মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দেশ স্বাধীন করার উদ্দেশ্য নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ উঠার পর গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের শাস্তি চেয়ে চলমান বিক্ষোভের মধ্যে সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ।
জাহাঙ্গীরের শাস্তি চেয়ে তার বিরোধীরা আর মেয়রের পক্ষের কর্মীরা একই এলাকায় সমাবেশ ডাকায় নতুন করে তৈরি হয়েছে নিরাপত্তা শঙ্কা।
নগরীর বোর্ডবাজারে বিরোধী পক্ষ সমাবেশ ডেকেছে বেলা তিনটায়, আর জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা ডেকেছে বেলা সাড়ে তিনটায়। এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও রাস্তায় নামানো হয়েছে জলকামান।
বোর্ড বাজার বড় মসজিদের সামনে শুক্রবার বিকাল তিনটায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে সিটি মেয়র জাহাঙ্গীরের শাস্তি ও বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ডাকা হয়েছে। তাতে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
বিকাল সাড়ে তিনটায় বোর্ড বাজারের ইউটিসি চত্বরে আলোচনা সভা ও আনন্দ মিছিলের আয়োজন করেছে মহানগর আওয়ামী লীগের আরেকটি অংশ। তাদের উপলক্ষ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশের সম্মাননা অর্জন। এ সমাবেশে যোগ দেয়ার কথা মেয়র জাহাঙ্গীর ও তার অনুসারী নেতাকর্মীদের।
বেলা তিনটার পর থেকে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরাই সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে। ঝাড়ু হাতে মিছিল নিয়ে আসতে দেখা গেছে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মীদের। তবে এখনও নেতাদের কেউ সেখানে আসেননি।
টানটান উত্তেজনার মধ্যে দুপুরের আগে থেকেই ঘটনাস্থলে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। আশপাশের ভবনের ছাদেও অবস্থান নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার লুৎফুল কবির, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বরকত উল্লাহ, উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ, উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) জাকির হোসেন, উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) হাসিবুল আলমসহ বাহিনীটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে আছেন পরিস্থিতি সামলাতে।
সব মিলিয়ে পুলিশের ৪ শতাধিক সশস্ত্র সদস্য অবস্থান নিয়ে আছেন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হাসিবুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সমাবেশস্থলের আশপাশে জিএমপি কমিশনার স্যারের নেতৃত্বে ৪০০ পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। জলকামানসহ সাদাপোশাকে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। মহাসড়কে যেন যানচলাচল বন্ধ না হয় সেজন্য কাজ করছে পুলিশ।’
গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেখানে একটি ঘরোয়া আয়োজনে মেয়র জাহাঙ্গীরকে কথা বলতে দেখা যায়।
চার মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, হেফাজতের প্রয়াত নেতা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে তার সখ্য ও রাষ্ট্রীয় দুটি সংস্থা নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করছেন মেয়র জাহাঙ্গীর।
ভিডিওটির শুরুতে মেয়র জাহাঙ্গীরকে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে শোনা যায়। তার দাবি, বঙ্গবন্ধু তার স্বার্থে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তান ভাঙার পেছনে রাষ্ট্রপতি হওয়ার বাসনা কাজ করেছে বলেও মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা।
তার ধারণা, বাংলাদেশ স্বাধীন না হয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে থাকলে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত জাতি থাকত এখানকার মানুষ।
এই ঘটনায় বুধবার থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। মেয়রকে দল থেকে বহিষ্কার, তার পদ কেড়ে নেয়া ও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার রেল লাইনও অবরোধ করে তারা।
এই ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার সময় মেয়র জাহাঙ্গীর ছিলেন ভারতে। বুধবার গভীর রাতে দেখে ফিরে তিনি একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তার দাবি, এই ভিডিওটি বানোয়াট। ভিডিওটি যারা শেয়ার করেছেন, তাদেরকে সেটি ডিলিট করে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, না হলে আইনি ব্যবস্থা নেবেন।