে। আর দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। দর বৃদ্ধির পর সংশোধন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও আগের মতোই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দাম আরও কমবে-এমন আশঙ্কায় অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।
আতঙ্কিত হলে ক্ষতি ছাড়া আর কিছু হয় না- এই বিষয়টি এর আগেও বলেছেন শিবলী রুবাইয়াত। বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেক অসাধু ব্যক্তি আছে যারা মার্কেটের ইনডেক্সকে আতঙ্ক রূপে দেখিয়ে মার্কেটে প্যানিক তৈরি করতে চায়। কিন্তু প্যানিক তৈরি করলে বিনিয়োগকারীরা কখনই লাভবান হবে না। এতে কেবল সুবিধাভোগীরাই লাভবান হবে। আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এই বিষয়টি বুঝতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুঁজিবাজারের খোঁজখবর রাখেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এছাড়া প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তিনি সহযোগিতা করেন। এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়।’
পুঁজিবাজার অতিমূল্যায়িত নয়
পুঁজিবাজার বেশি বেড়ে গেছে- নানা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের এই ধরনের মন্তব্য নিয়ে নাখোশ হয়েছে বিএসইসি।
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি, জিডিপি ও মাথাপিছু আয় যে হারে উন্নতি হয়েছে, সে হারে কিন্তু পুঁজিবাজার বাড়েনি। কিন্তু কেউ এ বিষয়গুলোর সঙ্গে তুলনা করে না।
‘সিকিউরিটিজের দর বাড়লে মূল্যসূচক বাড়ে-এটাই স্বাভাবিক। তাই শুধু এই সূচক দিয়ে বাজারকে বিবেচনা করা ঠিক হবে না। মূল্য-আয় (পিই) অনুপাতকে বিবেচনায় নিতে হবে। এ বিবেচনায় পুঁজিবাজার অতিমূল্যায়িত না।
‘গত মাস দুয়েক ধরে খাতভিত্তিক শেয়ারের দাম বাড়ছে। ফলে ইনডেক্সও বাড়ছে। ইনডেক্স বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ বাস্তবতার বাইরে গিয়ে পুঁজিবাজারকে অতিমূল্যায়িত হয়েছে বলে সমালোচনা করছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র হলো পুঁজিবাজার অতিমূল্যায়িত না।’
কেবল সূচক দেখে হতাশ বা উল্লসিত না হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
কমিশন পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে নতুন নতুন পণ্য আনার চেষ্টা করছে বলেও জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান। বলেন, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে ও বিনিয়োগের রিটার্ন নিশ্চিতে কাজ করছে। জোরদার করা হয়েছে সুশাসন।
বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন দেশে করা রোড শোর কথা তুলে ধরে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘সেসব দেশে আমাদের দেশের অর্থনীতি, আমাদের প্রোডাক্ট সম্পর্কে ধারণা দিতে পেরেছি। সেসব দেশ থেকে বিনিয়োগ পাওয়ার আশ্বাসও পেয়েছি।’
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কমিশনার শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন থাইল্যান্ডের স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট ও এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সহকারী অধ্যাপক তানাতাত পুট্রাসুয়ান। বক্তব্য রাখেন কমিশনার মিজানুর রহমান ও কমিশনার আব্দুল হালিম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সেলিম উল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মুসলিম চৌধুরী।