বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রোহিঙ্গা ক্যাম্প: চার বছরে ৭১ খুন, ১৩০০ মামলা

  •    
  • ৪ অক্টোবর, ২০২১ ১৩:৫৮

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালের আগস্টে বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়ার পর রোহিঙ্গাদের অপরাধ প্রতিবছর আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সবশেষ ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহকে উখিয়ার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ক্যাম্পে হত্যা করা হয়।

কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে অপরাধ। ঘটছে প্রাণহানিও। নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে মানবিক কারণে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গারা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালের আগস্টে বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়ার পর রোহিঙ্গাদের অপরাধ প্রতিবছর আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত চার বছরে ক্যাম্পে হত্যার শিকার হয়েছেন ৭১ জন। মামলা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩০০টি।

সবশেষ ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহকে উখিয়ার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ক্যাম্পের নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করে অজ্ঞাতপরিচয় অস্ত্রধারীরা।

রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদ ও তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা নিয়ে সোচ্চার ছিলেন মুহিবুল্লাহ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতি পাওয়া এ নেতাকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরাই হত্যা করেছে বলে অভিযোগ।

মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিব উল্লাহর দাবি, ওই হত্যাকাণ্ডে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসা জড়িত।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকছে এসব রোহিঙ্গা। মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়ার পর তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।

তবে রোহিঙ্গাদের এভাবে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়া নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা আশঙ্কা। রোহিঙ্গাদের নিয়ে এখন বিপাকে আছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই।

তারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে খুন, গুম, অপহরণ, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধ বেড়েই চলেছে। দিনে ক্যাম্পগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাতে নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ। এতে কক্সবাজার জেলাবাসীর কাছে এখন মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে রোহিঙ্গারা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যেও মিলেছে রোহিঙ্গাদের অপরাধপ্রবণতার চিত্র। পুলিশের তথ্যানুযায়ী, গত ৪ বছরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে ১২ ধরনের অপরাধে প্রায় ১ হাজার ৩০০ মামলা হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে ২ হাজার ৭৫ রোহিঙ্গাকে।

অস্ত্র হাতে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করা রোহিঙ্গা যুবকেরা। ছবি: সংগৃহীত

অপরাধের মধ্যে আছে হত্যা, অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ, অপহরণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা, ডাকাতি বা ডাকাতির প্রস্তুতি ও মানবপাচার।

এর মধ্যে ৭১টি খুন, ৭৬৪টি মাদক, ২৮টি মানব পাচার, ৮৭টি অস্ত্র, ৬৫টি ধর্ষণ, ১০টি ডাকাতি, ৩৪টি অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় এবং অন্যান্য আইনে ৮৯টি মামলা হয়েছে।

বছরভিত্তিক অপরাধের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়ার বছর নানা অপরাধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ছিল ৭৬টি। আসামি ছিলেন ১৫৯ জন।

২০১৮ সালে মামলার সংখ্যা বেড়ে হয় ২০৮। আসামির সংখ্যা ছিল ৪১৪। ২০১৯ সালে মামলার সংখ্যা বাড়ে আরও ৫৫টি। ২৬৩ মামলায় আসামি করা হয় ৬৪৯ রোহিঙ্গাকে।

২০২০ সালে মামলার সংখ্যা কিছুটা কমে আসে। ৪৪৯ রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা হয় ১৮৪টি।

তবে চলতি বছর রোহিঙ্গাদের অপরাধের মাত্রা সীমা ছাড়িয়েছে। আগস্ট পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৫৭০টি। আসামি করা হয়েছে ১ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে।

কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রোহিঙ্গারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। যত দিন যাচ্ছে, ততই তারা ভয়ংকর রূপে দেখা দিচ্ছে।

বাহারছড়া ইউপির চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া রোহিঙ্গারা এখন স্থানীয়দের কাছে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত মাদক, মানবপাচার, অবৈধ অস্ত্র, স্বর্ণ চোরাকারবারি, অপহরণ, খুনসহ নানা অপকর্ম করেই যাচ্ছে।

‘কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার লাগাম যদি টেনে ধরা না হয় তবে এখানকার স্থানীয়দের পরবাসী হয়ে থাকতে হবে।’

কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান অভিযোগ করেন, কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির জন্য মূলত রোহিঙ্গারা দায়ী। এখানে যে পরিমাণ অপরাধ এখন হচ্ছে, তা অতীতে কখনও হয়নি। রোহিঙ্গারা ভাড়ায় খুন থেকে শুরু করে অপরাধমূলক নানা কাজে জড়িয়ে পড়ছে।

কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যেভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। যতই সময় গড়াচ্ছে, ততই তারা ভয়ংকর হয়ে উঠছে।

‘এখনই যদি তাদের লাগাম টেনে ধরা না হয়, তবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।’

রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কথা স্বীকার করেছেন।

র‌্যাব-১৫-এর উইং কমান্ডার ‌আজিম আহমদ বলেন, ‘কক্সবাজারে মাদকের বড় বড় চালান নিয়ে যারা আটক হচ্ছে, তার মধ্যে ৭০ ভাগই রোহিঙ্গা। কক্সবাজারকে মাদকমুক্ত করার ‌‌অন্যতম বাধা রোহিঙ্গারা।’

রোহিঙ্গাদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ চলছে জানিয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গারা অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে জেলা পুলিশের পাশপাশি ক্যাম্পে এপিবিএনের তিনটি ব্যাটালিয়ন কাজ করছে। পাশাপাশি র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ সেখানে কাজ করছে।’

এ বিভাগের আরো খবর