সহিংসতার অভিযোগে আটক হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সবাই নিষ্পাপ নন বলে স্বীকার করে নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এই দাবি করেন।
গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রতিক্রিয়ায় হেফাজতের নেতা-কর্মীরা দেশের নানাপ্রান্তে ব্যাপক সহিংসা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও নারায়ণগঞ্জের তাণ্ডব ছিল নজিরবিহীন। সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তিতে হামলা, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ও স্মৃতিচিহ্নে আগুনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয় মানুষ।
- আরও পড়ুন: বেছে বেছে মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনায় হামলা
- আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়াজুড়ে ত্রাসের পর সংঘর্ষে নিহত ৩
পরে এপ্রিলে হেফাজত নেতাদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়। গ্রেপ্তার হয় ৫০ জনেরও বেশি। এদের মধ্যে সিংহভাগ ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের ঘটনায় মামলারও আসামি।
২৮ মার্চ হেফাজত কর্মীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতিচিহ্নে হামলা করে, বাদ যায়নি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালও
শুরু থেকেই হেফাজত তাদের নেতাদেরকে নির্দোষ দাবি করে আসছিল। তবে জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর আমির হওয়া মুহিব্বুল্লাহ এই প্রথম বললেন অন্য কথা।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি না যে, আলেম ওলামারা সবাই নিষ্পাপ বা সকল দোষ ও অভিযোগমুক্ত। হতে পারে তাদের মধ্যেও কেউ অপরাধী কিংবা দোষী থাকবেন। কিন্তু আমাদের দাবি হলো, অভিযুক্তদেরকে দেশের সাধারণ নিয়মে বিচারের আওতায় আনলে জনগণ স্বস্তি পাবে।’
গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর থেকে হেফাজতের নতুন আমির জানতে পেরেছেন, আলেম ওলামাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। অনেকে বিশেষ গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে অনিরাপত্তায় ভুগছেন। অজ্ঞাতপরিচয় কিছু লোকে আলেম সমাজকে অপ্রত্যাশিত নিয়মে গভীর রাতে ঘর থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
- আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবার সহিংস হেফাজত, নীরব পুলিশ
- আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবার সহিংসতা, গুলিতে নিহত ৫
মুহিব্বুলাহ বিবৃতিতে বলেন, ‘সম্প্রতি কিছু আলেমদেরকে বিভিন্নভাবে গভীর রাতে তাদের নিজ বাড়ি থেকে বা অন্য কোনো স্থান থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে এরূপ ঘটনা অনুচিত বলে আমরা মনে করি।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়কেও হেফাজত কর্মীরা ২৮ মার্চের হরতালে ছিল বেপরোয়া
‘কারণ, দেশে রয়েছে প্রশাসন, আদালত, কোর্টকাচারী ও বিচার বিভাগ। কারও বিরূদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা যাচাই বাছাই এবং সুষ্ঠ তদন্ত করে তার যথাযোগ্য বিচার করার সুযোগ রয়েছে। তাহলে এভাবে ভিন্ন কায়দায় জনগণের মনে হতাশা ও আতঙ্ক সৃষ্টিকারী পদ্ধতির দিকে যেতে হবে কেন?
- আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে সহিংসতায় হেফাজতের অতি উৎসাহীরা: নায়েবে আমির
- আরও পড়ুন: অ্যাম্বুলেন্সেও হেফাজতের হামলা, সাংবাদিক পেলেই মারমুখী
‘একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে এ সকল অগণতান্ত্রিক নিয়মকে শক্ত হাতে দমন করা না গেলে দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। জনমনে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হতে পারে। কোনো আত্মগোপনকারী শত্রুগোষ্ঠী ইসলাম ও দেশের বিরুদ্ধে সুযোগ নিতে পারে।
‘তাই আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ রাখছি যেন জনমনে ভয়-ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টিকারী কায়দায় কোনো আলেম বা সুনাগরিককে ধরপাকড় করা না হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে, সে যেই হোক না কেন, আইন অনুযায়ী পুলিশ হেফাজতে নিয়ে বিচারাধীন করা হোক।’