আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে কলহ-কোন্দল থাকলে তা নিরসনে দলীয় নেতাদের আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করার আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ঢাকার সরকারি বাসভবন থেকে শুক্রবার আওয়ামী লীগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর শাখার ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
মতভেদ ভুলে দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘দলের অভ্যন্তরে কলহ-কোন্দল থাকলে নিজেরা বসে সমাধান করুন। কিন্তু নিজের ঘরের কথা, চা দোকানে বসে বসে যদি দলের গীবত করেন, অপপ্রচার করেন, এক নেতা আরেক নেতার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন এতে দলের সুনাম নষ্ট হবে।’
আওয়ামী লীগের প্রতিটি পর্যায়ের কাউন্সিলে ত্যাগী ও দুঃসময়ের কর্মীদের নেতৃত্বে আনতে নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, দল বিপদে পড়লে ‘বসন্তের কোকিলরা’ পাশে থাকবে না, থাকবে দুঃসময়ের কর্মীরা। তাই তাদেরকেই সামনে দেখতে চান কাদের।
অপকর্ম, লুটপাটের সঙ্গে জড়িত জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক করে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে সেই জনপ্রতিনিধিরা আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের মনোনয়ন পাবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকে আমি অনুরোধ করব, দল প্রধানের নির্দেশনা মেনে চলতে। মনে রাখতে হবে নিজের অবস্থান ভারী করার জন্য নিজের লোক দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করা যাবে না। দলকে শক্তিশালী করতে হলে ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের এগিয়ে আনতে হবে। দুঃসময়ে তারাই দলের পাশে থাকে।’
সুসময়ে বন্ধুরা প্রকৃত বন্ধু নয় জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দুঃসময়ের কর্মীরাই দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে। আবার যখন দুঃসময় আসবে এই ত্যাগী কর্মীরাই দলের সঙ্গে থাকবে। এখন যারা বসন্তের কোকিল এরা তখন দলে থাকবে না। হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
দলকে সুসংগঠিত করতে হবে জানিয়ে কাদের বলেন, ‘চিহ্নিত অপরাধী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, অনুপ্রবেশকারী, বিতর্কিত ব্যক্তিদের দলে টানা যাবে না।’
নিজের পছন্দের লোকদের নেতা বানানো যাবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘জনগণের পছন্দের ব্যক্তিকে নেতা বানাতে হবে। তা না হলে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। যে নেতা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, আমাদের কিছু নেতার কাছে গ্রহণযোগ্য, তারা কোনোদিনও দলের পারপাস সার্ভ করতে পারবে না।’
জনপ্রতিনিধিদেরও সতর্ক করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই নেতা। তিনি বলেন, ‘যেসব জনপ্রতিনিধিরা অপকর্ম করছেন, লুটপাট করছেন, বেপরোয়া আচরণ করছেন, আগামী নির্বাচনে সেই জনপ্রতিনিধিরা আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের নমিনেশন পাবেন না।’
এসময় বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করেন এই রাজনীতিক। বলেন, শেখ হাসিনার লক্ষ্য এদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন আর বিএনপির লক্ষ্য নিজেদের পকেটের উন্নয়ন।
বিএনপির হাতে দেশের গণতন্ত্র নিরাপদ নয় মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা দেশের জন্য রাজনীতি করে না, তারা রাজনীতি করে লুটপাটের জন্য।’
যারা নিজেদের নেত্রীর জন্য একটা কার্যকরী মিছিল করতে পারে না, তাদের মুখে আন্দোলনের কথা মানায় না বলেও মন্তব্য করতে ছাড়েননি কাদের। তিনি বলেন, ‘বিএনপির সিরিজ বৈঠক হচ্ছে সিরিজ ষড়যন্ত্রের অংশ।’
জনগণ বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলেই তারা নির্বাচনকে ভয় পায় বলে মনে করেন কাদের। বলেন, ‘তাই নির্বাচন নিয়ে বিএনপি অপপ্রচার চালাচ্ছে।’