বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রপ্তানিতে রেকর্ড আয় সেপ্টেম্বরে

  •    
  • ৪ অক্টোবর, ২০২১ ১৫:০৩

সেপ্টেম্বর মাসে ৪১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে এত বেশি বিদেশি মুদ্রা আসেনি। রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকের ওপর ভর করেই এই রেকর্ড হয়েছে।

যেমনটা প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তাই হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন হয়েছে।

সদ্য শেষ হওয়া সেপ্টেম্বর মাসে ৪১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৩৫ হাজার ৬১০ কোটি টাকা।

এক মাসের হিসাবে এটি রেকর্ড। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে এত বেশি বিদেশি মুদ্রা আসেনি।

রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকের ওপর ভর করেই এই রেকর্ড হয়েছে। পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, আগামী দিনগুলোতেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সোমবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার আয় করেছে। এই অঙ্ক গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার বা ৩৮ শতাংশ বেশি।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩০১ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।

অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মোট ১ হাজার ১০২ কোটি ২০ লাখ (১১.০২ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি।

২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময় পণ্য রপ্তানি থেকে ৯৮৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই তিন মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮২ দশমিক ২০ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।

এই তিন মাসে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অথচ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১১ দশমিক ০২ শতাংশ নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় মাস আগস্টে সেই প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় এসে ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশে ওঠে।

সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে পোশাক রপ্তানিতে এক লাফে সেই প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৪১ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাংলাদেশ ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি বিদেশি মুদ্রা আয় করেছে। এ তিন মাসে লক্ষ্য ধরা ছিল এক হাজার ৪৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার (১০.৪৩ বিলিয়ন) ডলার।

১৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি নিয়ে গত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ছিল বড় ‘ধাক্কা’। তবে দ্বিতীয় মাস আগস্টেই রপ্তানি ফের ঘুরে দাঁড়ায়। ওই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে গত বছরের আগস্টের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি আয় দেশে এসেছে।

তবে অর্থবছরের দুই মাসের হিসাবে দশমিক ৩১ শতাংশ আয় কম আসে। অর্থাৎ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৩১ শতাংশ আয় কম এসেছিল পণ্য রপ্তানি থেকে।

রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন, আগামী মাসগুলোতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকবে। বড় ধরনের আর কোনো সংকট দেখা না দিলে গত অর্থবছরের চেয়েও বেশি প্রবৃদ্ধি নিয়ে এ অর্থবছর শেষ হবে।

পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোরবানির ঈদের ছুটি এবং লকডাউনের কারণে ১০-১১ দিন পোশাক কারখানা বন্ধ থাকায় জুলাই মাসে রপ্তানি আয় কম এসেছিল। ১ আগস্ট থেকে কারখানা খুলেছে। এখন প্রচুর অর্ডার আসছে; দামও বেশি পাচ্ছি। পুরোদমে উৎপাদন হচ্ছে। সব কারখানাতেই এখন উৎসব উৎসব ভাব।’

তিনি বলেন, ‘প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। মানুষ আগের মতো পোশাক কিনছে। সে কারণেই প্রচুর অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের এখানেও করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ২৫ ডিসেম্বরের বড়দিনকে ঘিরেও ভালো অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে।

‘সব মিলিয়ে বাংলাদেশের পোশাকের জন্য সুদিন আসছে বলেই মনে হচ্ছে। এখন যদি আর কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে আগামী দিনগুলোতে পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বাড়বে। এবারও একটা ভালো প্রবৃদ্ধি উপহার দিতে পারব আমরা।’

ফারুক হাসান বলেন, ‘জুলাইয়ে রপ্তানি আয় কম আসবে, এটা অবধারিত ছিল। ঈদের ছুটি ও লকডাউনের কারণে টানা ১১/১২ দিন সব কারখানা বন্ধ ছিল। উৎপাদন হয়নি; রপ্তানিও হয়নি।

‘আমরা ওই মাসের রপ্তানির চিত্র নিয়ে মোটেই বিচলিত ছিলাম না। আশার কথা হচ্ছে, সরকার আমাদের সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের পোশাকের বড় বাজার ইউরোপ-আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। মানুষজন আগের মতো কেনাকাটা শুরু করেছে। আগামী দিনগুলোতে রপ্তানি বাড়বে। গত অর্থবছরের একটা ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে এই অর্থবছরও শেষ হবে বলে আশা করছি।’

একই কথা বলেছেন নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব বাণিজ্যের যে গতিবিধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বেশ বাড়বে। ইউরোপ-আমেরিকায় পরিস্থিতি ভালো। তারা এখন প্রচুর পোশাক কেনা শুরু করেছে। আমরা যদি তাদের চাহিদা অনুযায়ী পোশাক দিতে পারি, তাহলে রপ্তানি আরও বাড়বে।’

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৯০৫ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১১ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ।

এই তিন মাসে নিট পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। উভেনে বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি কমেছে ৩১ শতাংশ।

তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত মাছ, কৃষি পণ্যসহ অন্য সব খাতের রপ্তানি আয় বেড়েছে।

জুলাই-সেপ্টেম্বর পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ২১ কোটি ২৩ লাখ ডলার আয় হয়েছে। গত বছরের এ তিন মাসে আয় হয়েছিল ৩০ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ কোটি ২৮ লাখ ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে পাট খাতের রপ্তানি আয় কমেছে ৩১ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ৩৮ শতাংশ।

এ তিন মাসে হিমায়িত মাছ রপ্তানি বেড়েছে ১৬ শতাংশ। কৃষিপণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২৭ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ।

ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ শতাংশ।

১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের মোট লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা আছে ৩৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।

তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি (৩৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম।

এ বিভাগের আরো খবর