বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কাঁচকি মাছের চানাচুর, বার

  •    
  • ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৬:৫৬

গবেষক মোবারক হোসেন বলেন, প্রতি কেজি মাছের তৈরি বার বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা ৬০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারবেন। মাছের চানাচুরের দাম নির্ধারণ করা হবে মাছের পরিমাণের ওপর। চানাচুরে মাছের পরিমাণ যত বেশি হবে তার দামও তত বেশি হবে।

কাঁচকি মাছের পুষ্টি ছড়িয়ে দিতে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চানাচুর, কুড়কুড়ে বাদাম ও তিলের বার তৈরি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের একদল গবেষক।

হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাঁচকি মাছ গুরুত্বপূর্ণ। তবে পুষ্টিসমৃদ্ধ এ মাছ খেতে শিশুসহ অনেকেই অনাগ্রহী। তাই মাছটির পুষ্টিগুণ বিবেচনায় মুখরোচক খাবার হিসেবে তৈরি করা হয়েছে।

সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রকল্পের আওতায় গবেষণাটি পরিচালনা করেন গবেষকরা।

গবেষক দলের প্রধান ছিলেন- ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের মুহম্মদ নুরুল হায়দার ও সহযোগী গবেষক ছিলেন একই বিভাগের মোবারক হোসেন।

সোমবার দুপুরে নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন গবেষক দলের প্রধান।

নুরুল হায়দার বলেন, কাঁচকি মাছ পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ দেশি প্রজাতির কাঁটাযুক্ত, খুব ছোট ও প্রায় স্বচ্ছ একটি মাছ। মাছটি দেশের নদ-নদী, খাল-বিলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। আকারে ছোট ও কাঁটাযুক্ত হওয়ায় অনেকেই এটি খেতে পছন্দ করেন না। বিশেষ করে ছোট বাচ্চারা খেতে চায় না। বিকল্প উপায়ে তাদের সেই পুষ্টি গ্রহণের উপায় গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শিশুসহ সব বয়সী মানুষের চানাচুর এবং বার জাতীয় খাবারটি খুব পছন্দের। তাই ক্যাটাগরি-১-এর পণ্যগুলো মূলত চানাচুরজাতীয়। অন্যদিকে ক্যাটাগরি-২-এর পণ্যগুলো মূলত কুড়কুড়ে বাদাম ও তিলের বারজাতীয় করে তৈরি করা হয়েছে। এতে করে তারা এসব মুখরোচক খাবারের সঙ্গে মাছের পুষ্টিও নিতে পারবেন।

মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশ নিউট্রিশন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখা গেছে- চানাচুরজাতীয় পণ্যগুলোতে গড়ে ৪-৫ শতাংশ ময়েশ্চার, ২৬-৩০ শতাংশ লিপিড, ১৮-২২ শতাংশ প্রোটিন, ৫ শতাংশ মিনারেল, ২ শতাংশ ফাইবার এবং ৩৯-৪২ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। যেখানে সাধারণ চানাচুরে প্রোটিন থাকে ১২-১৩ শতাংশ।

বারজাতীয় পণ্যগুলোতে ২০-২২ শতাংশ ময়েশ্চার, ১৩-১৯ শতাংশ লিপিড, ১৩-১৫ শতাংশ প্রোটিন, ১২-১৫ শতাংশ মিনারেল, ২-৩ শতাংশ ফাইবার এবং ৩২-৩৪ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়।

গবেষক মোবারক হোসেন বলেন, ছোট মাছের কাঁটা খেতে হবে চিবিয়ে। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যাবে। অন্যদিকে গর্ভবতী মা ও দুগ্ধদানকারী মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিয়ে থাকে এ কাঁচকি মাছ।

তিনি বলেন, এ জন্য দুটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৬টি পণ্য উৎপাদন করেছি। ক্যাটাগরি-১-এর পণ্যগুলো মূলত চানাচুরজাতীয়, অন্যদিকে ক্যাটাগরি-২-এর পণ্যগুলো মূলত কুড়কুড়ে বাদাম ও তিলের বার (যা স্থানীয়ভাবে তিল বাদাম তক্তি হিসেবে পরিচিত) তৈরি করা হয়েছে। এতে এসব মুখরোচক খাবারের সঙ্গে মাছের পুষ্টিও গ্রহণ করতে পারবে।

খাদ্যপণ্য তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, তিল এবং বাদামের পণ্যগুলো তৈরি করা হয় বাদাম, মাছ, তিল এবং গুড়ের সমন্বয়ে। প্রথমে উপাদানগুলো হাইজেনিক পদ্ধতিতে শুষ্ক করে নেয়া হয়। ভেজে নেয়া হয় মাছ, তিল এবং বাদাম। মাছগুলো ভাজা হয় মিডিয়াম তাপমাত্রায়। পরে আখের গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হয় বার।

অন্যদিকে বাজারের তৈরি চানাচুরের সঙ্গে প্রক্রিয়াজাত মাছ মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে চানাচুর। মাছ দিয়ে তৈরি এসব পণ্যে মাছের কোনো গন্ধ থাকে না। জিপার ব্যাগে পণ্যগুলো দুই মাসের বেশি সময় পর্যন্ত ভালো থাকে।

পণ্যগুলোর বাজারমূল্য সম্পর্কে মোবারক হোসেন বলেন, প্রতি কেজি মাছের তৈরি বার বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা ৬০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারবেন। মাছের চানাচুরের দাম নির্ধারণ করা হবে মাছের পরিমাণের ওপর। চানাচুরে মাছের পরিমাণ যত বেশি হবে তার দামও তত বেশি হবে।

বাজারে প্রাণ-এর ২৫ গ্রাম ওজনের যে পিনাট বার পাওয়া যায় তার দাম ১০ টাকা। তবে মাছের তৈরি বিশেষ এ বারের দাম পড়তে পারে ১৫-২০ টাকা।

ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ফাতেমা হক শিখা বলেন, কাঁচকি মাছ দিয়ে তৈরি খাদ্যপণ্যগুলো পুষ্টিসমৃদ্ধ। এ ধরনের পণ্য বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা গেলে দেশীয় পুষ্টিকর ছোট মাছগুলো সব শ্রেণির ভোক্তাদের মাঝে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। যা বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি মুখরোচক খাদ্য হিসেবেও জনপ্রিয়তা পাবে।

এ বিভাগের আরো খবর