বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাজীপুরে আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ডাক

  •    
  • ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১২:০০

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তারা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মেয়রের কটূক্তির প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ এ অন্দোলনে যোগ দিচ্ছে।’

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওর জেরে গত দুই দিন ধরে অশান্ত গাজীপুর। সেই ভিডিওতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধিকার আন্দোলনসহ নানা বিষয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এর প্রতিবাদে গত দুই দিন ধরে মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ, রেলে অগ্নিসংযোগ ও মেয়রের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার দুপুরের পর নগরীর বোর্ড বাজার এলাকায় মহানগর আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ পাল্টাপাল্টি মিছিল-সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এই সমাবেশকে ঘিরে তৃতীয় দিনের মতো উত্তপ্ত গাজীপুর সিটি।

বোর্ড বাজার বড় মসজিদের সামনে শুক্রবার বিকাল তিনটায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে সিটি মেয়র জাহাঙ্গীরের শাস্তি ও বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ডাকা হয়েছে। তাতে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

একই দিন বিকেল সাড়ে তিনটায় বোর্ড বাজারের ইউটিসি চত্বরে আলোচনা সভা ও আনন্দ মিছিলের আয়োজন করেছে মহানগর আওয়ামী লীগের আরেকটি অংশ। তাদের উপলক্ষ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশের সম্মাননা অর্জন। এ সমাবেশে যোগ দেয়ার কথা মেয়র জাহাঙ্গীর ও তার অনুসারী নেতাকর্মীদের।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি নিউজবাংলাকে জানান, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মেয়র বিতর্কিত মন্তব্য করায় গত দুই দিনের মতো শুক্রবারও বিক্ষোভ মিছিল চলবে।

গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম

তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীরা মেয়রের এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য মেনে নিতে পারছে না। অপরদিকে আনন্দ মিছিলের আড়ালে মেয়রের অনুসারীরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মাঠে নামছে বলে জেনেছি। বিক্ষোভে যোগ দেয়ার বিষয়ে আমি সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। তবে আনন্দ মিছিলে যোগ দেব না।’

বিক্ষোভ মিছিলের অন্যতম সমন্বয়ক ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করায় মেয়র জাহাঙ্গীরের শাস্তি ও বহিস্কার দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল হবে বোর্ডবাজারে। সেখানে মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেবে।

‘কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ আনন্দ মিছিল করার কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। আমাদের বিক্ষোভ পূর্বনির্ধারিত এবং চলমান। আনন্দ মিছিলের নামে মেয়রের লোকজন পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাচ্ছে।’

মেয়রের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মনিরুজ্জামান মনির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ আনন্দ মিছিল করবে। সহযোগী সংগঠন হিসেবে আমরা সে মিছিলে অংশ নেব। মিছিলে মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমও উপস্থিত থাকবেন।’

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তারা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মেয়রের কটূক্তির প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ এ অন্দোলনে যোগ দিচ্ছে।’

বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার হাসিবুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ মিছিলের অনুমতি চেয়েছে। তাদেরকে শর্তসাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে টঙ্গী ও বোর্ডবাজারে পুলিশের প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করি শান্তিপূর্ণভাবে উভয়পক্ষ তাদের কর্মসূচি শেষ করবে।’

যা আছে ভিডিওতে

একটি ঘরোয়া আয়োজনের ওই ভিডিও গত মঙ্গলবার সকালে ভাইরাল হয় ফেসবুকে। ভিডিওটির প্রথম দিকে মেয়র জাহাঙ্গীরকে নীল রঙের জামা পরে চেয়ারে বসে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। বাকি অংশে শুধু অডিও বক্তব্য শোনা যায়। কিছু কিছু অংশ ছিল অস্পষ্ট।

ভিডিওর শুরুতে মেয়র জাহাঙ্গীরকে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে শোনা যায়। তার দাবি, বঙ্গবন্ধু তার স্বার্থে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তান ভাঙার পেছনে রাষ্ট্রপতি হওয়ার বাসনা কাজ করেছে বলেও মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা।

তার ধারণা, বাংলাদেশ স্বাধীন না হয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে থাকলে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত জাতি থাকত এখানকার মানুষ।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের প্রসঙ্গে টেনে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি রাসেল সাহেবকে এইখানে নিয়া ফালাইছি। আমি চাইছি রাসেল সাহেব ভুল করুক। আমি ইচ্ছা করেই চাইছি হেও মিছিলটাতে এটেন্ড করুক।’

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজমত উল্লাহ আমারে জীবনে মারার লাইগা লোক কন্টাক্ট করছে, সব করছে। এখন সে আমার কর্মী হইছে। ...আমারে জিগায় কী করছ? আমারে কয়দিন জিগাইছে কী করো, কেমনে সম্ভব? হেও সব জানে না! আমি তো খেলা জিতছি।’

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি মন্ত্রীরে নিয়া মাথা ঘামাই না। জাহিদ আহসান রাসেল আছে না? তারে নিয়া আমি এক মিনিটও চিন্তা করি না। খালি জাস্ট শুইনা রাখো, বিশ্বাস করার দরকার নাই। আমি চিন্তা করলাম সে তো মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠই। দরকারটা কী আমার এখানে, পরিবর্তনে কী হইব? এখানে পরিবর্তনের লাভ টা কার?’

গত তিন বছরেও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে প্যানেল মেয়র নির্বাচন করা হয়নি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনাও চলছে। এ বিষয়ে ভিডিওটিতে মেয়রকে বলতে শোনা যায়, ‘প্যানেল মেয়র দেই না। দিলে কী হইব? আমারে কি কাউন্সিলররা মেয়র বানাইছে? আমার কি মেয়রগিরি যাইবগা? যেমন আমি এখানে প্যানেল মেয়র করি নাই। রাসেল এমপি অনেকরে মেয়র বানাইয়া দিতেছে, অনেকরে কাউন্সিলর বানাইয়া দিতেছে। প্রধানমন্ত্রী আরেকজনরে ভারপ্রাপ্ত দিব?’

বাংলাদেশের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাব্যক্তি তার নিকটাত্মীয় উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বাতাসটা আমার কাছে বইলা যায়।’

বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এমনকি হেফাজতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলার কথাও বলেন মেয়র জাহাঙ্গীর।

মেয়রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে গাজীপুরের টঙ্গীতে সড়ক অবরোধের পর এবার রেল লাইনে আগুন ধরিয়ে দেয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা

তিনি বলেন, ‘আমি জামায়াতের সাথে চলি না? বিএনপির সাথে চলি না? অন্য পার্টি আছে না সবার সাথেই তো কথা বলি। এই যে আমার সাথে ঘণ্টা তিনেক আগেও বাবুনগরী (হেফাজতের প্রয়াত আমির) প্রায় ৪৭ মিনিট কথা বলছে। সে আসতে চায়। আমি কথা বলছি না?

‘ধীরাশ্রম, ঝাঝর, চান্দরা আছে ৮/১০ বিঘা, দিঘিরচালা আছে ১৬ বিঘা, তেলিপাড়াও আছে। আমার এখানে সাড়ে তিন শ বিঘা জমি আছে। এই নির্বাচনের সময়েও দশ হাজার কোটি টাকা আনছি।’

চার মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, হেফাজতের প্রয়াত নেতা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে সখ্য ও রাষ্ট্রীয় দুটি সংস্থা নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করছেন মেয়র জাহাঙ্গীর।

মেয়র যা বলেছেন

ভিডিওটি বানোয়াট বলে দাবি করেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। সেটি ফেসবুক থেকে ডিলিট করে দেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। অন্যথায় যারা এগুলো ছড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘যারা এই অন্যায় কাজ করছে’, তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনের সহযোগিতা নিয়ে, যারা বিজ্ঞ আইনজীবী… তাদের পরামর্শে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ফেসবুকে মিথ্যা কথা ও গুজব ছড়াচ্ছেন, তাদের বলব, দয়া করে এগুলো ডিলিট করে দিন। মিথ্যা অপবাদ না দিয়ে আসুন সকলে মিলে কাজ করি।’

গত কয়েক দিন ধরে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার সময় মেয়র ছিলেন ভারতে। গত রাত ১২টায় তিনি দেশে ফিরে নিজ বাসায় ফিরেছেন।

তবে দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে তিন মিনিটের একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। এর ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘সত্যটা জানুন’।

মেয়র জাহাঙ্গীরের ভিডিওর প্রতিবাদে টঙ্গীতে তার কুশপুতুল পোড়ানো হয়

মেয়র বলেন, ‘বিভিন্ন ফেসবুক ও ইউটিউবের প্রচারমাধ্যমে আমার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এবং আমার নাম সেখানে জড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট কথা তারা ছেড়েছে।

‘আমার এবং আমাদের বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাননীয় মন্ত্রী, মাননীয় সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের সভাপতি (গাজীপুর আওয়ামী লীগের) এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নাম ধারণ করে আমাকে কীভাবে ছোট করা যায় বা প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়, সেই কৌশল হিসেবে আমার প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন কথা এডিট করে, নকল করে সেসব প্রচারমাধ্যম ইউটিউব এবং ফেসবুকে ছেড়েছে।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ‘অস্তিত্ব এবং ভালোবাসা’- এমন কথা বলে মেয়র বলেন, ‘জাতির পিতা শহীদ হওয়ার পর আমার জন্ম। সে জন্য আমি আমার জাতির পিতাকে অনুসরণ করি। আমি ছাত্রজীবন থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে শুরু করে তারপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (গাজীপুর শাখা) তারপর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করার জন্য দোয়া দিয়েছেন।’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে এই শহরকে উন্নত করতে সহযোগিতা করেছেন উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এই উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য একটি মহল বিরোধীদলীয় উসকানির পাঁয়তারাতে পড়ে আমাদের শহর এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য আমার অস্তিত্ব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যাচার করছে।’

এ বিভাগের আরো খবর