প্যান্ডোরা পেপার্স নামে অফশোর কোম্পানির গোপন নথি ফাঁসের পর বেরিয়ে আসছে বিশ্বের প্রভাবশালী অনেকের আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য। এই নথিতে রয়েছে নেপালের শীর্ষ ধনী বিনোদ চৌধুরীর নাম। আর বিনোদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের জেরে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর নাম এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।
ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) রোববার রাতে প্রকাশ করে প্যান্ডোরা পেপার্স। সংস্থাটি বলছে, তাদের কাছে থাকা ১ কোটি ১৯ লাখ আর্থিক লেনদেনের নথিতে ১৪টি অফশোর সার্ভিস কোম্পানির ২.৯৪ টেরাবাইট গোপন তথ্য রয়েছে।
এই নথিতে নেপালের বিনোদ চৌধুরী পরিবারের সঙ্গে দেশটির সবচেয়ে পুরোনো ব্যবসায়িক পরিবার গোলচাসহ বেশ কয়েকজন রাজনীতিকের নামও এসেছে।
প্যান্ডোরা পেপার্সে বলা হয়েছে বিনোদ চৌধুরী তার স্ত্রী ও তিন ছেলে নিরভানা, ভারুন ও রাহুলের নামে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে কোম্পানি খুলেছেন।
এতে বলা হয়, ‘ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে সিনোভেশন ইনকরপোরেটেড, সিজি হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড, সেনসেই ক্যাপিটাল পার্টনার্স ইনকরপোরেটেড ও সিঙ্গাপুরে সিজি হসপিটালিটি হোল্ডিংস গ্লোবাল লিমিটেড কোম্পানিগুলো চৌধুরী পরিবারের নামে নিবন্ধিত।’
প্যান্ডোরা পেপার্সে কোম্পানির চিঠিপত্র, শেয়ার, অর্থ স্থানান্তর এবং চৌধুরী পরিবারের সদস্য ও অংশীদারদের মধ্যে বিভিন্ন লেনদেনের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। এসব অংশীদারদের কেউ কেউ পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের নাগরিক।
এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালের (এএনআই) প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিবন্ধিত বিনোদ চৌধুরীর কোম্পানি সিনোভেশনে জড়িতদের একজন হলেন ‘বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক’ আব্দুল আউয়াল মিন্টু, যার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে ঢাকায় অর্থ পাচার ও ঋণ জালিয়াতির তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মিন্টু।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আবদুল আউয়াল মিন্টুর ব্যক্তিগত নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তার সহকারী হুমায়ন কবির সেটি রিসিভ করেন।
প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু জানানো হলে নিউজবাংলাকে হুমায়ন কবির বলেন, ‘স্যার বলে দিয়েছেন, এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না।
‘এর আগেও অনেকে জানতে চেয়ে ফোন দিয়েছেন। কিন্তু স্যার কোনো মন্তব্য করেননি। স্ট্রিক্ট বলে দিয়েছেন, এ বিষয়ে তিনি কথা বলবেন না, ফোনও ধরবেন না।’
এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে বহুল আলোচিত প্যারাডাইস পেপার্সে আবদুল আউয়াল মিন্টু, তার স্ত্রীসহ তিন ছেলের নাম এসেছিল।
হিমালয়ের পাদদেশের নেপালের একমাত্র বিলিওনিয়ার বিনোদ চৌধুরী দেশটির হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে কংগ্রেসের মনোনীত একজন সদস্য।
প্যান্ডোরা পেপার্সে জড়িত আরেকটি নেপালি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে গোলচা অর্গানাইজেশন। ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যায়, তাদেরও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে অফশোর কোম্পানি রয়েছে। এর মালিক কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা লোকমান্য গোলচা। তার ভাই প্রয়াত দিবাকর গোলচা, প্রয়াত মহেন্দ্র কুমার গোলচা, চাচাতো ভাই চন্দ্র কুমার গোলচা ও দিবাকরের পুত্র হিতেশ গোলচার নামও রয়েছে মালিকানায়।
ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা গেছে, ওভারসিজ ম্যানেজমেন্ট নামে একটি জেনেভা ভিত্তিক আইন সংস্থা গোলচা পরিবারের সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত ফ্ল্যাটউড লিমিটেডের পক্ষে ২০০৮ সালে সুইজারল্যান্ডের বার্কলেজ ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। দিবাকর গোলচা ২০০৮ সালে ফ্ল্যাটউড লিমিটেডের মাধ্যমে নেপালে ইস্টার্ন সুগার মিলস লিমিটেডের শেয়ার কিনেছিলেন।
নেপালের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান, গোলচা ও এর প্রতিষ্ঠাতারা প্রায় ৭০ বছর আগে বিরাটনগর জুট মিল প্রতিষ্ঠা করেন। গোলচা প্রতিষ্ঠানটি প্রথম নেপালি কোম্পানি, যারা ফ্ল্যাটউডের মাধ্যমে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস থেকে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসে।
প্যান্ডোরা পেপার্সে নেপালের অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন রাধেশ্যাম শরাফ ও তার পরিবার, যারা কাঠমান্ডুর তারাগাঁও রিজেন্সি হোটেল ও ইয়াক অ্যান্ড ইয়েটি হোটেলের মালিক। এ ছাড়া নেপালি ব্যবসায়ী রাজেন্দ্র শাক্য, পুরুষোত্তম পৌডিয়াল, সুধীর মিত্তলসহ বেশ কয়েকজনের নাম আছে প্যান্ডোরা পেপার্সে।